Advertisement
E-Paper

নোট-কাণ্ডে তদন্তের দ্বিতীয় ধাপ শুরু

দিল্লির অভিজাত তুঘলক ক্রেসেন্ট এলাকায় বিচারপতি বর্মার বাংলোয় ১৪ মার্চ রাতে আগুন লাগে। দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায়কে দেওয়া রিপোর্টে পুলিশ জানিয়েছে, তখনই বাংলোর একটি স্টোর রুমে তিন-চার বস্তা আধপোড়া নোট পায় তারা।

পোড়া নোট। সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশ করা ভিডিয়োর দৃশ্য।

পোড়া নোট। সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশ করা ভিডিয়োর দৃশ্য।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৫
Share
Save

দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার সরকারি বাংলো থেকে নগদ উদ্ধারের ঘটনায় দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছল সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত। আইনজীবীদের মতে, এই ধাপই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তদন্তের এই ধাপের ফলের উপরেও বিচারপতি বর্মার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। অন্য দিকে দিল্লির দুই সাফাইকর্মী জানিয়েছেন, তাঁরা দিন চার-পাঁচ আগে বিচারপতি বর্মার বাংলোর আশপাশ থেকে পোড়া নোট পেয়েছেন।

দিল্লির অভিজাত তুঘলক ক্রেসেন্ট এলাকায় বিচারপতি বর্মার বাংলোয় ১৪ মার্চ রাতে আগুন লাগে। দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায়কে দেওয়া রিপোর্টে পুলিশ জানিয়েছে, তখনই বাংলোর একটি স্টোর রুমে তিন-চার বস্তা আধপোড়া নোট পায় তারা। এই ঘটনার কথা সামনে আসার পরে আবার বিচারপতি বর্মাকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলি করে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। প্রশ্ন ওঠে, ঘটনার কথা চাপা দিতেই কি তাঁকে বদলি করা হচ্ছে?

এর পরেই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি উপাধ্যায়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। পাশাপাশি বিচারপতি বর্মাকে আপাতত বিচার বিভাগীয় কোনও কাজ করতে না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত কাল রাতে দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির রিপোর্ট ও বিচারপতি বর্মার ব্যাখ্যা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির মনে হয়েছে গভীরতর তদন্ত প্রয়োজন। কারণ, যে স্টোর রুম থেকে আধপোড়া নোট পাওয়া গিয়েছে সেখানে ওই বাংলোর বাসিন্দা, পরিচারক ও বাংলোর তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের কর্মী ছাড়া কারও যাওয়া সম্ভব নয় বলে মত বিচারপতি উপাধ্যায়ের। অন্য দিকে বিচারপতি বর্মা জানিয়েছেন, তিনি বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য স্টোর রুমে নগদ জমা করেননি। অনেকেই যেতে পারেন এমন স্টোর রুমে কেউ নগদ জমা করবেন, এই ধারণাটাই অবাস্তব। বিচারপতি বর্মার দাবি, তাঁর বসবাসের স্থান এবং ওই স্টোর রুম একেবারে আলাদা। মাঝে রয়েছে পাঁচিল।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এটা ছিল অভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রথম ধাপ। ২০১৪ সালে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের এক বিচারককে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় অভ্যন্তরীণ তদন্তের পদ্ধতি তৈরি করেছিল শীর্ষ আদালত।

আইনজীবীদের মতে, যদি সংশ্লিষ্ট হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রাথমিক ভাবে মনে করেন গভীরতর তদন্ত প্রয়োজন এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সেই মত মেনে নেন তবে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়। সেই ধাপে নজরদারি করেন খোদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তখন তিন সদস্যের কমিটি হয়। তাতে থাকার কথা অন্য দুই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং এক হাই কোর্টের বিচারপতির। এ ক্ষেত্রে কমিটিতে রয়েছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচলপ্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জি এস সান্ধওয়ালিয়া এবং কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি অনু শিবরামন।

শীর্ষ কোর্টের তৈরি পদ্ধতি অনুযায়ী, তদন্তের জন্য নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি করতে পারে তিন সদস্যের কমিটি। কিন্তু ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক নীতির কথা মাথায় রেখে তদন্ত করতে হবে। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির কোনও যোগ থাকবে না। সংশ্লিষ্ট বিচারপতি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাবেন। অভিযোগকারীকেও বোঝাতে হবে যে, তদন্ত ন্যায়সঙ্গত পথেই হবে।

শীর্ষ কোর্টের তৈরি পদ্ধতি অনুযায়ী, তদন্ত শেষে কমিটি দুই ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে। প্রথমত, অভিযোগের সারবত্তা নেই। দ্বিতীয়ত, সারবত্তা আছে। সারবত্তা থাকলে কমিটিকে জানাতে হবে, তা বিচারপতিকে সরানোর মতো গুরুতর বিষয় কি না। যদি তা না হয়, তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে পরামর্শ দেবেন। কমিটির রিপোর্টও রেকর্ড করার নির্দেশ দিতে পারেন তিনি।

বিচারপতিকে সরানোর মতো গুরুতর বিষয় হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে ইস্তফা দিতে বা স্বেচ্ছাবসর নিতে বলবেন। তিনি সেই পরামর্শ না মানলে তাঁকে বিচার বিভাগীয় কাজ দেওয়া বন্ধ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে তিন সদস্যের কমিটির তদন্তের ফলের কথা জানাবেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ইতিমধ্যেই বিচারপতি বর্মার মামলা শোনা বন্ধ করা হয়েছে।

অন্য দিকে, আজ দিল্লির দুই সাফাইকর্মী ইন্দ্রজিৎ ও সুরেন্দর জানিয়েছেন, দিন চার-পাঁচ আগে বিচারপতি বর্মার বাংলোর আশপাশে তাঁরা আধপোড়া ৫০০ টাকার নোট খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে বিচারপতির বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কিছু বলতে চাননি তাঁরা। সাফাইকর্মীদের বক্তব্য, তাঁরা কেবল আবর্জনা সাফ করেন।

এ দিন ইম্ফলে নোট-কাণ্ড প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করছে। কমিটির রিপোর্ট পেশ হওয়ার পরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

cash recovered Delhi High Court Supreme Court of India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}