কয়েক দিন ধরেই চলছিল তুষারপাত। ভোরে হঠাৎই দেখা গেল ছুটে আসছে বরফের স্রোত। জ্যোতির্মঠে সেনা হাসপাতালে শুয়ে এমনটাই বললেন গোপাল জোশী। উত্তরাখণ্ডের চামোলীতে ভারত-চিন সীমান্তের শেষ গ্রাম মানা তুষারধসে বিধ্বস্ত শিবিরের ৫৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ছিলেন তিনিও। আজ চার জন শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হওয়ার ফলে ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েদাঁড়িয়েছে আট জনে।
মানার কাছে ‘বর্ডার রোডস অর্গানাইজ়েশন’-এর ওই শ্রমিক শিবিরে ছিলেন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা ৫৫ জন শ্রমিক। তাঁদের ওই শ্রমিক শিবিরে নিয়োগ করেছিল একটিবেসরকারি সংস্থা।
চামোলীরই নারায়ণবাগার এলাকার বাসিন্দা গোপাল জোশী। গত কয়েক মাস ধরে মানায় একটি যন্ত্র চালানোর কাজ করছিলেন তিনি। রাস্তার পাশে কয়েকটি কন্টেনারে থাকছিলেন তাঁরা। সেনা হাসপাতালে শুয়ে বলছিলেন, ‘‘শুক্রবার ভোর ৬টার সময়ে কন্টেনার থেকে বাইরে আসতেই খুব জোরে শব্দ শুনলাম। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি তুষারের স্রোত নেমে আসছে। সঙ্গীদের সতর্ক করতে চেঁচিয়ে উঠলাম। তার পরেই শুরু করলাম ছুটতে। তখনই কয়েক ফুট বরফ জমে গিয়েছিল। তাই জোরে ছোটা যাচ্ছিল না। প্রায় ২ ঘণ্টা পরে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের জওয়ানেরা আমাদের উদ্ধারকরতে আসেন।’’
জোশী ও তাঁর ২২ জন সহকর্মীকে সেনার হেলিকপ্টারে মানা থেকে জ্যোতির্মঠের সেনা হাসপাতালে আনা হয়। জোশীর বুকে ব্যথা আছে। মাথায় সামান্য চোট লেগেছে।
ওই হাসপাতালেই রয়েছেন হিমাচলপ্রদেশের বিপিন কুমার। প্রায় ১৫ মিনিট তুষারে আটকে ছিলেন তিনি। কুমারের বক্তব্য, ‘‘তুষারধস থামার পরে তুষারে বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাই।’’
আর এক শ্রমিক মনোজ ভাণ্ডারীর কথায়, ‘‘দেখলাম পর্বতশৃঙ্গ থেকে তুষারের পাহাড় নেমে আসছে। সকলকে সতর্ক করার জন্য চেঁচিয়ে লোডার যন্ত্রের পিছনে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। কয়েক ফুট তুষার জমে থাকায় মথুরার তিন জন শ্রমিক পালাতে পারলেন না।’’ পঞ্জাবের শ্রমিক জগবীর সিংহ আর তাঁর সঙ্গীরা বদ্রীনাথের দিকে পালিয়েছিলেন।
৫৫ জন শ্রমিকের একাংশ তুষারে চাপা পড়ার আগেই পালাতে পেরেছিলেন। আটকে পড়েন ২২ জন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশকেই উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। পরে হাসপাতালে চার জনের মৃত্যু হয়।
এ দিন সকালেও চার নিখোঁজ শ্রমিকের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল যৌথ বাহিনী। অভিযানে ব্যবহার করা হয় প্রশিক্ষিত কুকুরও। দিল্লি থেকে হেলিকপ্টারে জোশীমঠে পাঠানো হয়েছিল একটি বিশেষ যন্ত্র। ড্রোন থেকে সেই যন্ত্রটির মাধ্যমে চাপা পড়ে থাকা প্রাণী বা অন্য বস্তুর খোঁজ পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত ওই চার শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মহিন্দর পল ও হরমেশ চন্দ হিমাচলপ্রদেশ, জিতেন্দর সিংহ, মনজিৎ যাদব, অলোক যাদব ও অশোক পাসোয়ান উত্তরপ্রদেশ এবং অনিল কুমার ও অরবিন্দকুমার সিংহ উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। বাহিনী জানিয়েছে, উদ্ধার শেষ হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)