Advertisement
E-Paper

Pegasus Row: জাতীয় নিরাপত্তার নামে বার বার ছাড় নয়, পেগাসাস নিয়ে তদন্ত কমিটি বানাল সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে যুক্তি দিয়েছে, সরকার সর্ব ক্ষণ নজর রাখছে ভাবলে নাগরিকদের শিড়দাঁড়া বেয়ে হিমশীতল স্রোত নেমে যেতে বাধ্য। তাই তদন্ত দরকার।

পেগাসাস তদন্তে কমিটি গড়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

পেগাসাস তদন্তে কমিটি গড়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৬
Share
Save

প্রশ্ন ছিল একটাই— ফোনে আড়ি পাততে মোদী সরকার কি নিজেরাই পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনেছে?

সেই প্রশ্ন এড়াতে মোদী সরকার ‘জাতীয় নিরাপত্তা’-কে ঢাল করেছিল। কেন্দ্র যুক্তি দিয়েছিল, মোদী সরকার পেগাসাস কিনেছে কি না, তা জাতীয় নিরাপত্তার কারণে বলা সম্ভব নয়। অর্থাৎ কেনেনি, সেটাও বলা অসম্ভব।

বোধ হয় সেটাই কাল হল। আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, প্রতিবার জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে রেহাই মিলবে না!

মোদী সরকারকে কার্যত তদন্তের মুখে বসিয়ে দিয়ে আজ শীর্ষ আদালত নিজেই পেগাসাস কাণ্ডে তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিল। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ মনে করিয়ে দিল, নির্দিষ্ট ভাবে পেগাসাসের আড়ি পাতার অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার কখনও অস্বীকার করেনি। ফলে বাধ্য হয়েই আদালতকে তদন্তকমিটি তৈরি করতে হচ্ছে।

ইজ়রায়েলে তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেন্দ্র বা কোনও রাজ্য সরকার কিনেছে কি না, তা কাজে লাগিয়ে সরকার দেশের নাগরিকদের ফোনে আড়ি পেতেছে কি না, তদন্ত করে তা নির্ধারণ করাটাই হবে সুপ্রিম কোর্টের কমিটির প্রধান কাজ। আড়ি পাতা হয়ে থাকলে তা আইন অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অলোক জোশী ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সন্দীপ ওবেরয়। প্রযুক্তিগত দিকগুলি খতিয়ে দেখতে আরও তিন জন প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও তৈরি হয়েছে।

পেগাসাস কাজে লাগিয়ে রাহুল গাঁধী থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোবাইলে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্টের তদন্তের পরে আজ রাহুল তাকে স্বাগত জানিয়ে ফের অভিযোগ তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশ ছাড়া পেগাসাস কেনা বা আড়ি পাতা হতে পারে না। কারণ শুধুমাত্র কোনও দেশের সরকার বা সরকারি সংস্থাকেই পেগাসাস বেচা হয়েছিল। তাঁর যুক্তি, “প্রধানমন্ত্রী কি নিজেই অন্য দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের দেশের নাগরিকদের নিশানা করেছেন? যার মধ্যে বিচারপতি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতারা রয়েছেন। তা হলে এটা দেশের উপরে হামলা। জরুরি প্রশ্ন হল, আড়ি পেতে পাওয়া তথ্য কি অন্য দেশের হাতে রয়েছে?” বিচারপতি থেকে নির্বাচন কমিশনার, বিরোধী দলের নেতাদের তথ্য যদি প্রধানমন্ত্রীর ডেস্কেও এসে থাকে, তা হলে সেটা ‘দণ্ডনীয় অপরাধ’ বলে রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের ঊর্ধ্বে নন।

জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’ উপন্যাসে ‘বিগ ব্রাদার’ সকলের উপরে নজর রাখত। এ দেশে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের নেতা থেকে সমাজকর্মী, শিল্পপতি, বিচারপতি থেকে আইনজীবী, এমনকি বিজেপিরই মন্ত্রীদের মোবাইল ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠার পরে সেই আতঙ্কই তৈরি হয়েছিল। সমালোচকরা বলেছিলেন, এ তো সেই একই আতঙ্কের পরিস্থিতি। ‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ’! প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের ৪৬ পৃষ্ঠার রায় অরওয়েলের সেই উপন্যাসের একটি বাক্য দিয়েই শুরু হয়েছে। ‘যদি তুমি কিছু গোপন রাখতে চাও, তা হলে নিজের কাছ থেকেও লুকিয়ে রাখো’।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে যুক্তি দিয়েছে, সরকার সর্ব ক্ষণ নজর রাখছে ভাবলে নাগরিকদের শিড়দাঁড়া বেয়ে হিমশীতল স্রোত নেমে যেতে বাধ্য। তাই তদন্ত দরকার। ফোনে আড়ি পাতার ফলে ‘ব্যক্তি পরিসরের অধিকার’ ও ‘বাক্স্বাধীনতা’ খর্ব হয়েছে বলে নালিশ। কারণ পেগাসাস শুধু মোবাইলের তথ্যই চুরি করে না, মোবাইলের ক্যামেরা, ভয়েস রেকর্ডারও কাজে লাগিয়ে আশেপাশের সমস্ত দৃশ্য, শব্দ চুরি করতে পারে। সে কারণেও তদন্ত প্রয়োজন। সর্বোপরি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারই এখানে জড়িত বলে অভিযোগ। এ দিকে মোদী সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। অথচ দেশের নাগরিকদের উপরে নজরদারিতে বিদেশি রাষ্ট্র ও বিদেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থার যোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কারণ পেগাসাস তৈরি করেছে ইজ়রায়েলের একটি সংস্থা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত এড়াতে কেন্দ্র নিজেই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। আদালত সে প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে।

বিরোধীরা একজোট হয়ে সংসদের বাদল অধিবেশন অচল করে রাখলেও মোদী সরকার এ নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়নি। সরকার শুধু বলেছিল, কারও ফোনে বেআইনি ভাবে আড়ি পাতা হয়নি। আজ রাহুল গাঁধী কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে জানিয়েছেন, তাঁরা ফের নভেম্বরের সংসদ অধিবেশনে পেগাসাস নিয়ে আলোচনার দাবি তুলবেন। অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গেও কথা বলবেন। কিন্তু সরকার হয়তো গত অধিবেশনের মতোই মুখ খুলবে না।

পেগাসাস নিয়ে মোদী সরকারের এই মুখে কুলুপ এঁটে থাকার দিকে আঙুল তুলেছেন প্রধান বিচারপতিও। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্র যথেষ্ট সময় সুযোগ পেয়েছিল। কেন্দ্র নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলে আদালতের বোঝা কমত। বিচারবিভাগীয় তদন্তের বিরুদ্ধে ঢালাও নিষেধাজ্ঞার ডাক দেওয়া যায় না। আদালতকে নীরব দর্শক করে রাখার চেষ্টার বদলে কেন্দ্রের উচিত ছিল নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেওয়া।

Pegasus Snooping Row Supreme Court Investigation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।