Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
NITI Aayog

মোদীর আমলে বেড়েছে ধনী-দরিদ্রের অসাম্য, নীতি আয়োগের রিপোর্টে উদ্বেগ নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়েও

নীতি আয়োগ জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জ যে সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করেছে, তার সূচকে দেখা যাচ্ছে, অসাম্যের মাপকাঠিতে ভারতের মান খারাপ হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভারতের স্কোর ১০০-র মধ্যে মাত্র ৬৫।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫১
Share: Save:

এত দিন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ভারতের ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্যের দিকে আঙুল তুলছিল। লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র ছিল, মোদী জমানায় ধনী-গরিবের অসাম্য। এ বার মোদী সরকারের নীতি আয়োগই জানাল, দেশে আর্থিক অসাম্য উদ্বেগের কারণ। শুধু আয়ের মাপকাঠিতে ধনী-গরিবের অসাম্য নয়, নারী-পুরুষের বৈষম্যও এর মধ্যে রয়েছে।

আজ নীতি আয়োগ জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জ যে সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করেছে, তার সূচকে দেখা যাচ্ছে, অসাম্যের মাপকাঠিতে ভারতের মান খারাপ হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভারতের স্কোর ১০০-র মধ্যে মাত্র ৬৫। ২০১৮-তে ভারতের স্কোর ছিল ৭১। ২০২০-২১-এ স্কোর কমে ৬৭ হয়েছিল। এ বার তা ৬৫ হয়েছে।

রাজ্যগুলির মধ্যে সুস্থায়ী উন্নয়নে লক্ষ্যের সূচকে কেরল, উত্তরাখণ্ড সব থেকে ভাল ফল করেছে। বিহারের ফল সব থেকে খারাপ। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ১৬-তম স্থানে। দারিদ্র দূরীকরণ, ক্ষুধার নিবৃত্তি, শিক্ষার মান, আর্থিক বৃদ্ধির মতো সূচকে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় সারির রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থান শেষের সারির রাজ্যগুলির মধ্যে। পরিকাঠামো, দূষণমুক্ত জ্বালানির মতো মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০৩০-এর মধ্যে বিভিন্ন সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য (‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’) স্থির করেছে। এ ক্ষেত্রে ভারত কতটা অগ্রগতি করছে, নীতি আয়োগ তার জন্য ১৬টি লক্ষ্য ঠিক করে গোটা দেশে ও রাজ্যগুলিতে কেমন উন্নতি হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করে। আজ ২০২৩-এর রিপোর্ট প্রকাশ করে নীতি আয়োগের সিইও বি আর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘দারিদ্র দূরীকরণ, ভদ্রস্থ কাজ ও আর্থিক বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষেত্রে ভারত খুবই উন্নতি করেছে। বিনা মূল্যে রেশন, আবাস যোজনার মতো সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।” একই সঙ্গে তিনি মেনে নিয়েছেন, অসাম্য চিন্তার কারণ।

সুব্রহ্মণ্যম জানান, শুধু আয়ের অসাম্যের কথা বলা হচ্ছে, তা নয়। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা, চাকরিরত কর্মীদের মধ্যে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার, দলিত-আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অপরাধের মতো মাপকাঠিতেও অসাম্য বিচার হয়। আয়ের অসাম্য নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘পারিবারিক খরচের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ধনী-গরিবের মধ্যে খরচের ক্ষেত্রে ফারাক আগের থেকে কমেছে। দারিদ্রের হার ৫ শতাংশের কম।’’ বিরোধীরা বলছেন, মোদী জমানায় দলিত-আদিবাসীদের উপরে অত্যাচার বেড়েছে। নোট বন্দি, কোভিডের পরে চাকরি খোয়ানোর পরে মহিলাদের কাজে অংশগ্রহণ কমেছে। মোদী সরকার মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ বিল পাশ করালেও তা কার্যকর করেনি।

নীতি আয়োগের সিইও বলেছেন, লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভারতের ছবি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে ভারতের স্কোর ১০০-র মধ্যে ৫০-এর কম। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা, মহিলাদের হাতে কম সম্পত্তি, কাজের জগতে মহিলাদের কম হারের মতো সমস্যা রয়েছে। শিক্ষার মানও চিন্তার কারণ বলে রিপোর্ট জানিয়েছে।

আর্থিক অসাম্য নিয়ে অক্সফ্যাম-এর রিপোর্টে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০২১-এর মধ্যে দেশে তৈরি ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদ ধনীতম এক শতাংশ মানুষের কুক্ষিগত হয়েছে। দরিদ্রতম ৫০% মানুষের ভাগে জুটেছে সম্পদের মাত্র ৩%। মার্চে প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্স-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব’-এর রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটিশ জমানার থেকেও এখন ভারতে আর্থিক অসাম্য বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NITI Aayog Economy India Inequality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE