The Great Maratha Military Leader Tanaji Malusare Sacrificed His Life to Win Back Their Fort dgtl
anhaji the unsung warrior
মূল অস্ত্র পোষা গোসাপ, প্রাণের বিনিময়ে হারানো দুর্গ জয় করেন তানাজি
ছেলের বিয়ের প্রস্তুতি ছেড়ে তানাজি মাঘ মাসের এক গভীর রাতে যাত্রা করলেন কোন্ডন দুর্গ উদ্ধারে। সঙ্গে ১০০০ মালব্য যোদ্ধার বাহিনী এবং কিংবদন্তি অনুযায়ী মরাঠা সৈন্যদের প্রশিক্ষিত গোসাপ, যশবন্তী। দুর্গ জয়ের পিছনে এই সরীসৃপ-ই নাকি ছিল মরাঠাদের কিস্তিমাতের হাতিয়ার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ১১:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
মরাঠা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর ছত্রপতি শিবাজির সাফল্যের মূল কাণ্ডারি ছিলেন তাঁর মন্ত্রী বা পেশওয়া এবং সেনাপতিরা। এই মন্ত্রীরাই পরে পেশবাতন্ত্রের সূচনা করেন ভারতীয় ইতিহাসে। তার আগে শিবাজির সমকালীন সেনাপতিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তানাজি মালুসরে।
০২১৬
মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার কোঙ্কন প্রদেশের মাহাড় অঞ্চলে ‘কোলি’ ক্ষত্রিয়গোষ্ঠীতে জন্ম তানাজির। পারিবারিক ধারা মেনেই তিনি যুদ্ধ-সংগ্রামকে জীবনে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। শিবাজির সেনাবাহিনীতে তিনি ছিলেন দক্ষ যোদ্ধা।
০৩১৬
তানাজির সেনাপতি-জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিংহগড়ের যুদ্ধ। ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দের এই যুদ্ধে তিনি নিজের প্রাণের বিনিময়ে উদ্ধার করেছিলেন হৃত দুর্গ।
০৪১৬
দূরদর্শী শিবাজি বুঝতে পেরেছিলেন, মুঘলদের মোকাবিলা করতে হলে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ নিজের অধিকারে রাখা প্রয়োজন। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাজপুত শাসক প্রথম জয় সিংহ এবং ছত্রপতি শিবাজির মধ্যে ‘পুরন্দরের চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। জয় সিংহ ছিলেন মুঘল সেনাপতি।
০৫১৬
এই চুক্তির ফলে শিবাজিকে অনেক ক্ষেত্রেই মুঘল শক্তির কাছে মাথা নোয়াতে হয়। বেশ কিছু দুর্গের অধিকার তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়। তার মধ্যেই ছিল কোন্ডন দুর্গ। পুণে থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই কেল্লা প্রায় দু’হাজার বছরের প্রাচীন।
০৬১৬
এই কেল্লা পশ্চিমঘাট বা সহ্যাদ্রি পর্বতমালার দুর্গমতম ‘ভুলেশ্বর’ চড়াইয়ে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩১২ মিটার উচ্চতায় এই দুর্গ সুরক্ষিত অস্ত্রভাণ্ডার এবং শত্রুদের উপর নজর রাখার জন্য আদর্শ। ফলে যুগে যুগে বিভিন্ন শাসক বংশ একে নিজেদের অধিকারে রাখতে চেয়েছে।
০৭১৬
বিজাপুরের সুলতান ইব্রাহিম আদিল শাহের সেনাপতি ছিলেন শিবাজির বাবা সয়াজি ভোঁসলে। তিনি ছিলেন কোন্ডন দুর্গের রক্ষক। কিন্তু শিবাজি আদিলশাহি বংশের অধীনে নিছক সেনাপতি হয়ে থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন আলাদা শাসক হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে। ছত্রপতি শিবাজি হয়ে তিনি নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন।
০৮১৬
কিন্তু মরাঠা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর মেনে নিতে পারেননি কোন্ডন দুর্গের হাতাছাড়া হয়ে যাওয়া। কিন্তু এই দুর্গ জয় ছিল দুঃসাধ্য। খাড়াই পাহাড়ের ঢাল নিজেই ছিল দুর্গের প্রাকৃতিক রক্ষক। প্রবেশের জন্য ছিল মাত্র দু’টি দ্বার, ‘কল্যাণ দরওয়াজা’ এবং ‘পুণে দরওয়াজা’।
০৯১৬
এই দুর্গ উদ্ধারের দায়িত্ব ছত্রপতি শিবাজি অর্পণ করেছিলেন তানাজি মালুসরের উপর। যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে শিবাজি ডেকে পাঠিয়েছিলেন তানাজিকে। তার কিছুদিন পরেই ছিল তানাজির ছেলের বিয়ে। বাড়িতে চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। কিন্তু শিবাজির সামনে তানাজি নিজেই দুর্গ অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
১০১৬
ছেলের বিয়ের প্রস্তুতি ছেড়ে তানাজি মাঘ মাসের এক গভীর রাতে যাত্রা করলেন কোন্ডন দুর্গ উদ্ধারে। সঙ্গে ১০০০ মালব্য যোদ্ধার বাহিনী এবং কিংবদন্তি অনুযায়ী মরাঠা সৈন্যদের প্রশিক্ষিত গোসাপ, যশবন্তী। দুর্গ জয়ের পিছনে এই সরীসৃপ-ই নাকি ছিল মরাঠাদের কিস্তিমাতের হাতিয়ার।
১১১৬
বাহিনীকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন তানাজি। এক দল পিছনে একটু দূরত্ব রেখে এগোয়। তাদের বলা হয়েছিল প্রয়োজনে তারা দুর্গের কাছে আসবে। অন্য দল দ্রুত পৌঁছে যায় দুর্গের নীচে। পাহাড়ের অন্ধকারের সঙ্গে সৈন্যরা প্রায় মিশে যায়।
১২১৬
দুর্গের দক্ষিণ দিকে পশ্চিমঘাটের খাড়াই ঢালের দুর্গমতম অংশকে বেছে নেওয়া হয় ওঠার জন্য। কিন্তু কতটা উঠতে হবে, তা মাপা হবে কী করে? জনশ্রুতি অনুযায়ী, যশবন্তীর দেহে দড়ি বেঁধে তাকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ওই ঢাল বেয়ে উপরে উঠে আসে তিনশো জন সৈন্য। মুঘলরা ভাবতে পারেনি ওই দুর্গম অংশ দিয়েও আক্রমণ আসতে পারে। ফলে দুর্গের ওই অংশে কোনও পাহারা ছিল না। (ছবি: ফেসবুক)
১৩১৬
গভীর অন্ধকারে তাদের অতর্কিত আক্রমণে হতচকিত হয়ে পড়ে মুঘলবাহিনী। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তারাও প্রত্যাঘাত করে। দুর্গের তৎকালীন রক্ষক ছিলেন মুঘলদের অন্যতম রাজপুত সেনাপতি উদয়ভান রাঠৌর। তাঁর সঙ্গে তানাজির মুখোমুখি বিধ্বংসী তলোয়ারের যুদ্ধ হয়। তলোয়ারের রক্তক্ষয়ী ‘ডুয়েলে’ প্রাণ হারান তানাজি।
১৪১৬
এরপর যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন তানাজির ভাই সূর্যজি মালুসরে। রাতভর যুদ্ধের পরে অবশেষে বিজয়ী হয় মরাঠারা। ভারতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই যুদ্ধে প্রাণহানি হয়েছিল প্রায় তিনশো মরাঠা সেনার। অন্যদিকে, মৃত্যু হয়েছিল কমপক্ষে পাঁচশো মুঘল সৈন্যর।
১৫১৬
পরদিন ভোরে ছত্রপতি শিবাজির কাছে দুর্গজয় এবং তানাজির মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছয়। শুনে তিনি বলেন, ‘গড় আলা, পান সিংহ গেলা’। অর্থাৎ, দুর্গ এল, কিন্তু আমরা আমাদের সিংহকে হারালাম। এরপর তানাজির স্মৃতিতে ওই কোন্ডন দুর্গের নামকরণ করেন শিবাজি। নতুন নাম হয় ‘সিংহগড়’।
১৬১৬
আজও দাঁড়িয়ে আছে এই কেল্লা। ইতিহাসের সাক্ষী এবং পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে। এ বার সে উঠে এল সেলুলয়েডেও। শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি মুক্তি পেল অজয় দেবগণ-কাজল অভিনীত বায়োপিক ‘তানাজি’। (ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)