সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনকে তাদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতিতে ইভিএমের ‘ব্যবহৃত মেমরি যাচাই’ এবং পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার আবেদনের জবাব দিতে বলেছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কমিশনের মতামত চেয়েছে।
গত দু’দশকে ভারতে বিভিন্ন নির্বাচনের পরেই বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। তার উদাহরণ দিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর তরফে ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিতে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। আবেদনে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘ব্যবহৃত মেমরি যাচাই’ সম্পর্কে কমিশনের সাধারণ কার্যপ্রণালীর (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল) বিষয়টি। সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছে।
সেই মামলার শুনানিতে দুই বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার কমিশনকে বলেছে, ‘‘দয়া করে ডেটা (তথ্য) মুছে ফেলবেন না এবং পুনরায় লোড করবেন না। শুধু পরীক্ষা করতে দিন।’’ শুনানির সময় এডিআরের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘‘আমরা চাইছি যে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নির্বাচন কমিশন যেন তাদের সাধারণ কার্যপ্রণালীর (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ করে। আমরা চাই, সফ্টঅয়্যার এবং হার্ডঅয়্যারে কোনও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ হয়েছে কি না তা দেখার জন্য ইভিএমের সফ্টঅয়্যার এবং হার্ডঅয়্যার পরীক্ষা করা উচিত।’’
প্রসঙ্গত, ইভিএম মামলায় গত ২৬ এপ্রিল নির্দেশ ঘোষণা করতে গিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেল) নিয়ে সংশয় দূর করতে সিম্বল লোডিং ইউনিটকে সংরক্ষণ করতে হবে। গণনায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রার্থী তা যাচাই করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খন্না এবং বিচারপতি দত্তের বেঞ্চ সমস্ত ভোটের বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।
ভিভিপ্যাট পদ্ধতির মাধ্যমে কাগজের স্লিপ-সহ বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) পাওয়া ভোটের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের (ক্রস-ভেরিফিকেশন) দাবিতে ওই আর্জির শুনানির পরে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, ভোটের ফল ঘোষণার সাত দিন পরে নির্দিষ্ট অঙ্কের ‘ফি’ জমা দিয়ে ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনার আবেদন জানানো যেতে পারে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ‘সিম্বল লোডিং ইউনিট’ সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে। প্রশান্ত জানান, গণনার পরে ৪৫ দিন ওই ইউনিটকে সংরক্ষণ করার পরে ব্যবহৃত মেমরি মুছে দিয়ে নতুন তথ্য লোড করা হয়। ইভিএমের সফ্টঅয়্যার এবং হার্ডঅয়্যার পরীক্ষার সুযোগ নেই কেন, সে প্রশ্নও তোলেন এডিআরের ওই আইনজীবী।
প্রশান্তের যুক্তি শোনার পরে প্রধান বিচারপতি খন্না গত ২৬ এপ্রিলের রায়ের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘আমরা চাইনি যে গণনা না হওয়া পর্যন্ত কোনও ঝামেলা হয় (আগের আদেশের মাধ্যমে)। একই সময়ে, আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, কারও কী বিষয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। আমরা চাইনি যে ইভিএমে কারচুপি করা হোক। আমরা চেয়েছিলাম, যে কোনও বিকৃতি (ট্যাম্পারিং) হয়েছে কি না তা ইঞ্জিনিয়াররা পরীক্ষা করুক।’’ এর পরেই কমিশনকে তাদের সাধারণ কার্যপ্রণালী মেনে এ সংক্রান্ত পরীক্ষা সম্পর্কে মতামত জানতে চায় কমিশন।
এডিআরের তরফে মঙ্গলবার, সাম্প্রতিক মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগের উদাহরণ দিয়ে জানানো হয়, প্রতিটি বিধানসভায় অন্তত ২০০টি ভিভিপ্যাট মেশিন থাকলেও ৫টির বেশি গণনা হয় না। তাদের মতে, ভিভিপ্যাট স্লিপ সংগ্রহ করে ব্যালট বাক্সে ফেলার সুযোগ দেওয়া উচিত ভোটারদের। জালিয়াতির সম্ভাবনা আটকাতে প্রতিটি ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ইভিএমের ‘মেমরি চেকিং’ এবং পরীক্ষার (সফ্টঅয়্যার এবং হার্ডঅয়্যার) সুযোগ।