Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টেও মুখ পোড়ালেন অধীর

মন্ত্রিত্ব গিয়েছে দু’বছর হতে চলল। তবু মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সরকারি বাসভবন নানা অছিলায় আঁকড়ে ছিলেন এত দিন। ঘর থেকে মালপত্র বার করে দেওয়ার পরও জেদ ছাড়েননি। আজ জরুরি ভিত্তিতে আর্জি ঠুকেছিলেন শীর্ষ আদালতে। সেখানেও জুটল যাচ্ছেতাই রকমের ভর্ৎসনা।

মনে ধরেনি। হুমায়ুন রোডের বাড়ি দেখে অধীর চৌধুরী।

মনে ধরেনি। হুমায়ুন রোডের বাড়ি দেখে অধীর চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

মন্ত্রিত্ব গিয়েছে দু’বছর হতে চলল। তবু মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সরকারি বাসভবন নানা অছিলায় আঁকড়ে ছিলেন এত দিন। ঘর থেকে মালপত্র বার করে দেওয়ার পরও জেদ ছাড়েননি। আজ জরুরি ভিত্তিতে আর্জি ঠুকেছিলেন শীর্ষ আদালতে। সেখানেও জুটল যাচ্ছেতাই রকমের ভর্ৎসনা। এমনকী বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরীর মানমর্যাদার বোধ নিয়েই সরাসরি প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট।

এ বার কী বলছেন অধীরবাবু?

শীর্ষ আদালতে ধাক্কা খেয়েও তাঁর বক্তব্য, ইন্ডিয়া গেটের কাছে হুমায়ুন রোডে যে বাংলোটি তাঁর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে সেটি বাসযোগ্য নয়। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানিয়েছিলেন যে হুমায়ুন রোডের বাসভবনটি বাসযোগ্য। কিন্তু গত পরশু সেখানে গিয়ে দেখি জল ও বিদ্যুতের সংযোগ নেই। তা ছাড়া পূর্ত বিভাগও লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাড়িটি বাসযোগ্য করে তুলতে তাদের সাত দিন সময় লাগবে। তাই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলাম।’’ যদিও আবেদনটি এ দিন শুনানিতে ওঠামাত্রই খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর। সুপ্রিম কোর্টে আর্জি খারিজ হওয়ায় ১৪ নিউ মোতি বাগের বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকা মালপত্র সরিয়ে আনা ছাড়া আর কোনও রাস্তা রইল না অধীরবাবুর সামনে। তবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে রইল প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ। প্রাক্তন মন্ত্রীকে তীব্র ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি আজ বলেন, ‘‘আপনি এক জন সাংসদ! নিজের পদের কিছু তো মর্যাদা রাখুন!’’

কোনও সাংসদদের প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের এ-হেন পর্যবেক্ষণের নজির হালফিলে নেই। বিরোধীরা পরের কথা, কংগ্রেসের নেতারাই মনে করছেন, অধীরবাবুর বাড়াবাড়ির কারণেই এই অপমানের মুখোমুখি হতে হল তাঁকে। নইলে শুরুতে তাঁর প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও সহানুভূতি ছিল। কিন্তু সরকারি বাসভবন ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে হম্বিতম্বি করে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট সামনে। তার আগে শীর্ষ আদালতের এই কড়া ভর্ৎসনায় রাজনৈতিক ভাবেও অধীরের মুখ পুড়ল বলে মনে করছেন তাঁরা।

প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চে বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং আর ভানুমতীও ছিলেন। তবে বহরমপুরের সাংসদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণই ছিল ঝাঁঝালো। অধীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনি এক জন সাংসদ। কিন্তু যে বাসভবনে আপনি এখন রয়েছেন তা আপনার প্রাপ্য নয়। তার পরেও আপনি আবেদন জানাচ্ছেন। কী ধরনের আবেদন এটা! আপনি এখনই বাড়ি খালি করুন।’’ শুধু তাই নয়, আদালত তাঁকে এ-ও বলে যে, ‘‘আপনি কী বোঝাতে চাইছেন? আপনাকে বাড়ি ছাড়তে বললে তবেই ছাড়বেন? নইলে নয়!’’

ইউপিএ জমানায় রেল প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১৪ নিউ মোতি বাগের বাড়িটি বরাদ্দ করা হয়েছিল অধীরবাবুকে। মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পরই বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। বাড়িটি বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌরকে বরাদ্দও করেছিল সরকার। কিন্তু অধীরবাবু বাড়িটি না ছাড়ায় রাঠৌরকে অন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। এই অবস্থায় অধীরবাবুকে শেষমেশ ইন্ডিয়া গেটের কাছে হুমায়ুন রোডে একটি বাংলো বরাদ্দ করে সরকার। কিন্তু সেটি বাসযোগ্য অবস্থায় নেই বলে দাবি করে অধীরবাবু ফের নিউ মোতি বাগের বাড়িটি ছাড়তে সময় চান। সে জন্য প্রথমে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু হাইকোর্ট তা খারিজ হলে তিনি উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। সেখানেও তাঁকে বিনা বাক্যব্যয়ে হুমায়ুন রোডের বাসভবনে উঠে যেতে বলা বয়। বহরমপুরের নাছোড় সাংসদ এর পর আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান।

কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার মতে, গোটা বিতর্কের মাঝে এই বিষয়টি প্রায় হারিয়ে গিয়েছে যে লোকসভার চার বারের সাংসদ হিসেবে অধীরবাবুর একটি সরকারি বাংলো প্রাপ্যই। এবং নিউ মোতি বাগের বাংলোর তুলনায় তা আড়েবহরে খুব বেশি ছোটও হওয়ার কথা নয়। আর সেই কারণেই প্রথম যে দিন নিউ মোতি বাগের বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন এস্টেট বিভাগের কর্মীরা অধীরবাবুর মালপত্র উঠোনে এনে ফেলেছিলেন, সে দিন তিনি কিছুটা হলেও সহানুভূতি পেয়েছিলেন। অধীরবাবুর সম্ভবত এই ধারণা হয়েছিল যে, এতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়েছে। সেই কারণে বিষয়টিকে তিনি জেদাজেদির স্তরে নিয়ে যান। এমনকী সাংসদের অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনার জন্য গত কাল স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে চিঠি লিখে অনুমতিও চান। তাঁর এই আচরণ সামগ্রিক ভাবে আদালত ভাল চোখে দেখেনি। কংগ্রেসেরও অনেকে মনে করছেন, এ সবের জেরে অধীরবাবুর ভাবমূর্তিতে যে আঁচ পড়ল তা প্রায় অপূরণীয়। একটু সহিষ্ণু ভাবে এগোলে হয়তো এই হেনস্থা ও অস্বস্তি এড়াতে পারতেন তিনি। ফাইল চিত্র

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy