সাব-ইনস্পেক্টর সন্তোষ। দূরে বসে সেই তরুণী। (ডান দিকে) তাঁকে নিরস্ত করে পাহাড় থেকে নামিয়ে আনছেন সন্তোষ। ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
থানার ফোনটা বেজে উঠতেই ধরলেন সাব-ইনস্পেক্টর সন্তোষ। ফোনের ও পার থেকে তাঁর ঊর্ধ্বতন আধিকারিক সুধীর শুধু বললেন, ‘‘এখনই কুঠিরামাল কুড়ি এলাকায় যান। একটি মেয়ে আত্মহত্যার জন্য পাহাড়ের কিনারে বসে আছে।’’ খবরটি পেয়ে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি সন্তোষ। এএসআই আব্বাসকে নিয়ে ওই এলাকায় পৌঁছে যান।
ফোনে ঠিক যেমন বলেছিলেন স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও), ঠিক তেমনই দৃশ্য দেখতে পেলেন সন্তোষ। বছর ছাব্বিশের এক তরুণী পাহাড়ের কিনারায় বসে রয়েছেন। পাহাড়ের নীচে তখন ভিড়। সবাই চিৎকার করে মেয়েটিকে নেমে আসার জন্য অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে নিরস্ত করা যাচ্ছিল না। পরিবারের সদস্যরা এগোতে গেলেই তরুণী পাহাড় থেকে ঝাঁপ মারবেন বলে হুমকি দিচ্ছিলেন।
সবাই যখন ব্যর্থ, মেয়েটিকে আত্মহত্যা থেকে নিরস্ত করার দায়িত্ব নেন সাব-ইনস্পেক্টর সন্তোষ। তরুণীর থেকে পাঁচ ফুট দূরে একটি পাথরের উপর বসেন। সন্তোষ বলেন, “প্রথমে ওর পরিচয় জানলাম। কেন আত্মহত্যা করতে চাইছে, তা-ও জানলাম। ধীরে ধীরে ওর মনকে কথোপকথনের মাধ্যমে ঘোরানোর চেষ্টা করলাম। মনে একটা সংশয় ছিল, পারব তো নিরস্ত করতে! কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেলেছিলাম।”
সন্তোষ বলেন, “তরুণীকে বললাম, আমারও দুই মেয়ে আছে। তোমার এই ঘটনা ওরা শুনেছে। আমাকে বলেছে, বাবা, তুমি ওই মেয়েটিকে বাঁচাও। ওদের কথা দিয়েছি, তোমার সব সমস্যার সমাধান করব।” প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তরুণীর সঙ্গে কথা চালিয়ে গিয়েছিলেন সন্তোষ। তিনি বলেন, “বেশ কয়েক মিনিট তরুণীকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। এ দিকে সময়ও গড়িয়ে যাচ্ছিল। এক ঘণ্টা পর শেষমেশ ওকে নিরস্ত করতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছি।”
সন্তোষ জানান, এর পরই তরুণী ধীরে ধীরে পাহাড়ের কিনারা থেকে উঠে আসে। তার পর তিনিই তরুণীকে পাহাড় থেকে নামিয়ে আনেন। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রেমিক তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিয়ে করেননি। আর সেই কারণেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে পুলিশকে কথা দিয়েছেন, এ বার থেকে মাথা উঁচু করে বাঁচবেন। সন্তোষ জানিয়েছেন, একটি মেয়ের জীবন বাঁচানোর যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাতে সফল হয়ে বেশ ভালই লাগছে। সন্তোষের এই কাজকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সবাই। কী ভাবে মেয়েটিকে আত্ম্যহত্যা থেকে নিরস্ত করলেন সন্তোষ তার একটি ভিডিয়োও কেরল পুলিশ নিজেদের ফেসবুক হ্যান্ডলে পোস্ট করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy