Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Flood

বন্যারোধী ধান বাঁচাল দেড় হাজার কৃষককে

ফি বছর বন্যায় অসমের বহু হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট হয়। চলতি বছর বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৫ জেলায় লক্ষাধিক হেক্টর কৃষিভূমি বানভাসি।

প্রবল বর্ষণের জেরে অসমের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় ডুবে রয়েছে।—ছবি এপি।

প্রবল বর্ষণের জেরে অসমের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় ডুবে রয়েছে।—ছবি এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

গত বছর নিতু বরার নেওয়া একটা ঝুঁকি, এ বছরের বন্যায় পশ্চিম ব্রহ্মপুত্র এলাকায় বানভাসি গ্রামগুলির অন্তত দেড় হাজার কৃষককে বাঁচিয়ে দিল।

ফি বছর বন্যায় অসমের বহু হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট হয়। চলতি বছর বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৫ জেলায় লক্ষাধিক হেক্টর কৃষিভূমি বানভাসি। দিন পাঁচেক জমি জলের নীচে থাকলেই নষ্ট হয়ে যায় প্রথাগত ধানবীজ।

গোলাঘাটের বালিদুয়া গ্রামে নিতুবাবুর সাড়ে তিন বিঘা ধানজমি আছে। সেটি পশ্চিম ব্রহ্মপুত্র এলাকা। যেখানে বন্যার প্রকোপ বেশি। প্রথাগত ধানই চাষ করে আসছিলেন তিনি। আর বন্যায় বিপুল ক্ষতি হচ্ছিল তাঁর।

গত বছর অসম কৃষিবাণিজ্য ও গ্রাম রূপান্তর (অ্যাপার্ট) প্রকল্পের উদ্যোগে হওয়া একটি কর্মশালায় এসে নিতুবাবু জেনেছিলেন রণজিত সাব-১ নামে এমন ধানের বীজ বেরিয়েছে যা ১৫ দিন জলের তলায় থেকেও বেঁচে যায়। সাব নামটি এসেছে সাবমার্জড বা জলে ডোবা থেকে।

কপাল ঠুকে .২ হেক্টর জমিতে নতুন ধান লাগিয়ে ঝুঁকি নেন নিতু বরা। বন্যা হয়। দেখা যায় বাকি জমির ধান নষ্ট হয়ে গেলেও রণজিৎ সাব-১ ধানের দৌলতে অন্তত বন্যার বিরুদ্ধে রণে জিতে গিয়েছেন নিতু বরা। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে নতুন ধানের প্রাণশক্তির কথা।

অ্যাপার্টের গবেষক অভিষেক সিংহ জানান, এখানকার চাষীরা মূলত প্রথাগত ধানই ব্যবহার করেন ও লোকসানের মুখে পড়েন। লালচে বাও ধান বন্যা সহ্য করতে পারলেও তার ফলন খুব কম। অসমে বন্যা সহ্যকারী ধানের প্রজাতিগুলি ২০১৮ সাল থেকে চালু করা হয়। নীতু বরার জমি হল প্রথম হাতেকলমে বন্যা রোধী ধানের সফল পরীক্ষা। প্রকল্পটি চলছে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায়। নীতুবাবুর ধানের জীবনীশক্তি দেখে উৎসাহিত হয়ে এ বছর পশ্চিম ব্রহ্মপুত্র এলাকায় অন্তত দেড় হাজার চাষী, ৯৫০ হেক্টর জমিতে ওই ধান চাষ করেছেন। বন্যার ধাক্কা কাটিয়ে সকলের মুখেই এখন হাসি।

শুধু প্রাণশক্তিতেই নয়, ফলনেও চাষীর মুখে হাসি ফোটাচ্ছে নতুন ধান। কৃষি দফতর জানায়, প্রথাগত মনোয়ারি বা প্রসাদ ভোগের ফলন যেখানে মাত্র ৮.৮ কুইন্টল, সেখানেই রণজিৎ সাব-১ প্রতি .২৫ হেক্টরে ২১.৬ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন দেয়। আরও দুই বন্যা সহ্য করতে পারা ধান স্বর্ণ সাব-১ ও বাহাদুর সাব-১ ধানও গ্রামে জনপ্রিয় করতে প্রচার চালাচ্ছে কৃষি দফতর।

কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অসিত চক্রবর্তী বলেন, প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রথাগত অনেক ধানও এখন বন্যা সহ্য করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে এমন কয়েকটি ধানের প্রজাতি রয়েছে। তাদের শিকড় ১৫ ফুট নীচে থাকে। অবশ্য ফলনের দিক থেকে প্রথাগত ধান গবেষণালব্ধ ধানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। কিন্তু তবুও শুধুমাত্র ফলনের লোভে পুরোপুরি গবেষণালব্ধ নতুন ধানের উপরে নির্ভর করাও দুরদর্শিতা নয়। রাখতে হবে ভারসাম্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Assam Agriculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy