সম্প্রতি এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবির সমালোচনা করে। প্রশ্ন তোলে, কেন বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল ফেলে রেখেছেন রাজ্যপাল? মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে একই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া কেরল সরকারের মামলায় কেন্দ্র জানাল, তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় কেরলের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য নয়!
কেরলের পিনারাই বিজয়নের সরকারের অভিযোগ, বিধানসভায় পাশ হওয়া কিছু বিল তৎকালীন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলি এখনও অনুমোদিত হয়নি। বর্তমানে কেরলের রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আর্লেকার। তবে এখনও বিলগুলিতে অনুমোদন মেলেনি। এই নিয়ে কেরল সরকার এবং রাজ্যপালের মধ্যে চাপানউতর চলছে। বিষয়টি গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্তও। শীর্ষ আদালত এই মামলায় কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল।
মঙ্গলবার কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণী এবং সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শীর্ষ আদালতে যুক্তি দেন, কেরলের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তথ্য এবং বিষয়গুলি তামিলনাড়ুর থেকে স্বতন্ত্র। তাই এই মামলার পৃথক শুনানি হওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রের যুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৬ মে মামলাটির শুনানি হবে।
সম্প্রতি শীর্ষ আদালতে ধাক্কা খান তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল। তাঁর ভূমিকা এবং কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ু সরকারের করা মামলার শুনানিতে গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট জানায়, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল ঝুলিয়ে রাখা বৈধ কাজ নয়। উল্লেখ্য, তামিলনাড়ু সরকারের পাশ করানো ১০টি বিলে রাজ্যপাল সম্মতি না-দেওয়ায় সেগুলি দিনের আলো দেখেনি। তার পর এমকে স্ট্যালিনের সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানায়, বিলের কোনও আইনি বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন রাজ্যপাল। তবে বিলটি পুরনো আকারেই আবার বিধানসভায় পাশ করানো হলে, তাতে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে বাধ্য।
আরও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেরলের রাজ্যপাল সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়কে ‘বিচার্য সীমা লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যদি সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক সংশোধনী করে, তবে আইনসভা বা সংসদের কিসের প্রয়োজন?’’ আর্লেকরের যুক্তি, এই ধরনের সংশোধনী করার ক্ষমতা কেবল সংসদেরই রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘সংবিধানে রাজ্যপালদের জন্য কোনও সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি।’’ আর্লেকরের মতে, সুপ্রিম কোর্ট চাপিয়ে না দিয়ে এই ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারত!
রাজ্যপালের এই মন্তব্য ভাল ভাবে নেননি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। রাজ্যপালের মন্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে সমালোচনা করেন তিনি। উঠে এসেছে বিল আটকে রাখার প্রসঙ্গও। যদিও আর্লেকরের দাবি, কেরলের মামলা তামিলনাড়ুর মতো নয়। কেরলের রাজভবনে কোনও বিল বিচারাধীন নেই। তাঁর কথায়, ‘‘রাজভবনে কোনও বিল পড়ে নেই। সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।’’