তেলঙ্গানার পশুপালন মন্ত্রী শ্রীনিবাস যাদবের। ছবি: মন্ত্রীর টুইটার হ্যান্ডল থেকে
হায়দরাবাদ এনকাউন্টারকে শুধু সমর্থনই নয়, কার্যত ভবিষ্যতেও এমন এনকাউন্টারের লাইসেন্স দিয়ে দিলেন তেলঙ্গানার আরও এক মন্ত্রী। ‘কেউ এই ধরনের অপরাধ করলে এনকাউন্টার হবেই’, মন্তব্য তেলঙ্গানার পশুপালন মন্ত্রী শ্রীনিবাস যাদবের। মানবাধিকার সংগঠন-সহ যাঁরা এনকাউন্টারের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরও এক হাত নিয়েছেন শ্রীনিবাস।
ঠিক কী বলেছেন, মন্ত্রী? শনিবার তেলঙ্গানার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বর্ষীয়ান শ্রীনিবাস বলেন, ‘‘এটা একটা শিক্ষা। কোনও খারাপ কাজ করলে তিনি আদালত বা জেল থেকে সুবিধা বা পরবর্তীকালে জামিন পেতে পারেন না। ভবিষ্যতে আর এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটবে না। আমরা এই বার্তা দিয়েছি যে, এই ধরনের জঘন্য অপরাধ (ধর্ষণ বা খুন) করলে এনকাউন্টার হবেই।’’
এনকাউন্টারের বিরোধিতায় সরব বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। মন্ত্রী শ্রীনিবাস নিশানা করেছেন তাঁদেরও। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘একটা শক্তিশালী বার্তা দিয়েছি আমরা। সারা দেশের জন্য আমরা আদর্শ তৈরি করেছি। আমরা শুধু সামাজিক উন্নয়ন নয়, আইনের ক্ষেত্রেও আমরা একটা মডেল তৈরি করেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (কেসিআর) সরকার যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটাই পালন করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন শ্রীনিবাস।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এটা কি তেলঙ্গানা সরকারের বক্তব্য? মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর-ও কি এই মতবাদ সমর্থন করেন? এর কোনও জবাব অবশ্য তেলঙ্গানার শাসক দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস)-এর তরফে দেওয়া হয়নি। আবার মন্ত্রীর বক্তব্য নস্যাৎ করা বা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বলেও কোনও বিবৃতি জারি করেনি টিআরএস। তাতে স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মনে হয়েছে, মৌন থেকে কার্যত শ্রীনিবাসের মতকে সমর্থনই করেছে সরকার ও শাসক দল।
আরও পডু়ন: উন্নাওয়ে গত ১১ মাসে ৮৬টি ধর্ষণ, ১৮৫টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা! ক্ষোভে ফুঁসছে ‘রেপ-রাজধানী’
তেলঙ্গানায় তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারায় চার অভিযুক্তকে এনকাউন্টারে হত্যা নিয়ে তোলপাড় দেশ। অনেকেই পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। উল্টো দিকে আবার সমালোচনাও চলছে। পুলিশের এনকাউন্টার তত্ত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যেমন সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, তেমনই ধর্ষণ-খুনের অভিযুক্তদের এনকাউন্টারে হত্যা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও নানা মহল থেকে উঠে আসছে প্রশ্ন। এমনকি, দেশের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদেও এ ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার নিন্দা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে তেলঙ্গানার মন্ত্রীর এ হেন মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেও মনে করছেন সমাজের একটা অংশ।
গণধর্ষণ ও পুড়িয়ে খুন থেকে শুরু করে পুলিশের অভিযোগ না নেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত এনকাউন্টার— গোটা এই পর্বে বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর। এমনকি, চিকিৎসককে গণধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে গোটা রাজ্য যখন প্রায় উত্তাল, তখন একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে গদগদ চিত্তে সংবাদমাধ্যমে তাঁর ছবি তোলা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী শ্রীনিবাস সে সব সমালোচনা উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে এর মধ্যে টেনে এনে লাভ নেই। কারণ, বহু মানুষ এই ঘটনাকে (এনকাউন্টার) সমর্থন করেছেন।’’
আরও পডু়ন: ‘ভাইয়া, আমি বাঁচতে চাই’, দাদার গলা জড়িয়ে ধরে শেষ আর্তি উন্নাওয়ের তরুণীর
তেলঙ্গানার পরিবহণ মন্ত্রী পি অজয় কুমারও শুক্রবার এনকাউন্টারের দিন প্রায় একই সুরে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এনকাউন্টার করে রাজ্য দ্রুত বিচারের ক্ষেত্রে রোল মডেল তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, কেউ যদি আমাদের মেয়েদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়, তা হলে তাঁর চোখ তুলে নেব।’’ এনকাউন্টারের ফলে নিহত তরুণীর পরিবার শান্তি পেয়েছে বলেও ওই দিন মন্তব্য করেন অজয় কুমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy