দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে মোট চার দফা দাবি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে এলেন ছয় রাজ্যের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান। বিচারপতিকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীর্ষ আদালত। তার বিরোধিতা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় গত মঙ্গলবার থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন ধর্মঘট ডেকেছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর সেই ধর্মঘট উঠবে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ইলাহাবাদ বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অনিল তিওয়ারি। তবে জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলে তাঁরা সন্তুষ্ট। ফলে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
দোলের ছুটিতে বিচারপতি বর্মার বাংলো থেকে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা উদ্ধার করে দমকল বাহিনী। তাঁর বাংলোয় আগুন লেগে গিয়েছিল। তা নেভাতে গিয়ে টাকা দেখতে পায় দমকল। বিচারপতি বর্মা অবশ্য জানিয়েছেন, টাকা কোথা থেকে এসেছে, তা তিনি জানেন না। যে ঘরে তা পাওয়া গিয়েছে, সেখানে বাইরের লোকজনের যাতায়াত আছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দিল্লি হাই কোর্টে তাঁকে বিচারের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বর্মাকে বদলি করে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নগদ উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে এই বদলির কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন:
প্রথম থেকেই বিচারপতি বর্মার বদলির বিরোধিতা করে আসছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নাকে চিঠি দেয় আরও পাঁচ রাজ্যের বার প্রধান। তাঁদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন বিচারপতি খন্না এবং সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের আরও কয়েক জন সদস্য। সূত্রের খবর, নগদ উদ্ধারের ঘটনায় উপযুক্ত তদন্ত এবং পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। ইলাহাবাদের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর বলেন, ‘‘আমরা চার দফা দাবি জানিয়েছি। প্রথমত, বিচারপতি বর্মার বদলির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওই বিচারপতিকে বিচারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তৃতীয়ত, শুধু বিচার নয়, সমস্ত প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব থেকেই তাঁকে অব্যাহতি দিতে হবে। চতুর্থত, অবিলম্বে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হবে।’’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা সন্তুষ্ট, জানিয়েছেন অনিল। তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন প্রধান বিচারপতি। অনিল বলেন, ‘‘বৈঠক নিয়ে আমরা যদি সন্তুষ্ট না-হতাম, তা সংবাদমাধ্যমের সামনেই বলে দিতাম। আমরা সন্তুষ্ট। যা বলতে চেয়েছিলাম, বলেছি। কলেজিয়াম আমাদের কথা মন দিয়ে শুনেছে। জানিয়েছে, আমরা যে যে পয়েন্ট তুলেছি, প্রতিটি বিবেচনা করে দেখা হবে। আমাদের কোনও চিন্তা করতে হবে না। শীর্ষ আদালেতর পাঁচ জন সিনিয়র বিচারপতির কাছ থেকে এই ধরনের আশ্বাস পেয়ে আমরা নিশ্চিন্ত।’’
কিন্তু ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বার অ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘট কি তবে উঠবে? প্রশ্ন এড়িয়ে যান অনিল। বলেন, ‘‘ধর্মঘট কারও একার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে না। ৩৫ হাজার আইনজীবী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৈঠকে কী হল, আমি তাঁদের জানাব। তার পর সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
বিচারপতি বর্মার বাংলো থেকে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে বেশ কয়েক বান্ডিল পোড়া নোট মিলেছে বলে খবর। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তদন্ত কমিটিতে আছেন হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কর্নাটক হাই কোর্টের এক বিচারপতি। তাঁদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে সুপ্রিম কোর্ট।