সাহায্যের হাত। শনিবার নয়াদিল্লিতে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি। —নিজস্ব চিত্র
ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা মৌলবাদী দুষ্কৃতীরা যাতে আশ্রয়-প্রশ্রয় না-পায়, সে ব্যাপারে সব রকম ব্যবস্থা নেবে নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে ঢাকার উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলিকে আজ এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিল নয়াদিল্লি।
তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির যোগাযোগ রয়েছে এবং তাঁর ব্যবস্থাপনায় সীমান্ত পেরিয়ে তাদের হাতে কোটি কোটি টাকা পৌঁছেছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি গত দু’আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের মৌলবাদী দুষ্কৃতীরা এ দেশে ঢুকে রাজ্যের শাসক দলের একাংশের আশ্রয়ে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী গত কাল এবং আজ ভারতীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। মাহমুদ আলি বলেছেন, দু’দেশের নিরাপত্তার পক্ষেই এই বিষয়টি বিপজ্জনক। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এ বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের হাতে কিছু তথ্যও তুলে দিয়েছেন ঢাকার প্রতিনিধিরা।
তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিষয়টিকে প্রকাশ্যে তুলে ধরতে চাইছে না নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেছেন, “কূটনৈতিক আলোচনার পরিসরে এই বিষয়টি উঠে আসেনি।” কিন্তু সরকারি ভাবে আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের উদ্বেগের এই বিষয়টি রাখা না-হলেও, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় নিরাপত্তা অফিসারদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে নিয়মিত খবরাখবর নিয়ে চলেছে বিদেশ মন্ত্রক। গত কাল এবং আজ প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। তৃণমূল-জামাত যোগাযোগের বিষয়টি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করেছেন বলেই কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গেও পৃথক ভাবে বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। সেখানেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার টাকা জামাতের হাতে যাওয়া এবং পালিয়ে আসা মৌলবাদী দুষ্কৃতীদের পশ্চিমবঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া প্রসঙ্গে কতটা উদ্বিগ্ন ঢাকা? এ ব্যাপারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেই বা কী বলেছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মাহমুদ আলি? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি শুধু এ’টুকুই জানিয়েছেন, “এ ব্যাপারে যা বলার ভারত সরকারই বলবে। তবে ভারতের মাটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এই আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট।” এর পরেই তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গঠনের সময় ভারতও এক সঙ্গে রক্ত ঝরিয়েছে। জামাতের মতো কিছু মৌলবাদী সংগঠন ছাড়া গোটা দেশই চায় বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে মিলেমিশে উন্নয়নের পথে হাঁটুক।”
তিন দিনের সফর শেষে আজ রাতেই নিউ ইয়র্ক রওয়ানা হয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকের পর দফায় দফায় সাংবাদিক বৈঠক করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন এবং বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। প্রকাশিত হয়েছে যৌথ বিবৃতিও। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পরমাণু ক্ষেত্র, মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, রেল ও বাস যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাকে অনুরোধ করছি, ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির জন্য সে দেশে কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হোক। আনন্দের বিষয়, ভারতীয় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির জন্য আজ ১৬টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার ঘোষণা করেছে ঢাকা।” আকবরুদ্দিন জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে। দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মাহমুদ আলিও উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ভারত এখানে তাদের গাড়ির কারখানা তৈরি করলে, আমরাও তার পাশে যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গড়তে পারি। বাড়বে কর্মসংস্থান।” পাশাপাশি ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’-এ বাতানুকূল কোচ বাড়ানো, সপ্তাহে দু’দিনের পরিবর্তে তা তিন দিন চালানো, ঢাকা-শিলং বাস পরিষেবা শুরু করার মতো বিষয়গুলিও গুরুত্ব পেয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। মদ-সহ মাত্র ২৪টি বাদে বাংলাদেশের সব পণ্যকেই বিনাশুল্কে ভারতের বাজারে বিক্রির অনুমতি ইতিমধ্যেই দিয়েছে ভারত। কিন্তু আজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়েছে, নানা লাল ফিতের ফাঁসও রফতানির বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারত জানিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারত তার পুরনো অবস্থানেরই প্রতিধ্বনি করে জানিয়েছে, এ ব্যাপারে কেন্দ্র আন্তরিক। খুব শীঘ্রই এই চুক্তি দু’টি রূপায়ণের লক্ষ্যে দেশের ভিতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy