তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
মহুয়ার পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ থেকে তিনি এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন। বলেন, ‘‘মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এক জন মহিলাকে বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে ভাবে হেনস্থা করল, তাতে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল। দল মহুয়ার পাশে ছিল, আছে। বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি প্রমাণিত।’’
বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন মহুয়া। জানান, এথিক্স কমিটি ভাল করে যাচাই না করেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষের করেছে এবং শাস্তি নিশ্চিত করেছে। টাকা নেওয়া বা উপহার নেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই কোথায়। তিনি বলেন, ‘‘মোদী সরকার আমাকে চুপ করিয়ে দিতে চাইছে। মহিলা সাংসদকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আগামী ছ’মাসও হেনস্থা করা হবে।’’
মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হল। স্পিকার এ বিষয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাব পাশ করান লোকসভায়।
বিজেপির তরফে সাংসদ অপরাজিতা সরঙ্গি বলেন, ‘‘মহুয়াকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সুযোগ পেলেও তখন কিছু বলেননি। ওয়াক আউট করে গিয়েছিলেন।’’
লোকসভার সদস্যদের উদ্দেশ্যে স্পিকারের আর্জি, সকলে যেন তাঁদের প্রশ্ন নিজেই তৈরি করেন। অন্য কাউকে প্রশ্ন তৈরি করতে যেন দেওয়া না হয়। এই নিয়ম না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন স্পিকার।
মহুয়াকে বলতে না দেওয়ার তৃণমূলের তরফে বলতে শুরু করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, আগে কী হয়ে গিয়েছে, তা এখন যুক্তি হতে পারে না। মহুয়াকে বলতে না দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কল্যাণ জানান, দর্শন হিরানন্দানির বয়ানই নেওয়া হয়নি।
মহুয়া মৈত্রকে বলার সুযোগ দিলেন না স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি জানান, মহুয়া আগে নিজের বক্তব্য জানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই আবার তাঁকে সুযোগ দেওয়া হবে না। পুরনো উদাহরণ টেনে এই যুক্তি দিয়েছেন স্পিকার। মহুয়া বলার জন্য একাধিক বার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তৃণমূলের তরফে তিনি কথা বলবেন না। কথা বলবেন মহুয়া নিজে। এ ভাবে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট নিয়ে মহুয়াকে বলার সুযোগ করে দিতে চাইছে তৃণমূল। বিজেপি তার বিরোধিতা করেছে।
বিজেপি সাংসদ হীনা গাবিত জানান, তিনি দু’ঘণ্টাতেই এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পড়ে ফেলেছেন। এ বিষয়ে লোকসভার অতীতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি জানান, আগেও লোকসভা থেকে ঘুষ নেওয়ার অপরাধে সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘১২টায় রিপোর্ট পেশ করে ২টোয় তা নিয়ে আলোচনা স্বাভাবিক নয়। তিন-চার দিন রিপোর্ট পড়ার জন্য সময় দিলে পৃথিবী উল্টে যাবে না। বিচারব্যবস্থার সাধারণ নিয়ম এখানে মানা হচ্ছে না। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে কথাই বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া, এথিক্স কমিটি শুধু সুপারিশ করতে পারে। কী সাজা হবে, তা তারা ঠিক করে দিতে পারে না।’’
অধীর লোকসভায় স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এত বড় চিঠি এত কম সময়ে পড়া সম্ভব নয়। ভাল করে পড়ে এটা নিয়ে চর্চা করা উচিত। আদালতেও কারও সাজা হলে বিচারক আসামির বক্তব্য শোনেন। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। এই সংক্রান্ত বিবেচনা আমি আপনার উপরেই ছাড়ছি।’’
দুপুর ২টো পর্যন্ত লোকসভা মুলতুবি রাখা হয়েছিল। আবার অধিবেশন শুরু হয়েছে। স্পিকার ওম বিড়লা ভাষণ দিচ্ছেন।
মহুয়ার বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট প্রসঙ্গে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখলেন কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী। তিনিও সময় চেয়েছেন। চিঠিতে অধীর জানিয়েছেন, এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পড়ার জন্য লোকসভার সদস্যদের অন্তত তিন থেকে চার দিন সময় দেওয়া দরকার। তাই আলোচনার জন্য অন্য কোনও তারিখ দেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, শুক্রবারের অন্তত তিন দিন পর কোনও তারিখ জানান স্পিকার।।
রিপোর্টে মহুয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে লোকসভার এথিক্স কমিটি। বলা হয়েছে, মহুয়া যে অবৈধ ভাবে টাকা নিয়েছেন, তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেটি অস্বীকার করার জায়গাই নেই। সাংসদ হিসাবে তাঁর আচরণ অনৈতিক। সেই কারণে লোকসভা থেকে তাঁকে বহিষ্কৃত করা উচিত বলে মনে করে এথিক্স কমিটি। পাশাপাশি তিনি যে অপরাধ করেছেন, সরকারের তরফে তার আইনি তদন্তও করা দরকার।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকসভায় আমরা ১৪০ কোটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি। দেশের সুরক্ষার বিষয়ে কোনও দল আলাদা করে গুরুত্ব পায় না। বিজেপি হোক, তৃণমূল হোক বা কংগ্রেস হোক, দেশের সুরক্ষার বিষয়ে কেউ বেইমানি করলে তাঁর শাস্তি হবেই।’’
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান বলেন, ‘‘আমরা এথিক্স কমিটির রিপোর্টের হার্ড কপি চেয়েছি। ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছি রিপোর্টটি পড়ে দেখার জন্য। আমি মনে করি, মহিলা হিসাবে আমাদের আরও খানিকটা সম্মান প্রাপ্য। মহুয়াকে নিজের হয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।’’
স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার পর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৪৯৫ পৃষ্ঠার একটা চিঠি। তা পড়ে দেখার জন্য ন্যূনতম সময় দরকার। আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছি। পড়াশোনা করে এসে এ বিষয়ে আলোচনা করব। আলোচনাটাই তো মূল প্রাধান্য পাওয়ার কথা। এখনই রিপোর্ট দিয়ে এখনই পদক্ষেপ করতে হবে— এই মানসিকতার আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি।’’
এথিক্স কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার পর লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখেছেন। তিনি ওই রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন।
মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ করার সুপারিশ করেছে এথিক্স কমিটি। ৪৯৫ পৃষ্ঠার রিপোর্টে সে কথাই বলা হয়েছে। মহুয়া যা করেছেন, তার জন্য তাঁর গুরুতর শাস্তি হওয়া দরকার বলেও মনে করেন কমিটির সদস্যেরা।
এথিক্স কমিটির রিপোর্ট লোকসভায় জমা পড়ার পর তুমুল শোরগোল শুরু হয়। হইচইয়ের মাঝে সভা মুলতুবি করে দেওয়া হয়। দুপুর ২টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy