Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Crime

কৈশোরে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে: রিপোর্ট

রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে ২৩টি খুন এবং ৬২টি খুনের চেষ্টা, ১০৫টি অপহরণ, ১৪টি ধর্ষণ, ৫৩টি চুরির ঘটনায় অভিযুক্তেরা নাবালক।

crime

—প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২১
Share: Save:

গাছের ডাল দিয়ে বাবার ঘাড়ে সজোরে আঘাত করেছিল কিশোর। তাতেই মৃত্যু হয় বাবার। সম্প্রতি বর্ধমানের ভাতারের ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মাকে বারবার বাবার হাতে মার খেতে দেখে প্রতিশোধস্পৃহা জন্মেছিল কিশোরের মনে। যার পরিণামে ওই ঘটনা।

ভাতারের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। ২০২২-র ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, এ রাজ্যে ছোটদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ২০২১-র তুলনায় বেড়েছে। ২০২২ সালে এ ধরনের ঘটনা (৫৭৭) ২০২১-র তুলনায় (৫৫১) কিছুটা বেশি।

রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে ২৩টি খুন এবং ৬২টি খুনের চেষ্টা, ১০৫টি অপহরণ, ১৪টি ধর্ষণ, ৫৩টি চুরির ঘটনায় অভিযুক্তেরা নাবালক। ডাকাতির উদ্দেশ্যে জমায়েত হওয়ার ২১টি ঘটনায় অভিযুক্তেরা কিশোর।

রিপোর্ট আরও বলছে, অপরাধের শিকারও হচ্ছে বহু শিশু। সেই অপরাধের শিকার হওয়ার ঘটনা গত দু’বছরে রাজ্যে কমলেও, বেড়েছে কলকাতায়। ২০২২-এ কলকাতায় এ ধরনের ৬০২টি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। ২০২১-এ সংখ্যাটি ছিল ৪৯৭।

এই তথ্য ‘উদ্বেগজনক’ হলেও এতে চমকে ওঠার কিছু নেই বলে মনে করেন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা। চিকিৎসক সত্যব্রত কর বলছেন, ‘‘ভোগবাদী ব্যবস্থার কুফল বন্যার মতো আছড়ে পড়ছে সমাজ জীবনে। পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে শিশু-কিশোরদের মনে। সঙ্গে রয়েছে মোবাইল আসক্তি। কিশোর-কিশোরীরা এখন রাত ২টো-৩টে পর্যন্ত মোবাইলে ইন্টারনেট ঘাঁটে। পরদিন ঘুম থেকে ওঠে অনেক দেরিতে। একাকিত্বে ভোগে অনেক সময়। অল্পবয়সেই অবসাদ ঘিরে ধরে। অনেকের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা তৈরি হয়।’’ এর থেকে পরিত্রাণের উপায়?

তাঁর কথায়, ‘‘এর চটজলদি কোনও সমাধান নেই। ছেলেমেয়েদের বাঁচানোর উপায় বার করতে হবে অভিভাবকদেরই।’’ এক শিশু মনস্তত্ত্ববিদ বলেন, ‘‘পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে হবে। বাবা-মাকে অনুসরণ করার মতো মডেল হয়ে উঠতে হবে। এটা প্রাথমিক শর্ত। দ্বিতীয়ত, মোবাইলের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শেখাতে ও শিখতে হবে অভিভাবকদের। বাকিটা স্কুল, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধবী এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপরে নির্ভরশীল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় মনে করেন, ‘‘শিশুদের অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়া হোক বা শিশুদের উপরে অপরাধ—এই সংক্রান্ত সব ঘটনার রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে করা হয় বলেই রাজ্যের বাস্তব চিত্রটি আমরা দেখতে পাই। শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা না দিয়ে তা নথিভুক্ত করা হয়। অনেক রাজ্যে তা হয় না।’’

কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য স্কুল স্তরে অভিভাবকদের কাউন্সেলিং নিয়ে কথাবার্তা চলছে বলে জানান সুদেষ্ণা। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি কমিশনের উপদেষ্টা, মনোবিদ-সহ কয়েক জন একটি স্কুলে গিয়ে তিনশোর বেশি অভিভাবকের সঙ্গে শিশুদের বড় করে তোলার আদর্শ পন্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder West Bengal India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy