Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Suvendu Adhikari Pradyot Kishore Deb Barma

‘শুভেন্দুর কথা উস্কানিমূলক, রাজ্যভাগের দাবি জোরালো করবে’, ত্রিপুরায় বিজেপিরই জোটসঙ্গী নেতার অভিযোগ

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরোধিতা করে ভোটে লড়েছিল তিপ্রা মথা। সিপিএমকে সরিয়ে তারাই হয়ে উঠেছিল প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু কয়েক মাস আগে তারা বিজেপির সরকারে মিশে গিয়েছে।

Suvendu Adhikari’s statement is provocative, says Tipra motha chief Pradyot Kishore Deb Barma

শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মণ। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১৬:০৮
Share: Save:

বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সোমবার বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে কার্যত ফুঁসে উঠলেন ত্রিপুরায় বিজেপির জোটসঙ্গী তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মণ। মঙ্গলবার তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে প্রদ্যোৎ সরাসরি শুভেন্দুর কথাকে ‘উস্কানিমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিপ্রা মথা প্রধানের এই বক্তব্য নিয়ে ‘বিড়ম্বনায়’ ত্রিপুরার বিজেপিও। সে কারণেই কৌশলে প্রতিক্রিয়া দেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্ব।

শুভেন্দু বিধানসভার বাইরে সোমবার যা বলেছিলেন, তার মর্মার্থ ছিল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের কোতল করা হচ্ছে। রংপুর, সিরাজগঞ্জের ঘটনার কথা উল্লেখ করে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশের এই সমস্ত জায়গায় নিহতদের বেশির ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। পাশাপাশিই শুভেন্দু এ-ও বলেছিলেন, এ বার বাংলাদেশ থেকে এক কোটি হিন্দু বাংলায় আসবেন! তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সেই বক্তব্য একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়েছিল। তারই স্ক্রিনশট পোস্ট করে মঙ্গলবার প্রদ্যোৎ লিখেছেন, ‘‘নেতারা যখন এই ধরনের বক্তব্য পেশ করেন, তখন উত্তর-পূর্ব আরও বিপন্ন বোধ করে। বাংলার নেতার এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য আমাদের রাজ্যভাগের দাবিকে আরও জোরালো করবে।’’ প্রদ্যোৎ আরও লিখেছেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের নিশ্চয়ই নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সবাইকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশকে আরও একটা পাকিস্তান করে দেওয়া হবে।’’ শুভেন্দুর ওই কথায় কেন তিপ্রা মথার পৃথক রাজ্যের দাবি জোরালো হবে? ফোনে প্রদ্যোৎ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে লোক এলে জনজাতি অংশের মানুষ আরও বিপন্ন হবেন। সেই জায়গা থেকেই আমাদের রাজ্যভাগের দাবি জোরালো হবে। এটা তো সহজ বিষয়।’’ গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরোধিতা করে ভোটে লড়েছিল মথা। সিপিএমকে সরিয়ে তারাই হয়ে উঠেছিল প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু কয়েক মাস আগে সেই মথাই বিজেপির সরকারে মিশে গিয়েছে। যিনি ছিলেন বিরোধী দলনেতা, সেই অনিমেষ দেববর্মা এখন ত্রিপুরা সরকারেরই মন্ত্রী। তা সত্ত্বেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিজেপি নেতা শুভেন্দুর বক্তব্য সম্পর্কে এমন অভিযোগ তুলছেন কী করে? প্রদ্যোৎ বলেন, ‘‘আমি আমার কথা বলেছি। আমার লাইন স্পষ্ট। ত্রিপুরায় বোঝাপড়া করেছি মানে এই নয় যে, আমরা আমাদের কথা বলতে পারব না।’’ তবে ত্রিপুরা বিজেপির নেতারা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রদ্যোতের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে চাইছেন না। ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। বাংলাদেশের বিষয়ে আমরা কোনও ‌মন্তব্য করব না। যা বলার ভারত সরকার এবং ত্রিপুরা সরকার বলবে।’’ তবে ত্রিপুরা বিজেপির এক প্রবীণ নেতা শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তিই প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, শুভেন্দুর বোঝা উচিত, বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত নেই। ত্রিপুরারও রয়েছে। সেখানে বাঙালি-জনজাতি সম্পর্ক স্পর্শকাতর বিষয়। ওঁর ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত ছিল।

প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছিল মথা। সেই পর্বেই দিল্লিতে ডেকে প্রদ্যোতের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ত্রিপুরা বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মথাকে সঙ্গে রাখা হয়েছে। না হলে রাজ্যে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হত। এই বিষয়গুলির অভিঘাত কী হবে, তা ঠিকঠাক বুঝে আমাদের কথা বলা দরকার।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE