অসমের ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি থাকা ১৭ জন ঘোষিত বিদেশিকে অবিলম্বে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্র যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের অধীনে প্রথম দফায় ১৪ জন হিন্দুকে দেশের নাগরিকত্ব দিল, তখনই অসমের ডিটেনশন সেন্টার বা ট্রানজিট শিবিরে এখনও বন্দি থাকা ১৭ জন ঘোষিত বিদেশিকে অবিলম্বে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ঘোষিত বিদেশি হলেও তাঁদের কোন দেশে পাঠানো হবে? কী ভাবে পাঠানো হবে? সেই দেশ তাঁদের ফেরত নিতে আদৌ আগ্রহী হবে কী না- এমন নানা প্রশ্ন উঠছে।
রাজুবালা দাস বনাম ভারত সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অসম লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি কমিটিকে ডিটেনশন শিবিরগুলি সরেজমিনে ঘুরে এসে রিপোর্ট দিতে বলেছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে এ এস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইঞার বেঞ্চে অসমে ডিটেনশন সেন্টারের পরিস্থিতি নিয়ে শুনানি হয় আজ। রিপোর্টে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে আদালত জানায়, ঘোষিত বিদেশিদের বিরুদ্ধে অন্য কোনও মামলা নেই এবং তাঁদের মধ্যে চার জন দুই বছরের বেশি কারাবাদের মেয়াদও কাটিয়ে ফেলেছেন। তাই তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে সব বিদেশিদেরই যত দ্রুত সম্ভব নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হোক।
কিন্তু তারপরেই প্রশ্ন ওঠে নিম্ন আদালত বা ফরেনার্স ট্রাইবুনাল ওই ১৭ জনকে বিদেশি ঘোষণা করলেও তাঁরা আদতে কোন দেশে ফিরবেন?
বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইঞা জানতে চান, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের কী এমন কোনও চুক্তি বা বন্দোবস্ত রয়েছে, যেখানে এই ধরণের প্রত্যার্পণ সম্ভব? তা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
সরকারের কাছে সেই জবাব চেয়ে দু’মাসের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। পরের শুনানি হবে ২৬ জুলাই।
উল্লেখ্য এই রাজুবালা দাসের দায়ের করা মামলার জেরেই, ২০২০ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল ডিটেনশন সেন্টারগুলিতে ২ বছরের মেয়াদ কাটিয়ে ফেলা সকলকে জামিন দিতে হবে। তার জেরেই রাজ্যের ডিটেনশন শিবির থেকে ছাড়া পেয়ে শ’য়ে শ’য়ে সন্দেহভাজন বিদেশি জামিনে বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। এ বার একই মামলার ভিত্তিতে রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট।
বিশিষ্ট আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জটিল ও সংবেদনশীল মোড়ে রয়েছে। এ ভাবে যথেচ্ছ বিদেশি তকমা দিয়ে আটকে রাখার ফলশ্রুতি কী হতে পারে তা আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নে প্রমাণিত। এখন অসম সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন আইনের অধীনে, কোন দেশের সঙ্গে, কোন চুক্তির মাধ্যমে ওই ঘোষিত বিদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে?
সন্দেহভাজন ভোটারদের নিয়ে কাজ করা আইনজীবী আমন ওয়াদুদ বলেন, ২০১৩ সালের আগে পুশ ব্যাকের পদ্ধতি চালু ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যার্পণের ক্ষেত্রে যে দেশে পাঠানো হবে তাদের সম্মতি প্রয়োজন। অসমে বন্দিদের ক্ষেত্রে তাঁদের দেশ তো বাংলাদেশ নয়। দেখা যাক কেন্দ্র এই প্রশ্নের কী সমাধানসূত্র আদালতে জমা দেয়।
সারা অসম বাঙালি ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অমৃতলাল দাসের কথায়, একেবারে শুরুতেই যে প্রশ্নের জবাব তৈরি থাকার কথা ছিল, এত বছর পরে অন্তত সুপ্রিম কোর্ট সেই জবাব চাইল সরকারের কাছে। হরদম বিদেশি ঘোষণা করা হচ্ছে অসমের ভাষিক সংখ্যালঘুদের। কিন্তু তাঁরা তবে কোন দেশের সেই জবাব কিন্তু নেই। তিনি জানান, এমনই অপরিকল্পিত নীতির শিকার গোয়ালপাড়ায় বন্দি উত্তম দাস। তাঁকে বিদেশি ঘোষিত করে পুশ ব্যাক করে এসেছিল পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি বাংলাদেশে ঢুকতে পারেননি। ফের তাঁকে ধরা হয়। এবার জোড়া মামলা দিয়ে বন্দি রাখা হয়েছে তাঁকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে অসুস্থ উত্তমবাবুকে ফের কোথায় পাঠানো হবে- তার জবাব কারও জানা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy