আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। —ফাইল চিত্র।
অসম্ভব পরিশ্রম করেছিলেন গত এক মাস। রোজ গড়ে ছ’ঘণ্টা পদযাত্রা। দিনে অন্তত তিন ঘণ্টা বরাদ্দ থাকত বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘মজলিশ’-এর জন্য। অন্তত দু’টি জনসভা রাতে। লক্ষ্য একটাই— ‘ঘাঁটি’ অক্ষত রাখতে হবে! রাখলেনও আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদের ‘পুরনো শহরের’ সাতটি আসনের মধ্যে সাতটিতেই জিতল তাঁর দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)।
বুথফেরত সমীক্ষায় তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের ভাল ফলের ইঙ্গিত ছিল। সমীক্ষা জানান দিয়েছিল, জনতার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় অপ্রত্যাশিত ভাবে খারাপ ফল করতে পারে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (যিনি কেসিআর নামে সমধিক পরিচিত) দল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি (বিআরএস)। তা বাস্তবে মিলেও গিয়েছে। তেলঙ্গনায় প্রথম বার সরকার গড়তে চলেছেন রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। কিন্তু গোটা রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস ভাল ফল করলেও তারা দাঁত ফোঁটাতে পারেনি ওয়েসির ঘাঁটিতে। পুরনো হায়দরাবাদের চারমিনার, বাহাদুরপুরা, মালাকপেট, চন্দ্রযানগুট্টা, নামপল্লি, ইয়াকুটপুরা ও কারওয়ান—সাতটি আসনে জিতেছেন মিম প্রার্থীরা। চন্দ্রযানগুট্টায় প্রার্থী হয়েছিলেন আসাদুদ্দিনের ভাই আকবরউদ্দিন ওয়েইসি। বিআরএস প্রার্থীকে ৮১ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছেন তিনি।
তবে কিছুটা হলেও পুরনো শহরের জমি হাতছাড়া হয়েছে ওয়েইসির। জমিক্ষয় হয়েছে ওয়েইসির ভাইয়ের এলাকায়। গত বার চন্দ্রযানগুট্টা থেকে ৫৯ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন আকবরউদ্দিন। এ বার তাঁর প্রাপ্ত ভোটের হার খানিকটা কমেছে। মালাকপেট, নামপল্লি ও ইয়াকুটপুরাতেও বড় ব্যবধানে জিততে পারেননি মিম প্রার্থীরা।
তেলঙ্গানায় ভোটপর্বের গোড়া থেকেই কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছেন ওয়েইসি। হায়দরাবাদে ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘যে আসনগুলিতে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি লড়াই করার মতো পরিস্থিতিতে আছে, বেছে বেছে সেখানেই প্রার্থী দিয়েছে মিম।’’ ওয়েইসি এবং কেসিআরের জন্য বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দরজাও যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তার পর থেকেই প্রকাশ্যে কেসিআরের হাত ধরে ভোটে লড়ার কথা বলে এসেছেন ওয়েইসি। ভোটপ্রচারে গিয়ে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘আমি তো কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মধ্যে কোনও তফাৎ দেখি না! আমি চাই, যে ন’টি আসনে আমরা লড়ছি, তার বাইরে প্রত্যেকটি আসনে বিআরএস প্রার্থীকে মানুষ ভোট দিন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিচারে।’’
ওয়েইসির এই ডাকে অবশ্য রাজ্য জুড়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। পুরনো হায়দরাবাদের বাইরে ওয়েইসিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমজনতা। গ্রেটার হায়দরাবাদেরও রাজেন্দ্রনগর ও জুবিলি হিল্স আসনে প্রার্থী দিয়েছিল মিম। দু’জায়গাতেই তারা হেরেছে। ওই দু’টি আসনে জিতেছেন বিআরএস প্রার্থী। আট হাজার ভোটে হেরেছেন জুবিলি হিলস কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী তথা ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তাঁর পরাজয়ে কংগ্রেসের দাবি, মিম প্রার্থী তাদের সংখ্যালঘু ভোট কাটায় এই হার। ভোটের আগে আজহারকে হারানোর ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ওয়েইসি। বলেছিলেন, ‘‘ওঁর ব্যাটিং দেখতে খুবই ভাল লাগত। কিন্তু ওই পর্যন্তই। টাকার লোভ আজহারকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে আমি জানি।’’
তেলঙ্গানার ভোটপণ্ডিতদের একাংশের দাবি, ওয়েইসির সঙ্গে বিজেপির পারস্পরিক বোঝাপড়া না-থাকা অসম্ভব। উদ্দেশ্য, পুরনো হায়দরাবাদকে শান্ত রাখা। গত কয়েক বছর মুসলিমরা একপ্রকার শান্তিতেই থাকেন হায়দরাবাদে। সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই পুরনো শহর থেকে বেরিয়ে এসে নতুন শহরের উন্নয়নের সুফল কুড়াচ্ছেন। শহরে কোনও সাম্প্রদায়িক অশান্তির তেমন খবর নেই। ‘সমঝোতা’ না থাকলে তা সম্ভব ছিল না। তেলঙ্গানার মোট ১১৯টি বিধানসভার আসনের মধ্যে মাত্র সাত বা আটটি নিয়ে যদি খুশি থাকেন ওয়েইসি, তা হলে বাকি রাজ্যের মুসলিম বৃত্তে তাঁকে কাজে লাগানো বিজেপির জন্য লাভজনক। একে ‘শান্তি কিনে রাখা’ বললেও অত্যুক্তি হওয়ার কথা নয়।
ওয়েইসি অবশ্য বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁতের অভিযোগ বরাবরই খণ্ডন করে এসেছেন। মিম নেতৃত্বের দাবি, বিজেপি যাদের সঙ্গে হাত ধরে, ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে ‘স্বার্থের সংঘাত’ লাগবেই। তারা কখনও কাউকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারে না। বরং, বিজেপির হাত দিনে দিনে শক্ত হওয়ার জন্য কংগ্রেসকেই দায়ী করেছেন নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে, তেলঙ্গানায় এই ভোটে নিজেদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে নিয়েছে বিজেপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা একটি আসন পেয়েছিল। এ বার তারা জিতেছে আটটি আসনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy