কোভিড অতিমারির প্রকোপের মধ্যেই আগামী সোমবার সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বিরোধীদের কাছে যেটা চিন্তার— প্রতিটি অধিবেশনেই বিজেপি সংসদের নিয়মগুলি জোর করে বদলে দিচ্ছে। প্রশ্নপর্ব বাতিল করছে যাতে বিরোধীরা সরকারকে চেপে ধরতে না পারে। জিরো আওয়ারের সময় এক ঘন্টা থেকে কমিয়ে আধঘন্টা করা হচ্ছে। যাতে সরকারকে বিরোধীদের কাছে জবাবদিহি করতে না হয়। সংসদকে উপহাস করে অর্ডিন্যান্সের মতন একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়ের অপব্যবহার করা হচ্ছে, যা গত ৭০ বছরে কখনও হয়নি।
সংসদ মুলতুবি থাকাকালীন (কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে) রাষ্ট্রপতির গঠিত অস্থায়ী আইনই হল অর্ডিন্যান্স। সংসদ চালু হওয়ার ছ’সপ্তাহের মধ্যে সেখানে অনুমোদিত হওয়ার পরে একটি অর্ডিন্যান্স আইন হয়ে যায়।
সংসদ চালু হলেই গত ছ’মাসে প্রবর্তিত অর্ডিন্যান্সগুলি বিবেচনা ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। ঘটনাচক্রে, ২৪শে মার্চ জোর করে লকডাউন চাপানোর পর থেকে রাষ্ট্রপতি ১১টি অর্ডিন্যান্সে সই করেছেন। তার মধ্যে পাঁচটি মূলত কোভিডের সাথে সম্পর্কিত। আরও ২টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত। অন্যান্যগুলি ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স এবং কৃষির সাথে সম্পর্কিত তিনটি অর্ডিন্যান্স। ১৫ দিনে এগুলি অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
অতীতে অনেক রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন অর্ডিন্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রশ্ন না করে এগোতে পছন্দ করেন। কোনও বাধা না থাকায় বিজেপি সরকার অর্ডিন্যান্সের দুর্ভাগ্যজনক সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: স্বর্ণমন্দিরে বিদেশি অনুদানে সায় অমিত শাহের
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রথম ৩০ বছরে সংসদে প্রতি ১০টি বিলের জন্য একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হতো। পরবর্তী ৩০ বছরে প্রতি ১০টি বিল পিছু দু’টি অর্ডিন্যান্স জারি করা হতো। ষোড়শ লোকসভায় (২০১৪-১৯) সেই সংখ্যাটি লাফিয়ে ৩.৫টি অর্ডিন্যান্সে পৌঁছয়। বর্তমান লোকসভায় এখনও পর্যন্ত প্রতি ১০টি বিলের জন্য ৩.৩টি অর্ডিন্যান্স করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮-২০০৪ সালের মধ্যে বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বছর প্রতি ৯.৬টি অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছিল। ২০০৪-’০৯ ইউপিএ-১ সরকার এক বছরে ৭.২টি অর্ডিন্যান্স জারি করে। ইউপিএ-২ সরকারের আমলে সেই সংখ্যা কমে হয়ে ৫টি। ২০১৪-’১৯ এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম মেয়াদে বছরে ১০টি অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে প্রায় ১০টি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল। যা থেকে বোঝা কঠিন নয় যে, গণতন্ত্রকে অচল করার একটা প্রবণতা রয়েছে বিজেপির।
আরও পড়ুন: শিয়ালদহ এখন ‘পাঁচতারা’
সত্যিই কি সমস্যা আছে? নাকি আমরা বিরোধীরা একটু বা়ড়াবাড়ি করছি? নাহ্, সমস্যা আছে। দু’টি সমস্যা আছে। এক, বাতিল অর্ডিন্যান্সগুলো আবার জারি করার প্রয়োজন মনে করে না বিজেপি সরকার। এই কাজ রীতিবিরুদ্ধ এবং চরম অগণতান্ত্রিক। মোদী সরকার একাধিকবার এই কাজ করেছে। দুই, অর্ডিন্যান্স বিল হয়ে সংসদে আসার পর সেগুলো তাড়াহুড়ো করে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। আলোচনা, খুঁটিনাটি দেখা, কমিটির স্ক্রুটিনি বিল পাস করাতে গুরুত্বপূর্ণ। তার তোয়াক্কা না করে অর্ডিন্যান্সগুলোকে তাড়াতাড়ি বিল এবং তারপর আইনে পরিণত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক অর্ডিন্যান্সগুলির কয়েকটি বিবেচনা করা যাক।
ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন (সংশোধন) অর্ডিন্যান্স পিএমসি ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির প্রতিক্রিয়া। কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে আসার পর সংসদের দু’টি অধিবেশন হয়েছে। কোনও খসড়া বিল উপস্থাপন করা হয়নি। পাশাপাশিই, কর্পোরেট ফার্মিংয়ে অনুমতি এবং কৃষিবাণিজ্য ব্যবস্থাগুলিকে উদারীকরণের পাশাপাশি বড় বড় খুচরো ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেওয়ার মতো বিষয়গুলিতে পর্যাপ্ত সংসদীয় বিতর্কের প্রয়োজন ছিল।
আরও পড়ুন: মে মাসেই করোনা আক্রান্ত ৬৪ লক্ষ, সেরো সমীক্ষায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
এই মারাত্মক অর্ডিন্যান্স সংস্কৃতি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেও চলছে। লকডাউনের সময় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতে শ্রমিক ইউনিয়ন এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা গ্রুপের পরামর্শ ছাড়াই এমন অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে।
এর শেষ কোথায়?
পুনশ্চ: বিশ্বে মাত্র ৩টি সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, যারা অর্ডিন্যান্সকে মান্যতা দেয়— ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। ভারতে এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছিল গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৫ অনুযায়ী। যেখানে বলা আছে, ভাইসরয় তাঁর ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেন। অন্যান্য সব দেশে কিন্তু সংসদে অধিবেশন বসিয়ে বিভিন্ন আইন পাস করানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy