কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের আগে দলের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা সনিয়া গান্ধীর হাতে তুলে দিলেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান (মধুসূদন মিস্ত্রি ছবিতে সনিয়ার ডান দিকে)। সনিয়ার হাতে দেওয়া হল তাঁর দলীয় ভোটার আইডি কার্ডটিও। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি পিটিআই।
রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ থেকে নজর যাতে সরে না যায়, তার জন্য কংগ্রেস হাইকমান্ড দলের সভাপতি নির্বাচন ঘিরে সঙ্কট দ্রুত মেটাতে চাইছে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বুধবারের মধ্যেই সভাপতি নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থী বাছাই করে ফেলার কাজ সেরে ফেলা হবে। যাতে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তিনি সভাপতি নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। কিন্তু কে সেই প্রার্থী, তা নিয়ে এখনও জলঘোলা চলছে। খোদ সনিয়া গান্ধী এ বিষয়ে সমস্ত প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদ ঘিরে জটিলতাও মেটাতে চাইছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। অশোক গহলৌতের অনুগামী তিন নেতা শান্তি ধারিওয়াল, মহেশ জোশী ও ধর্মেন্দ্র রাঠৌরকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আজ ‘শো-কজ়’ করা হয়েছে। কিন্তু গহলৌতের বিরুদ্ধে এখনই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সভাপতি নির্বাচন মিটে গেলে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হবে।
রাজস্থানের গহলৌতের অনুগামী বিধায়কদের বিদ্রোহ নিয়ে মঙ্গলবার এআইসিসি-র ভারপ্রাপ্ত নেতা অজয় মাকেন ও পর্যবেক্ষক মল্লিকার্জুন খড়্গে সনিয়া গান্ধীকে লিখিত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। রিপোর্টে গহলৌতের অনুগামী বিধায়কদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরাসরি গহলৌতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের সরাসরি প্রমাণ নেই। কিন্তু গহলৌতের অনুগামীরা যে তাঁর ইশারাতেই বৈঠক করেছেন, রিপোর্টে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও গহলৌতের কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি হওয়া এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। কিন্তু সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে গহলৌতকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলায় তাঁর অনুগামীরা বিদ্রোহ করেন। রবিবার রাতে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ না দিয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। দাবি তোলেন, সচিন পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করা যাবে না। গহলৌত কংগ্রেস সভাপতি হলে তাঁর অনুগামী কাউকেই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।
এর পরেও কংগ্রেস হাইকমান্ড গহলৌতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, গহলৌত এখনও সভাপতি নির্বাচনের দৌড় থেকে ছিটকে যাননি। শেষ মুহূর্তে তাঁর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন হতে পারে। কমল নাথ, আনন্দ শর্মার মতো প্রবীণ নেতারা গহলৌতের সঙ্গে কথা বলছেন। গহলৌত নিজেও সোমবার খড়্গেকে জানিয়েছিলেন, বিধায়কদের বিদ্রোহে তাঁর হাত ছিল না। গোটা ঘটনার জন্য তিনি দুঃখপ্রকাশও করেন। গহলৌতের অনুগামী বিধায়করাও আজ দাবি করেছেন, তাঁরা নিজেরাই পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ না দিয়ে আলাদা বৈঠক করেছিলেন। কারণ, দু’বছর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা সচিন পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করার ষড়যন্ত্র হচ্ছিল। এআইসিসি-র ভারপ্রাপ্ত নেতা অজয় মাকেন পাইলটের হয়ে পক্ষপাত করছিলেন। গহলৌত এ বিষয়ে জড়িত ছিলেন না। তিনি চাইছিলেন, পরিষদীয় দলের বৈঠক হোক। সেখানে সচিনকে মুখ্যমন্ত্রী না করার দাবি তোলা হোক। তারপরে কংগ্রেস সভানেত্রীর হাতে সিদ্ধান্তের অধিকার ছেড়ে দেওয়া হোক। সনিয়ার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেই সব করা হোক।
কংগ্রেসের অনেক প্রবীণ নেতা আবার মনে করছেন, গহলৌতকে সভাপতি পদের প্রস্তাব দেওয়ার পরেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকেও সরানো উচিত। ছত্তীসগঢ়ের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী টি এস সিংহ দেওর মতে, ‘‘গহলৌত কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তিনি যদি নিজের রাজ্যের বিধায়কদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তা হলে গোটা দেশে দল সামলাবেন কীভাবে?’’ রাজস্থানের বিধায়ক দিব্যা মেদেরনার মতে, গহলৌতের অনুগামীরা যা করেছেন, তা দু’বছর আগের পাইলটের বিদ্রোহের থেকেও ভয়ঙ্কর। ইতিমধ্যে পাইলট দিল্লিতে এসেছেন। সূত্রের খবর, তিনি অনুগামীদের জানিয়েছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে তাঁর পক্ষেই যে অধিকাংশ বিধায়ক থাকবেন, সে দায়িত্ব তাঁর। পাইলট দাবি করেছেন, তিনি হাইকমান্ডের কাছে গহলৌতের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানাননি।
যে বিধায়কের বাড়িতে গহলৌতের অনুগামীরা বৈঠক করেছিলেন, সেই শান্তি ধারিওয়াল জানান, সনিয়ার বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ নেই। সনিয়ার নির্দেশেই দল চলবে। শো-কজ়ের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এ কে অ্যান্টনিকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে উভয়সঙ্কটে। কারণ, বেশি কড়া হতে গেলে রাজস্থানের সঙ্কট বাড়তে পারে। বিধায়করা দল ছাড়লে সরকারও হাতছাড়া হতে পারে। আবার কংগ্রেস হাইকমান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পরেও কারও শাস্তি না হলে শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্বলতা ফুটে উঠবে। তাই আপাতত শো-কজ় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত সভাপতি নির্বাচনের পরে হতে পারে।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, রাজস্থানের থেকেও আসল প্রশ্ন হল, পরবর্তী সভাপতি কে হবেন। শশী তারুর ছাড়া দলের কোষাধ্যক্ষ পবন বনসল মনোনয়ন জমার ফর্ম তুলেছেন। কিন্তু বনসলের দাবি, অন্য কারও জন্য ফর্ম নিয়েছেন তিনি। তিনি প্রার্থী হবেন না। কমল নাথ, মীরা কুমার, অম্বিকা সোনিরাও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের নাম ভেসে উঠলেও তাঁরা নির্বাচনে লড়বেন না। সে ক্ষেত্রে সেই মুকুল ওয়াসনিক, মল্লিকার্জুন খড়্গে, দিগ্বিজয় সিংহের মধ্যে থেকেই কাউকে বেছে নিতে হবে বলে কংগ্রেস নেতাদের মত।
আজ সভাপতি নির্বাচন পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত মধুসূদন মিস্ত্রি সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে এআইসিসি-র প্রতিনিধিদের তালিকা তুলে দিয়েছেন। সনিয়ার প্রতিনিধি কার্ডও তাঁকে দেওয়া হয়েছে। সনিয়া আজ হিমাচলের প্রার্থী তালিকা নিয়েও বৈঠক করেছেন। ৬৮ আসনের বিধানসভায় ৪০টি আসন নিয়ে আলোচনা করে ৩২টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy