তাওয়াং-সহ গোটা অরুণাচল প্রদেশকে দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে চিন। ফাইল চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরেই তিব্বতি বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান ইয়াংৎসেতে যাতায়াত বাড়ছিল পর্যটক এবং ভক্তদের। তাওয়াং নিয়ে বরাবরই ‘স্পর্শকাতর’ চিন তা বরদাস্ত করতে চায়নি বলে মনে করছে সামরিক ও কূটনৈতিক শিবিরের একাংশ। শুক্রবার রাতে চিনা ফৌজের অতর্কিতে অনুপ্রবেশের সেটা ‘কারণ’ হতে পারে বলে ওই অংশের মত।
কয়েক বছর আগে তাওয়াংয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন তিব্বতি এই ধর্মগুরু চতুর্দশ দলাই লামা। সে সময় চিন অধিকৃত তিব্বতের লাগোয়া অরুণাচল প্রদেশের ওই অংশে দলাই লামার সফরের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বেজিং। নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) লাগোয়া অরুণাচলের ওই অংশে রেল যোগাযোগের কথা ঘোষণার পরেও একই ভাবে আপত্তি তুলেছিল চিন। এমনকি, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী সেলা গিরিপথের সুড়ঙ্গ, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র-সহ কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাস করতে তাওয়াংয়ে যাওয়ার সময়ও শি জিনপিং সরকারের ‘রক্তচক্ষু’ দেখা গিয়েছিল।
১৯৬২-র যুদ্ধে তাওয়াং-সহ অরুণাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়েছিল চিনা বাহিনী। পরে চিন বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ‘সাপ্লাই লাইন’ কেটে যাওয়ার আশঙ্কায় তাওয়াং ছেড়ে ফিরে গিয়েছিল চিনা সেনা। চিনা বাহিনীকে বিনা বাধায় দেশের অনেক গভীরে ঢুকতে দিয়ে ভারত সীমান্ত সিল করে দেবে এবং অরুণাচলে ঢুকে পড়া চিনা বাহিনী নিজেদের দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে— ভারত এমনই পরিকল্পনা করেছিল বলে চিন সে সময় নাকি আশঙ্কা করেছিল। তাই দ্রুত চিনা বাহিনী তাওয়াং ছেড়ে ফিরে যায়, কিন্তু তাওয়াং-এর উপর নিজেদের দাবি চিন এখনও ছাড়েনি। অরুণাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশকে তারা দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে।
চিন অধিকৃত তিব্বতের রাজধানী লাসার পোতালা প্রাসাদের পরেই তিব্বতিদের কাছে তাওয়াং মঠের গুরুত্ব। কারণ ষষ্ঠ দলাই লামা এখানে জন্মেছিলেন। মাও জে দংয়ের জমানায় চিনা ফৌজ তিব্বতের দখল নেওয়ার পরে ১৯৫৯ সালে বর্তমান দলাই লামা তাওয়াং হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তখন থেকেই চিন তাওয়াং-সহ অরুণাচলকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করছে। যদিও নয়াদিল্লি কখনওই তাতে আমল দেয়নি।
তিব্বতিদের পবিত্র ধর্মস্থান ইয়াংৎসের প্রাকৃতিক শোভাও অপরূপ। প্রায় ১৪ হাজার ফুট উচ্চতার ওই এলাকায় রয়েছে চুমি ঘাৎসে জলপ্রপাত। ভারতীয় সেনাশিবিরের ‘সুরক্ষা’ থাকায় বৌদ্ধ ভক্ত এবং পর্যটকদের সমাগম বাড়ছিল সেখানেও। পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সেখানে একটি বৌদ্ধ গুম্ফাও নির্মাণ করেছিলেন। এই পরিস্থিতি একদলীয় চিনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল বলে বিদেশ মন্ত্রকের একটি অংশের মত। সম্ভবত, তার পরিণতিতেই ৯ ডিসেম্বরের রাতে গালওয়ান-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করেছিল চিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy