প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
দিনভর কাজ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন, আড্ডাও দেন। তার পরে চণ্ডীপাঠ সেরে ঘুমোতে যান। আবার উঠে কাজে বেরিয়ে পড়েন। কাঁধে বিপুল দায়িত্ব। সবই একসঙ্গে পালন করে চলেছেন। এমন রাজনীতিক আর দেখা যায় না।
বাবু জগজীবন রাম সম্পর্কে অনেকটা এই রকম বলা হত। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায় দিল্লির রাজনৈতিক আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই। একেবারে আদ্যন্ত রাজনীতিক। তাঁর জন্য আর অন্য কোনও পরিচয় খাটে না। ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান তাঁর নিজের বিষয় কিন্তু অর্থনীতির সমস্যায় তাঁর ডাক পড়ত। অর্থ মন্ত্রক, যো্জনা কমিশন সবই সামলেছেন। আর রাজনৈতিক ব্যাপারে তো কথাই নেই! অসম্ভব স্মৃতিশক্তি, সংখ্যা-তথ্য একেবারে মুখস্থ! এই ভাবেই উনি বহু কালের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’।
বাংলা কংগ্রেস হয়ে প্রণবদা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের হাত ধরে কংগ্রেসে আসার অল্প দিনের মধ্যেই আমার সঙ্গে পরিচয়। কী একটা কাজে এক দিন বিধানসভায় এসেছিলেন, সে দিনই প্রথম দেখা। সিদ্ধার্থবাবুই ওঁকে দিল্লি পাঠালেন, উনিও গিয়ে ইন্দিরা গাঁধীর আস্থা অর্জন করে নিলেন। তার পরে দিল্লি এবং কলকাতায় কত কাজে, কত আড্ডায় প্রণবদা’র সঙ্গে থেকেছি। গভীর রাত অবধি আড্ডা দিতেন, পুরনো গল্প হত। তার মধ্যেই কাজও মেটাতেন। সরকারে থাকার সময়ে যখন তখন ওঁর ডাক পড়ত সমস্যা মেটাতে। কত কী যে মনে রাখতে পারতেন মানুষটা! এক বার আড্ডার ছলেই বলেছিলেন, ‘‘আরে, পড়ে পড়ে চণ্ডীটাও তো মুখস্থ হয়ে গেল!’’
ঢাকুরিয়ায় কংগ্রেস সমর্থকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।—নিজস্ব চিত্র।
তাঁর সঙ্গে এত স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তার মধ্যে থেকে বিশেষ কিছু তুলে আনা মুশকিল। ওঁর শেভিং কিট দিয়ে আমি দাড়ি পর্যন্ত কেটেছি! খাওয়া-দাওয়া, মেজাজে একেবারে নির্ভেজাল বাঙালি। কলকাতায় থাকলে তো বটেই। এক বার কলকাতায় এসেছেন, দেখা করতে গিয়েছি। বললেন, ‘‘অনেক দিন জানিস গলদা চিংড়ি খাওয়া হয় না!’’ বললাম, এটা কোনও ব্যাপার নয়। কাল আপনি আমার বাড়িতে আসুন।
আরও পড়ুন: ভালবাসতেন, চোখের জলও ফেলিয়েছিলেন
বাংলার কংগ্রেস রাজনীতি থেকে বরকত গনি খান চৌধুরী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা নিজ গুণে মহীরূহ হয়েছেন। তুলনা করতে চাই না। কিন্তু প্রণবদা’র জীবনই ছিল পুরোপুরি রাজনীতির উপরে। আবার বলব, আদ্যন্ত রাজনীতিক।
আরও পড়ুন: লোকসভায় লড়া ঠিক হবে কি না জানতে চেয়েছিলেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy