জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতার।
মুম্বইয়ে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের (টিআইএসএস) পড়ুয়ারা আজ ক্লাস বয়কট করে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামলেন। তার একটিতে লেখা, ‘‘আপনারা যখন ঘুমোচ্ছেন, তখন দেশ মরতে বসেছে।’’
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালুরুর ছাত্রছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করলেন। আইআইএম আমদাবাদে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। ৫০ জনকে আটক করে পুলিশ। দিল্লি আইআইটিতে মোমবাতি মিছিল করেন পড়ুয়ারা।
এ গুলিই ছিল আজ দিনভর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্র-বিক্ষোভের খণ্ডচিত্র। গত কাল রাতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের আঁচ আজ ছড়িয়ে পড়ে আইআইটি, আইআইএম-সহ দেশের প্রথমসারির অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে। সর্বত্রই ক্লাসরুম ছেড়ে পথে নেমে প্রতিবাদে শামিল হন পড়ুয়ারা। অনেকেই মনে করতে পারছেন না, দেশ জুড়ে এমন ছাত্র-বিক্ষোভ শেষ কবে হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ছাত্র বিক্ষোভের পাশে বিরোধীরা
গত কাল রাতে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। সেই ক্ষোভের আগুন আজ যে দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছড়িয়ে পড়বে, তা সম্ভবত কেউই বুঝতে পারেননি। সকাল থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্যাম্পাসের চেহারা পাল্টাতে থাকে। ক্লাসরুম নয়, জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ জানাতে রাস্তাই ছিল পড়ুয়াদের একমাত্র রাস্তা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জামিয়ার ঘটনার জেরে গত কালই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়ারা পরীক্ষা বাতিলের আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু পড়ুয়া পরীক্ষা বয়কট করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে আর্টস ফ্যাকাল্টির বাইরে বিক্ষোভে দেখান তাঁরা। জমায়েত থেকে দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্র বিরোধী স্লোগান ওঠে। লখনউয়ে আজ ছাত্র-বিক্ষোভ আক্রমণাত্মক চেহারা নিয়েছিল। সকালে দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলেমা কলেজের পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কিন্তু বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই বিক্ষোভ মিছিলকে ক্যাম্পাসের বাইরে বার হতে দেয়নি। তার পরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করেন পড়ুয়া। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ কোনও ছাত্রকে বাইরে বার হতে দেয়নি। বিক্ষোভকারীরা ইট ছুড়লেও বড় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ)পড়ুয়ারাও। জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি অভিযান সম্পর্কে বিএইচইউয়ের এক পিএইচ ডি-র ছাত্র বলেন, ‘‘গত কাল পুলিশ যা করেছে, তাকে অভিযান বললে কম বলা হয়— এটা চূড়ান্ত বর্বরতা।’’
টিআইএসএসের দু’শোর বেশি পড়ুয়া, ফ্যাকাল্টি আজ কলেজের বাইরে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন প্ল্যাকার্ড-পোস্টার হাতে। কেন্দ্র এবং দিল্লি পুলিশ বিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক পঞ্জি চালুর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি অভিযান ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান আইআইএসসি-বেঙ্গালুরুর পড়ুয়ারা। কেন্দ্র-বিরোধী প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘আমরা ভারতীয় নই— এ কথা বলার সাহস হয় কী ভাবে?’’ আইআইএম বেঙ্গালুরুর পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা আজ নাগরিকত্ব আইন জামিয়া মিলিয়ার ঘটনা নিয়ে মোদীকে চিঠি লিখেছেন। কানপুর, বম্বে, মাদ্রাজ আইআইটির পড়ুয়ারা আজ ক্লাস বয়কট করেন। রাস্তায় নামেন হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy