ছবি পিটিআই।
এত চাল-গম রাখব কোথায়? গুদাম যে উপচে পড়ছে! এই প্রশ্ন তুলেই খাদ্য নিগম মোদী সরকারকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছিল। চিঠির বক্তব্য, খাদ্য নিগম বা এফসিআই-এর গুদামে চাল-গম রাখার আর জায়গা নেই। আপদ-বিপদের কথা ভেবে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত রাখা দরকার, তার প্রায় দ্বিগুণ চাল-গম মজুত রয়েছে। এর পরে খরিফ ফসল আসতে শুরু করলে তা কোথায় রাখা হবে!
সরকারের কাছে তাই খাদ্য নিগমেরই আর্জি ছিল, লকডাউনের পর থেকে রেশনে যেমন ৫ কেজি করে চাল-গম বিনামূল্যে বিলি করা হচ্ছে, আরও তিন মাস সেটা চালিয়ে যাওয়া হোক।
লকডাউন জারির পরে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’য় মাসে মাথা পিছু পাঁচ কেজি করে চাল-গম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে তাঁর বক্তৃতায় জুলাই থেকে আরও পাঁচ মাস ওই চাল-গম দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন। সরকারি সূত্রের খবর, এফসিআই-এর চিঠি থেকেই স্পষ্ট, গরিবের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার সঙ্গে এই পদক্ষেপের পিছনে উপচে পড়া গুদাম খালি করার তাগিদও ছিল।
উপচে পড়ছে গুদাম
এফসিআই গুদামে মজুত
চাল
২.৭৪
গম
৫.৫৮
ধান ও অন্যান্য মোট
১০.৪৩
গুদামের মজুত ক্ষমতা
৮.৭৮
জুলাইয়ে ন্যূনতম খাদ্যশস্য রাখা দরকার
৪.১১
* হিসেব কোটি টনে
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, খাদ্য সুরক্ষা আইনের চাহিদা মেটাতে ও বিপদ-আপদের কথা ভেবে জুলাই মাসে ‘বাফার স্টক’ হিসেবে ৪.১১ কোটি টন খাদ্যশস্য মজুত রাখতে হয়। এ দিকে, জুন মাস পর্যন্ত হিসেব বলছে, খাদ্য নিগমের গুদামে এখন চাল রয়েছে ২.৭৪ কোটি টন। গমের পরিমাণ ৫.৫৮ কোটি টন। দুয়ে মিলে ৮.৩২ কোটি টন। তার উপরে আরও প্রায় দু’কোটি টন ধান ও অন্যান্য খাদ্যশস্য রয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গুদামে মজুত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ১০ কোটি টনের বেশি। অথচ কেন্দ্র, রাজ্য মিলিয়ে গুদামে খাদ্য মজুতের ক্ষমতাই হল ৮.৭৮ কোটি টন। বাড়তি খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করতে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যে এখন খোলা আকাশের নীচেই পলিথিন ঢাকা দিয়ে গমের বস্তা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। এর পরে খরিফ মরসুমেও রেকর্ড ফলন হবে বলে সরকারের। সেই শস্য রাখা হবে কোথায়? এটাই এখন চিন্তা এফসিআই-এর। এই অবস্থায় কংগ্রেস-বাম সহ বিরোধীদের প্রশ্ন, খাদ্য সুরক্ষা আইনে এমনিতেই ৮১ কোটি মানুষকে ৫ কেজি করে চাল-গম ভর্তুকি-মূল্যে দেওয়া হয়। তাদেরই আরও ৫ কেজি করে চাল-গম নিখরচায় দেওয়া হচ্ছে। সরকারের উচিত ছিল, বাকি সকলের জন্যও রেশন ব্যবস্থা চালু করা।
দিল্লির অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষিকা দীপা সিন্হা বলেন, ‘‘খাদ্য সুরক্ষা আইনে ৮১ কোটি মানুষের জন্য ৫ কোটি টন খাদ্যশস্য খরচ হয়। গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় আরও ৩ কোটি টন খাদ্যশস্য লাগবে। কিন্তু গুদামে ১০ কোটি টন খাদ্যশস্য রয়েছে। আয়ের দিক থেকে উপরের সারির ১০-১৫ শতাংশ মানুষকে বাদ দিয়েও সরকার আরও ২০ কোটি মানুষকে রেশনে খাদ্য বিলি করতে পারত।’’
সরকারি সূত্রের খবর, আরও পাঁচ মাস চাল-গম দেওয়ার ঘোষণা করার আগে গত সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির বৈঠক হয়। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এফসিআই-এর গুদাম খালি করতে না পারলে খরিফ ফসল রাখার জায়গা মিলবে না। বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তিনি সব রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যাতে আগামী পাঁচ মাসের খাদ্যশস্য রাজ্যগুলি তুলে নিয়ে ঠিক মতো বিলি করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy