The iconic Tito’s Goa announced the sale of their entire business in Goa dgtl
Goa
বিপুল রাজনৈতিক চাপ, গোয়ায় বিক্রি হচ্ছে টিটো’জ, হারিয়ে যাবে বহু নস্ট্যালজিয়া?
দার্জিলিংয়ের যেমন কেভেন্টার্স, গ্লেনারিজ— ফেলু মিত্তির থেকে শুরু করে অভিনেতা রণবীর পর্যন্ত যার ছাদে ঘুরে গিয়েছেন, গোয়ার টিটোজও তেমনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ১৬:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
গোয়ার বাগা বিচের ধার বরাবর লম্বা রাস্তাটার নামই হয়ে গিয়েছিল টিটো‘জ লেন। কারণ ওই রাস্তা ধরে টিটো‘জ-এ যাওয়া যায়। টিটো’জ গোয়ার বহু পুরনো পাব। আমাদের দার্জিলিংয়ের যেমন কেভেন্টার্স, গ্লেনারিজ—গল্পের গোয়েন্দা ফেলু মিত্তির থেকে শুরু করে বাস্তবের অভিনেতা রণবীর কপূর পর্যন্ত যার ছাদে ঘুরে গিয়েছেন, গোয়ার টিটোজও তেমনই। বহু স্মৃতি, ঐতিহ্য নস্টালজিয়া ভিড় করে আছে এখানে। সেই টিটো’জ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
০২২০
খবরটা সামনে আসে সপ্তাহখানেক আগে। টিটো’জ এর দুই অংশীদার ডেভিড ডি’সুজা এবং রিকার্ডো ডি’সুজা জানিয়েছেন, টিটো’জ এর মালিকানা স্বত্ব বেশির ভাগটাই অন্য একটি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা। গোয়ায় টিটো’জ এর ক্লাব, পাব, ক্যাফে-র ব্যবসার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা ওই নতুন মালিকই ঠিক করবেন।
০৩২০
২৮ জুন একটি ফেসবুক পোস্টে এই ঘোষণা করেছিলেন রিকার্ডো। খবরটি দেখামাত্র দেশ জুড়ে পার্টিপ্রেমীরা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ গোয়া দেশের নিশিযাপনের সেরা ঠিকানা। আর গোয়ায় রাত্রি যাপনের আরেক নাম টিটো’জ।
০৪২০
গোয়ার আমেজের একটা খণ্ডচিত্র মেলে এই টিটো’জ-এ এলে। আরব সাগরের হাওয়া, পা ডোবানো বালি, কাগজের লন্ঠন, পর্তুগিজ স্থাপত্যের পাবের সঙ্গে সারা রাত পার্টি করার ঠিকানাও আছে টিটো’জ-এ। চাইলে হাতে ককটেল নিয়ে স্থানীয় কিংবা বিদেশি সঙ্গীতে মাথা দোলাতে পারেন কিংবা টিটো’জ-এর কোর্টইয়ার্ডে সপরিবারে বসাতে পারেন রাতের খাওয়া দাওয়ার আসর। আকছার তারকাদেরও দেখা মেলে এখানে এলে। পার্টিপ্রেমী বা পর্যটনপ্রমীদের কথায় গোয়ায় এসে টিটো’জ-এ না যাওয়া অনেকটা প্যারিসে গিয়ে আইফেল টাওয়ার না দেখে চলে আসার মতোই আমেজহীন।
০৫২০
টিটো’জ-এর দুই অংশীদার ডেভিড আর রিকার্ডো দুই ভাই। ১৯৭১-এ বাগা সৈকতে টিটো’জ-এর যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁদের বাবা টিটো হেনরি ডি সুজা। বাগা সেন্টারে আজও রয়েছে টিটো হেনরি ডি সুজার মূর্তি।
০৬২০
হেনরি ছিলেন প্রাক্তন সেনাকর্মী। সাতের দশকে যখন পশ্চিম ইউরোপ এবং আমেরিকার হিপি সংস্কৃতি ক্রমশ গোয়ায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে তখনই টিটো’জ তৈরি করার কথা ভাবেন হেনরি।
০৭২০
হিপিরা তখন নির্বাণ লাভের লক্ষ্যে আরব সাগরের তীরের এই শহরে দিন কাটাচ্ছেন। গোয়ায় তখন এত গাড়ি ছিল না। মোটরবাইকও চলত না। গোয়ার সরল আবেগপ্রবণ মানুষ মন থেকে স্বাগত জানিয়েছিলেন হিপিদের।
০৮২০
হেনরিও টিটো’জ শুরু করেছিলেন হিপিদের কথা মাথায় রেখেই। বাগা সৈকতে একটি পুরনো পর্তুগিজ স্থাপত্যের বাড়ি ভাড়া করে সেখানেই কিছু চেয়ার-টেবিল পেতে শুরু হয়েছিল টিটো’জ-এর যাত্রা।
০৯২০
আরব সাগরের আমেজ নিতে নিতে খাওয়া দাওয়া করবেন হিপিরা— এটাই লক্ষ্য ছিল হেনরির। রান্নাবান্না, খেতে দেওয়ার কাজ তিনি নিজেই করতেন।
১০২০
চারটি টেবিল আর ১৬টি চেয়ার নিয়ে শুরু হয়েছিল টিটো’জ। কিন্তু হেনরি নিজেই অল্প বয়সে মারা গেলেন।
১১২০
টিটো’জ তত দিনে হিপিদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাবার রেস্তরাঁ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন দুই ভাই। রিকার্ডোর বয়স তখন ১৫। ডেভিড ১৩। স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে রেস্তরাঁ সামলানোর কাজ শুরু করলেন দু’জনেই। রিকার্ডো রান্না করতেন। ডেভিডের কাজ ছিল অতিথিদের মর্জি অনুযায়ী খাবারের অর্ডার নেওয়া এবং তা টেবলে পৌঁছে দেওয়া।
১২২০
সেখান থেকে এখন টিটো’জ-এর ব্যবসা ছড়িয়েছে গোটা দেশে। শুধু গোয়াতেই টিটো’জ কোর্টইয়ার্ড, টিটো’জ নাইটক্লাব, টিটো’জ-এর ক্যাফে ম্যাম্বো এমনকি সুপারমার্কেটও রয়েছে। আছে রিসর্ট, হোটেল। এমনকি টিটো’জ-এর নিজস্ব সুরা তৈরির ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন ডেভিড এবং রিকার্ডো। বিদেশে তা রফতানিও করা হয়। দিল্লি, পুণে-সহ দেশের বেশ কিছু শহরে আউটলেট রয়েছে টিটো’জের।
১৩২০
কিন্তু রিকার্ডো এখন চান গোয়ার পুরো ব্যবসাটাই গুটিয়ে ফেলতে। বদলে বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করতে বেশি আগ্রহী তিনি। দুবাই, ম্যাঞ্চেস্টার এবং ইউক্রেনের শহরে টিটো’জ খুলতে চান।
১৪২০
গোয়ার রাজনৈতিক চাপই না কি এই সিদ্ধান্তের কারণ। বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন রিকার্ডো। রিকার্ডোর কথায়, ‘‘গোয়ায় এখন সুস্থ ব্যবসার পরিবেশ নেই। কাঁকড়ার মনোভাব নিয়ে চলছে সবাই। নিজেও উঠবে না। কেউ উঠতে চাইলে তার পা ধরে টেনে নামাবে এরা।’’
১৫২০
রিকার্ডোর অভিযোগ গোয়ায় চূড়ান্ত পর্যায়ের তোলাবাজি শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিধায়ক, পুলিশ এমনকি পঞ্চায়েত প্রশাসনও। তারা টিটো’জ-এ এসে কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে। আদায় না পেলে গ্রেফতারির হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
১৬২০
রিকার্ডো জানিয়েছেন, বহু বছর ধরেই ব্যাপারটা চলছিল। কিন্তু এখন আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। আর তিনি এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেভিড এবং রিকার্ডো দু’জনেই বলেছেন, ‘‘আমাদের অবস্থা এখন জল ভর্তি সেই গ্লাসটির মতো যেখানে একটা ছোট্ট ফোঁটা পড়লেই গ্লাস থেকে জল চলকে পড়ে যাবে।’’
১৭২০
সেই পরিস্থিতি থেকেই টিটো’জ এর মালিকানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যেমন দুঃখ আছে, তেমনই রয়েছে কিছুটা রাগও। রাজনৈতিক হেনস্থা আর তারা নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন রিকার্ডো।
১৮২০
গোয়ায় রিকার্ডো আর ডেভিডের ব্যবসাটির নাম টিটো’জ রিসর্ট অ্যান্ড হসপিটালিটি প্রাইভেট লিমিটেড। রিকার্ডো জানিয়েছেন এর ৬৫ শতাংশ শেয়ারই বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁরা। ৩৫ শতাংশ তাদের হাতে থাকলেও টিটো’জ-এ তাঁরা শুধু উপদেষ্টার ভূমিকাতেই থাকবেন।
১৯২০
তবে কি টিটো’জ বন্ধ হয়ে যাবে গোয়ায়? ডেভিড জানিয়েছেন, একেবারেই তা নয়। বরং আরও বাড়বে, আরও বদলাবে টিটো’জের পরিষেবা।
২০২০
কিন্তু সেই বদল যদি নস্ট্যালজিয়াকেই নষ্ট করে দেয়, তবে কি ভাল লাগবে টিটো’জ প্রেমীদের! সেটাই চিন্তার।