E-Paper

১.৯৪ লক্ষ কোটি খরচের হিসাব দেয়নি নবান্ন, মমতা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে রিপোর্ট পেশ সি‌এজির

সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় অনুদানের ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র জমা দেয়নি।

Mamata Banerjee.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:১২
Share
Save

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২১-এর মার্চ মাস পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অনুদানের ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচের শংসাপত্র জমা দিতে পারেনি বলে রিপোর্টে জানিয়েছে সিএজি।

সিএজি রিপোর্টকে হাতিয়ার করে নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ২ লক্ষ ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র দিতে পারেনি। যার অর্থ, রাজ্যের তৃণমূল সরকার এই টাকা নয়ছয় করেছে। জবাবে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, এর মধ্যে ২০০২-০৩ থেকে বাম জমানার হিসাবও রয়েছে। তাঁর কাছে কেন ২০০৩ সালের হিসাব চাওয়া হচ্ছে? সে সময়ে তো তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাতেই আসেনি!

রাজ্য বনাম কেন্দ্রের এই বাদানুবাদের মুখে প্রশ্ন উঠেছে, কে ঠিক বলছেন, কে বেঠিক!

কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সিএজি রিপোর্টে ২০০২-২০০৩ অর্থ বছর থেকে খরচের শংসাপত্র না মেলার কথা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে তৃণমূলের সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কত টাকার শংসাপত্র মেলেনি, তা-ও স্পষ্ট ভাবে বলা রয়েছে।

সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় অনুদানের ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র জমা দেয়নি। এর মধ্যে ২০১১-১২ পর্যন্ত বকেয়া শংসাপত্রের পরিমাণ মাত্র ৩৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। বাকি ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার। ২০১২-১৩ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত। সিএজি রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত যে সংখ্যক শংসাপত্র বকেয়া রয়েছে, তার মধ্যে ৪৯.৫ শতাংশ শংসাপত্রই ২০১৮-২০২১, এই তিন অার্থিক বছরের। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এই রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, আগের সরকারের দোহাই দিয়ে কোনও ভাবেই বর্তমান সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। কারণ যে টাকা খরচের হিসাব মেলেনি, তার সিংহভাগ অর্থই বর্তমান সরকারের আমলে খরচ হয়েছে। বিশেষত ২০১৮-২১, এই তিন বছরে।’’

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৩১ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত ‘স্টেট ফাইনান্সেস অডিট রিপোর্ট’ শীর্ষক সিএজি রিপোর্ট নিয়ে বিতর্কের শুরু সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে। সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার পরে তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে রাজ্যের বকেয়ার প্রসঙ্গ পেড়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সিএজি রিপোর্ট পড়তে বলেন। তিনি নিজেও পড়ছেন বলে জানান। এর পরেই সিএজি রিপোর্ট নিয়ে বিজেপি নেতারা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সাংবাদিক বৈঠক করেন। পরের দিন বাজেটের পরে সাংবাদিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সিএজি রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বলেন, এর ফলে মানুষের প্রাপ্য টাকা কাদের হাতে যাচ্ছে, যোগ্য ব্যক্তিরা টাকা পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কলকাতায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে ধর্নায় বসছেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির দিক থেকেই এই টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কড়া’ চিঠি লিখে জানান, তাঁদের তরফে কোনও কেন্দ্রীয় অনুদান খরচের শংসাপত্র বা ‘ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট’ দেওয়া বাকি নেই। সিএজি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

যে সিএজি রিপোর্ট নিয়ে এত বিতর্ক, সেখানে আবার স্পষ্ট বলা হয়েছে, এর আগে ২০১৬-১৭ বর্ষের অডিট রিপোর্টেও অর্থ খরচের শংসাপত্র জমা না দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনও উন্নতি হয়নি। উল্টে হিসাব বহির্ভূত অর্থ খরচের পরিমাণ ৮৭ শতাংশ বেড়েছে।

আরও একটি বিষয়ে অনিয়মের দিকে আঙুল তুলেছে সিএজি। সিএজি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্য সরকারের কাছে জরুরি প্রয়োজনে আগাম টাকা তুলে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে তার বিস্তারিত বিল জমা করতে হয়। ২০১৮ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৩৪০০ কোটি টাকার বিল জমা দেয়নি। সেই অর্থ খরচ হয়েছে, তার কোনও উত্তর মেলেনি।

এ নিয়ে নবান্নের অর্থ দফতর সূত্রের বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতেই সব উত্তর দেওয়া হয়েছে। আগে কেন্দ্রীয় সরকার সেই চিঠির জবাব দিক।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal government CAG Report Mamata Banerjee Central Government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।