সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
মানসিক অবসাদে ভুগছেন এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। তৃতীয় সন্তানকে মানুষ করার মতো আর্থিক, শারীরিক বা মানসিক সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মহিলা শীর্ষ আদালতের কাছে গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সোমবার গর্ভপাতের অনুমতি দেয়। কিন্তু গত কাল এমসের একটি নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে জানানো হয়, গর্ভের ওই ভ্রূণের প্রাণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান সরকারি প্রতিনিধি। এতে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। তাদের প্রশ্ন, রায় ঘোষণার পরে কেন ওই নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেওয়া হল? ক্ষোভ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘কোন আদালত ভ্রূণের হৃৎস্পন্দন থামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেবে।’’
দেশের গর্ভপাত বিষয়ক আইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত কোনও বিবাহিত
মহিলা গর্ভপাত করাতে পারেন। তার পরে গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। তাই শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে গত ৫ অক্টোবর শীর্ষ আদালত এমসকে নির্দেশ দেয়, একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে মহিলার শারীরিক অবস্থার পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দিতে হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সোমবার, ৯ অক্টোবর শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি বিভি নাগরত্নের বেঞ্চ ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তার পরের দিনই, ১০ অক্টোবর একটি নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতি ডি
ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে পেশ করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) ঐশ্বর্যা ভাটি। তিনি বলেন, ভ্রূণের জীবন পাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গর্ভপাতের নির্দেশ দেওয়া হলে সেটা ‘ভ্রূণ-হত্যা’ করা হবে। রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য আবেদন জানানো হয় কেন্দ্রের তরফে।
গত কাল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে এমসের চিকিৎসকদের গর্ভপাত প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এ-ও বলে, ‘‘আপনারা যথাযথ পদ্ধতি মেনে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানান। যে বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে, আমরা তাদের বিষয়টি জানাব। এমসের চিকিৎসকেরা সন্দিহান হয়ে পড়ছেন। কাল সকালে নতুন বেঞ্চ গড়া হবে। এমসের চিকিৎসকদের আপাতত অপেক্ষা করতে বলুন।’’
এর পর আজ শুনানি শুরু হয়। ক্ষুব্ধ বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি বিভি নাগরত্ন বলেন, ‘‘দু’দিনের মধ্যে চিকিৎসকেরা যদি সচেতন হতে পারেন, তা হলে আগে হলেন না কেন? আগের রিপোর্টে কেন স্পষ্ট ভাবে জানানো হল না?’’ দুই বিচারপতির বেঞ্চ ঐশ্বর্যা ভাটির কাছে প্রশ্ন করেছে, ‘‘কেন ওদের আগের রিপোর্ট এতটা অস্পষ্ট ছিল?’’ বিচারপতি কোহলি ও বিচারপতি নাগরত্ন জানিয়েছেন, যাঁরা ওই মহিলাকে পরীক্ষা করেছেন, এমসের সেই চিকিৎসকদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। আগের বার একটি ‘অস্পষ্ট’ রিপোর্ট দিয়ে পরে নতুন একটি রিপোর্টে বলা হল, ভ্রূণের বাঁচার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারপতি কোহলি বলেন, ‘‘...যে ভ্রূণের প্রাণ রয়েছে, তার হৃৎস্পন্দন কোন আদালত বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেবে? আমি তো নিজের কথা বলতে পারি, এমন নির্দেশ দেব না।’’
দুই বিচারপতির বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, যে ভাবে কেন্দ্র গোটা ঘটনাটি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সামনে পেশ করেছে, সেটাও নিন্দনীয়। বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘‘আদালতের একটি বেঞ্চ যখন কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কী ভাবে একই আদালতের অন্য বেঞ্চের সামনে আবেদন জানানো হয়? ভারত সরকার যদি এই কাজ করে, তা হলে তো যে কোনও বেসরকারি আবেদনকারী এই কাজ করা শুরু করবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট। আমরা একটাই আদালতের আলাদা আলাদা বেঞ্চ। ভারত সরকারের এই ভূমিকা আমি সমর্থন করতে পারছি না।’’
আজ শুনানি চলাকালীন, ভাটি সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বেঞ্চের সামনে ব্যাখ্যা করেন। ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলে আদালত। নতুন রিপোর্টে ভ্রূণ সম্পর্কে কী লেখা হয়েছে, তা বোঝানো হয়েছে তাঁদের। মহিলার আইনজীবীকে জানানো হয়েছে, তাঁর মক্কেল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী চান, সে কথা হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাতে হবে। বেঞ্চ বলেছে,
‘‘আমরা কোনও ভুল বোঝাবুঝি চাই না। একটি দুর্মূল্য জীবন নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে। আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy