—ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্রে কুড়িটি দেশের ঐকমত্য হল ঠিকই। কিন্তু তার পরের দিন ইউক্রেন যুদ্ধের ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেল নয়াদিল্লিতে জি২০-র প্রাঙ্গণে। আজ এক দিকে পশ্চিমের দুই অন্যতম প্রধান রাষ্ট্র ফ্রান্স এবং জার্মানি, নিশানা করল রাশিয়া এবং তার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। অন্য দিকে পুতিনের মশালধারী রাশিয়ায় বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বারবার বিঁধলেন আমেরিকা-সহ পশ্চিমকে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দুই বিবদমান ব্লক-ই কিন্তু প্রশংসায় পঞ্চমুখ হল ভারতের সভাপতিত্বের। দিনের শেষে এটাকেই সাউথ ব্লকের জন্য বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
গত কাল বিকেলেই দিল্লি ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরে আজ বিশেষ কাজ ছিল না বিদেশি অতিথিদের। সকালেই বিদায় নিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার কিছু ক্ষণ পরে রাশিয়ার দূতাবাসে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন লাভরভ। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমের দেশগুলি জি২০ সম্মেলনের কর্মসূচির ইউক্রেনায়ন করার চেষ্টা করছিল। আমরা সেটা রুখতে পেরেছি। যৌথ ঘোষণাপত্রে রাশিয়ার নাম রাখা হয়নি।’’ তাঁর সরাসরি অভিযোগ, ‘‘পশ্চিম, ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে। কিভ-এর যে শাসকেরা রয়েছেন তাঁরা নিজের হাতে নিজেদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা নষ্ট করছেন। পশ্চিমের নেতারা যে তা বুঝছেন না এমনটা নয়। কিন্তু আপনারা ভাল করেই জানেন, তাঁরা রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয়ের জন্য আদা জল খেয়ে নেমেছেন।’’ এখানেই না থেমে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিম বহু আগেই প্রতি বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল উষ্ণায়নের কুফল রোখার জন্য। কিন্তু কিছুই করেনি। এই ঘোষণাপত্রে সে কথাও বলা হয়েছে।’’ লাভরভের কথায়, ‘‘আজ আফ্রিকান ইউনিয়নের জি২০-তে অন্তর্ভুক্তির জন্য পশ্চিমের দেশগুলি টেবিল চাপড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আফ্রিকার প্রতি তাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা একচুলও কমেনি। তা ছাড়া আমেরিকা গোটা বিশ্বে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগে বাধা দেয়। আমরা কখনও আমেরিকা-আফ্রিকার কথা বলায় কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চাই না। এখন দেখি আমেরিকা কতটা প্রযুক্তি হস্তান্তর করে আফ্রিকাকে!’’ ভারতের প্রশংসা করে লাভরভ বলেন, ‘‘এই সম্মেলন নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক, ভারতের সভাপতিত্বে অনুন্নত এবং গরিব দেশগুলিকে একত্র করা গিয়েছে জি২০-র ছাতার তলায়। আমাদের ব্রিকস অংশীদারি এখানে বিশেষ করে সক্রিয় ছিল। অর্থাৎ ব্রাজ়িল, ভারত, চিন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।’’
এর পরে দুপুরে আন্তর্জাতিক মিডিয়া কক্ষেই সাংবাদিক বৈঠক করতে আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। তিনি সরাসরি বলেন, ‘‘পুতিন এখানে আসতে পারেননি কারণ তাঁর উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটা সঙ্গত কারণেই রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জি২০ কোনও নিরাপত্তা বিষয়ক মঞ্চ নয়, অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার মঞ্চ। কিন্তু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার একতরফা আক্রমণ নিয়ে এই গোষ্ঠীর কুড়িটি দেশের মধ্যে ১৬টি দেশ মস্কোর প্রবল নিন্দা করেছে। তিনটি দেশ এ ব্যাপারে মতামত জানায়নি। একটি দেশ এই প্রস্তাবে ইউক্রেন প্রসঙ্গের বিরুদ্ধে ছিল, বলা বাহুল্য সেটা খোদ রাশিয়াই।’’ তিনি আলাদা করেও রাশিয়ার ইউক্রেনের উপরে আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘‘এর ফলে শুধু ইউক্রেনবাসীর শান্তিই বিঘ্নিত হচ্ছে তাই-ই নয়, গোটা বিশ্বের ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রেও তার কুপ্রভাব পড়ছে।’’
জার্মানির শীর্ষ প্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, দিল্লি ঘোষণাপত্রে যে ভাষায় ইউক্রেন প্রসঙ্গ রাখা হয়েছে তা তাঁরা সমর্থন করেছেন এবং এই বাক্যগুলির জন্য লড়েছেন। তার কারণ, ‘‘ভৌগোলিক অখণ্ডতার মৌলিক নীতিতে রাশিয়াকে দিয়ে সই করানোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতে যে কোনও দরকষাকষির ক্ষেত্রে এই নথি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।’’ এক জার্মান কর্তার কথায়, ‘‘ভারতের শেরপা অমিতাভ কান্থ শুক্রবার রাতে এক নাটকীয় পদক্ষেপ করেন। তিনি ইউক্রেন সংক্রান্ত চূড়ান্ত খসড়াটি দিয়ে বলেন হয় এটা গ্রহণ করুন বা পথ দেখুন (মাই ওয়ে অর হাইওয়ে!) সেই খসড়ায় মোদীর তো বটেই ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজ়িল, দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ নেতাদের সই ছিল।’’
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য কোনও আক্রমণের মধ্যে যাননি আজ। তিনি এক্স হ্যান্ডল-এ লেখেন, ‘‘আমরা ভারতে যে পথ খুললাম তাতে সব মানুষের টাকা বাঁচবে, অনুন্নত দেশগুলির বৃদ্ধির সুযোগ আসবে, ভারত থেকে গ্রেট ব্রিটেন ছাড়িয়ে রেল সংযোগ হবে। এসবই তো অর্থনৈতিক বৃদ্ধির বিষয়। এখানে চিনকে আঘাত করা বা সাহায্য করার কোনও ব্যাপার নেই।’’
জি২০ সম্মেলনে যৌথ ঘোষণাপত্র যে ভারতের সাফল্যের নিদর্শন তা মেনে নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা শশী তারুরও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিল্লি বিবৃতি নিঃসন্দেহে ভারতের পক্ষে কূটনৈতিক জয়। কারণ, জি২০ সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত মনে করা হচ্ছিল ইউক্রেন নিয়ে মতভেদের ফলে ঐকমত্য হবে না। ফলে যৌথ বিবৃতিও প্রকাশিত হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy