বিশাল দেবনাথ।
ঘরের মধ্যে গলা অবধি জল। তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে তিন যুবকের মধ্যে এক যুবক বলছেন, “হে প্রভু, হে হরিনাম কৃষ্ণ জগন্নাথো, প্রেমানন্দি...।”
কোনও করুণ আর্তি নয়, স্রেফ মজার ছলে বলা কথাগুলো এখন মানুষের মুখে মুখে, শিলচরের গণ্ডি ছাপিয়ে যা এখন গোটা দেশে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন রিল বা শর্ট ভিডিয়োয়। দেশে এখন ১০০টি মজার রিল তৈরি হলে, অর্ধেকের নেপথ্যেই শোনা যায় ‘হে প্রভু...’! এমনকি দেশের বাইরেও বহু রিলে জুড়ে দেওয়া হচ্ছেওই কথাগুলো।
কী ভাবে যে হল ব্যাপারটা, নিজেও বুঝতে পারেন না শিলচর কনকপুর রোডের যুবক বিশাল দেবনাথ। বললেন, “রিল-টিল কিচ্ছু নয়। এক সাধারণ ভিডিয়ো। কোনও স্ক্রিপ্ট ছিল না, ছিল না কোনও পরিকল্পনাও।”
২০২২ সালের জুনে বরাক নদীর বাঁধ ভেঙে বানভাসি হয় শিলচর শহর। বহু জায়গায় একতলার ছাদের উপর দিয়ে বয়ে চলে নদীর কুল ছাপানো জল। কনকপুরে বিশালদের একতলা বাড়িটিও পুরো ডুবে যায়। বাবা-মা-ছেলে পরিবারের তিন জনই গিয়ে পিসির বাড়িতে আশ্রয় নেন। পাশেই দোতলা বাড়ি পিসির। সাত দিন পরে জল নামতে শুরু করে। দুই পিসতুতো ভাইকে নিয়ে নীচের তলায় যান বিশাল। সেখানে তখনও গলাজল। সেই জল ঠেলে সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন তিন ভাই। আচমকা এক ভাই ভিকি সঙ্গে রাখা মোবাইলের ক্যামেরা অন করে দুরবস্থার বর্ণনা দিতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি ‘হে প্রভু’ কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই পিছনে দাঁড়ানো বিশাল সেই কথার সূত্র ধরে জুড়ে দেন, “হে প্রভু, হে প্রভু, হে হরিনাম কৃষ্ণ জগন্নাথো, প্রেমানন্দি।” বাকি দু’জনও হাসিতে ফেটে পড়েন। বিশালের কথায়, “ওই দুই শব্দ ধরেই তখন যা মনে এসেছিল, বলতে থাকি। কিছু আবোলতাবোলও বলে দিই৷”
পরে ভিকি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিশালের ওই ভিডিয়ো পোস্ট করেন। প্রথম তিন দিনে দর্শক জুটে যায় ১.০৭ লক্ষ! এর পর আর হিসেব নেই। ফেসবুকে শেয়ারের পর শেয়ার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম কোথায় নেই ‘হে প্রভু’৷ বিভিন্ন ভাষায় কমেডি, নন-কমেডি রিলে শোনা যায় বিশালের গলা। কিছু ব্লগার তাঁর শব্দগুচ্ছের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেও দর্শক টানছেন। লক্ষ্যে পৌঁছতে এক গেমার তার অনলাইন গেমেওজুড়ে দিয়েছেন বিশালের ওই ‘হে প্রভু’৷ ওড়িশায় এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে বিশালের কথার অংশবিশেষ নিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে ‘লাইট অ্যান্ড মিউজিক’ শো। রেডিয়ো জকিরাও তাঁদের অনুষ্ঠানে কথায় কথায় ‘হে প্রভু’ বলে হাসছেন, হাসাচ্ছেন। মিম, কমেডি সবেই উপস্থিত বিশাল-কণ্ঠের ‘হে প্রভু’৷
এত ভাইরাল, এত রিলে যুক্ত হচ্ছে যাঁর কণ্ঠ, তাঁর জীবনযাত্রায় কিন্তু কোনও ফারাক হয়নি। “কী করে হবে?”, বিশাল বলেন, “একটি টাকাও আমার বা ভিকির অ্যাকাউন্টে তো জমা পড়ছে না।”
কী করে ওই সূত্রে রাজস্ব আসে, কার কাছে কণ্ঠ ব্যবহারের মাসুল দাবি করতে হয়, কিছুই জানেন না আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই এম কম পডুয়া। তবু তিনি খুশি, বন্যার কথা মানুষ ভুলতে বসলেও ভোলেনি তাঁর ‘হে প্রভু, হে হরিনাম...’৷ এখনও রাস্তায় বার হলে তাঁকে দেখে পরিচিত-অপরিচিতেরা বলে ওঠেন ‘হে প্রভু’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy