দেশের রাজধানীর বুকে ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এর নাশকতার ছক ভেস্তে গেল দিল্লি পুলিশের তৎপরতায়। শুক্রবার বেশি রাতে কয়েক রাউন্ড গুলিযুদ্ধের পরে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। ধৃতের নাম মুস্তাকিম খান ওরফে আবু ইউসুফ। তার বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড কার্তুজ এবং দু’টি আইইডি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ডেপুটি কমিশনার প্রমোদ কুশওয়াহা জানান, গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায়, শুক্রবার রাতে ধৌলা কুঁয়া ও করোল বাগের মধ্যে আইএস সদস্যের কিছু গতিবিধি রয়েছে। তার পরেই তৈরি হয়ে সেখানে পৌঁছে যায় দিল্লি পুলিশের একটি দল। রিজ রোডে পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দেয় মোটরসাইকেলে চড়ে আসা আবু। দু’পক্ষের মধ্যে কিছু ক্ষণ গুলি বিনিময়ও হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, পাঁচ রাউন্ড মতো গুলি চলে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ধরা পড়ে যায় আবু। কুশওয়াহা বলেন, “আবু একাই ছিল। লোন উল্ফ (একক হামলাকারী) কায়দায় দিল্লিতে নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল তার। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও দু’টি আইইডি উদ্ধার হয়েছে। আবুকে জেরা করা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রে খবর, দু’টি আইইডি একটি প্রেসার কুকারের মধ্যে রাখা ছিল। আজ এনএসজি কমান্ডোদের একটি দল আইইডি দু’টি নিষ্ক্রিয় করে।
প্রাথমিক জেরার পরে পুলিশের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, ধৃত আবু উত্তরপ্রদেশের বলরামপুরের বাসিন্দা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আবুর সঙ্গে আগে যোগ ছিল আইএস জঙ্গি নেতা ইউসুফ আল হিন্দির। সিরিয়ায় তার মৃত্যুর পরে আবুর সঙ্গে যোগাযোগ হয় পাকিস্তানি জঙ্গি আবু হুজাইফা আল বাকিস্তানির। এমনকি তার নির্দেশে আফগানিস্তানের খুরাশান প্রদেশের হিজরাটে সপরিবার চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আবু। সেই কারণে স্ত্রী এবং চার সন্তানের পাসপোর্টও তৈরি করে। কিন্তু আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় হুজাইফা-র মৃত্যুতে তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এর পরে আর এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে যোগ হয় আবুর। সেই নেতাই তাকে দিল্লিতে একক ভাবে হামলা চালানোর নির্দেশ দেয়। আবুর কাছ থেকে যে আইইডি দুটি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি তৈরি করেই রাখা ছিল। তার মোটরসাইকেলটি সম্ভবত চোরাই বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
আরও পড়ুন: মোদীকে বিঁধতে ফের রাফাল অস্ত্র রাহুলের
দেশের করোনায় আক্রান্ত ৩০ লক্ষ, কমছে মৃত্যুহার

ঘটনাস্থলে এনএসজি কমান্ডো ও বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড। শনিবার নয়াদিল্লির বুদ্ধ জয়ন্তী পার্কে। ছবি: পিটিআই।
জেরার পরে পুলিশের দাবি, দিল্লির কোনও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা ব্যস্ত এলাকায় আত্মঘাতী হামলার ছক কষেছিল আবু। এ বছর ১৫ অগস্ট হামলার ছক থাকলেও কড়া নিরাপত্তার কারণে তা করতে পারেনি। পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল সে। তার মধ্যেই ধরা পড়ে গেল। পুলিশের বক্তব্য, দিল্লিতে তার কোনও সাহায্যকারী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাহায্যকারীর সন্ধানে শনিবার সারা দিন উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা সীমানায় কড়া তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সঙ্গীর খোঁজ পেতে আবুকে আরও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
দিন কয়েক আগেই বেঙ্গালুরু থেকে আইএস যোগ সন্দেহে এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। গোয়েন্দাদের দাবি, বেঙ্গালুরুর এমএস রামাইয়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক আবদুর রহমান আইএস-এর শাখা সংগঠন আইএসকেপি-র সঙ্গে যুক্ত। নানা ভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তা করার পাশাপাশি অস্ত্র তৈরির ব্যাপারেও তার যোগ রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।