ফাইল ছবি
রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তায় তেল কেনার উদ্যোগ নিয়ে আমেরিকা বলেছিল, এতে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে তাদের চাপানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞার শর্ত ভাঙবে না ঠিকই, তবে এর অর্থ ইউক্রেনে সামরিক হামলাকে সমর্থন। যা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। শুক্রবার কার্যত তার জবাব দিতেই কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের স্পষ্ট বার্তা, ভারতের আইনসঙ্গত ভাবে জ্বালানি কেনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। যে সব দেশ তেলের জোগানে স্বনির্ভর এবং যারা নিজেরাই এখনও রাশিয়া থেকে তা কিনে চলেছে, তারা আমদানিতে রাশ টানার পক্ষে যুক্তি দিলে তা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ইঙ্গিত আমেরিকা এবং ইউরোপের দিকেই। আমেরিকা জ্বালানির প্রয়োজন নিজে মেটাতে পারবে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই মস্কো থেকে অশোধিত তেল আমদানি করছে ইউরোপের দেশগুলি। সরকারি সূত্র বলছে, প্রতিযোগিতার বাজারে ভারতের কাছে যে কোনও রফতানিকারীই স্বাগত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে, এই টানাপড়েনের মধ্যেই ভারতকে তেল রফতানির বার্তা দিয়েছে ইরান। এ দেশে ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি চেগেনি বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ফলে ভারতকে প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ করতে তৈরি তেহরান। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আমেরিকা ইরানের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে। তার আগে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী ছিল তারাই।
তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে যুদ্ধের। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য রাশিয়ার উপরে পশ্চিমি দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব বাজারে তেলের দামকে ১৩৯ ডলারে ঠেলে তুলেছিল। যার মূল কারণ, রাশিয়া জ্বালানির অন্যতম রফতানিকারী হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে জোগানে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ১০৭ ডলার ছিল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম। আর এক ধরনের অশোধিত তেল আমেরিকার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট-এর দরও বেড়ে হয়েছে ব্যারেল প্রতি ১০৬ ডলার। এমন আকাশছোঁয়া অশোধিত তেল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারী দেশ হিসাবে ভারতকে উদ্বেগে রাখছে। এমনিতে রাশিয়া থেকে প্রয়োজনের মাত্র ১% মতো কেনে নয়াদিল্লি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জোগানে ধাক্কা লাগায় এবং তার দাম এতটা উঁচু থাকায় তেল কিনতে এখন বিকল্প এবং সস্তার বাজার খোঁজা হচ্ছে। তার উপরে আমেরিকা ও ইউরোপের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে দাঁড়িয়ে মস্কোও ভারতকে কম দামে তেল-সহ বিভিন্ন পণ্য রফতানির সুযোগ দিচ্ছে। বর্তমান চড়া দরের জমানায় যা কার্যত লুফে নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। যাদের আমদানি খরচ যুদ্ধের আবহে বিপুল বেড়েছে। আন্তর্জাতিক তেল বিশেষজ্ঞদের দাবি, পুতিন এখনও ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করতে রাজি নন বলেই তেলের বাজারে অনিশ্চয়তা থাকছে।
ভারতের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা জানিয়েছে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার কথা। এ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতেই সরকারি সূত্রের বক্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেনের দ্বন্দ্বে যেহেতু তেলের দাম বেড়েছে, তাই সেই চ্যালেঞ্জের মুখে কম দামে আমদানির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খোলা মনে তাই সব রফতানিকারীদের ছাড়ের সুবিধাই খতিয়ে দেখা হবে এবং বিশ্ব বাজারে ব্যবসা করা ভারতীয় আমদানিকারীরা সেরা প্রস্তাবটি বেছে নেবে।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, ভারত যেহেতু জ্বালানির বেশিরভাগ চাহিদাই মেটায় আমদানি করে, তাই সব বিকল্প খতিয়ে দেখা জরুরি। যুদ্ধের মধ্যেই ইউরোপের বহু দেশ যে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তা মনে করিয়ে পরিস্থিতিতে নজর রাখার কথা বলেছেন তিনি।
তার উপরে করোনা বিধি শিথিল হওয়ায় দেশে বাড়ছে তেলের বিক্রি। ফলে ফেব্রুয়ারিতে আমদানিও ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পরে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে, যা দৈনিক ৪৮.৬ লক্ষ ব্যারেল। চাহিদা ও বিশ্ব বাজারে অনিশ্চয়তার জেরে দেশের শোধনাগারগুলি বেশি পরিমাণে তেল কিনছে। সাধারণত শোধনের দু’মাস আগে কেনাই দস্তুর। কিন্তু এখন সেই সময় স্থির করছে সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy