ফাইল চিত্র।
বিজেপি এত দিন বলে এসেছে, নয়া নাগরিকত্ব আইন ( সিএএ) কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। রাজ্য তাতে নাক গলাতে পারে না। বিজেপি-ই আবার পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ‘আমরা মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করব।’
কেন্দ্রের আইন কার্যকর করতে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে হবে কেন? প্রশ্নের মুখে বিজেপি এ বার বলছে, সিএএ কার্যকর করার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার দরকার, তাঁরা এ কথা বলেননি। তাঁরা আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে নয়া নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল বিজেপি-র ইস্তাহার ‘সোনার বাংলা-সঙ্কল্প পত্র ২০২১’ প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে শরণার্থীদের আইনানুগ নাগরিকত্ব দিতে বিজেপি সরকার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করবে।
এত দিন তৃণমূল কংগ্রেসই সিএএ-র বিরোধিতা করছিল। সেই তৃণমূল নেতৃত্বই এখন প্রশ্ন তুলছে, সিএএ কার্যকর করতে আবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে হবে কেন? একই প্রশ্ন আইনজীবীদেরও। তাঁদের যুক্তি, কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার দরকার নেই। সংবিধানের ২৫৬-তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদে পাশ হওয়া যে কোনও আইন বা কেন্দ্রীয় আইন রাজ্যেও বলবৎ হবে। সংবিধানের ২৪৫-তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও রাজ্য সরকার কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ করায় বাধা দিতে পারে না।
প্রশ্নের মুখে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এক বারও বলিনি, সিএএ কার্যকর করার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে হবে। নয়া নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয় আইন, কেন্দ্রই তা কার্যকর করবে।’’ তা হলে ইস্তাহারে তা কার্যকর করার কথা এল কেন? শমীকবাবুর জবাব, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকার অসহযোগিতা করছে। আইন চালু করতে দেব না বলছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্য সরকার অসহযোগিতা করবে না। ফলে আইন কার্যকর করা সহজ হবে।’’
সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, রাজস্থান-সহ বেশ কিছু রাজ্য সিএএ-র বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়েছিল। আইনজীবীদের মতে, রাজ্য সরকার বিধানসভায় প্রস্তাব এনে কেন্দ্রকে আইন প্রত্যাহারের জন্য বলতে পারে। কেন্দ্রের আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কোনও আইনকে অসাংবিধানিক বলে তকমা না দিলে, রাজ্য তা রূপায়ণে আপত্তি করতে পারে না। শমীকবাবুও মানছেন, কেন্দ্র রাজ্যকে উপেক্ষা করেই সিএএ কার্যকর করতে পারত।
তৃণমূলের মুখপাত্র তথা প্রবীণ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের বক্তব্য, ‘‘নাগরিকত্ব কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত বিষয়। কেন্দ্র সংসদে নয়া নাগরিকত্ব আইন এনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। কেন্দ্রকেই এই আইন কার্যকর করতে হবে। এখানে রাজ্যের কোনও ভূমিকাই নেই। তিন তালাক নিষিদ্ধ করতে যে আইন হয়েছে, তা রূপায়ণ করতে কি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে হয়েছে!’’
বিশ্বজিতবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আইন রূপায়ণের জন্য বিধি তৈরি করতে হবে। এখনও সিএএ-র বিধিনিয়ম তৈরি হয়নি। ফলে সংসদে আইন পাশের পরে এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও, কেন্দ্রের জন্যই এখনও সিএএ কার্যকর হয়নি। বস্তুত, গত ফেব্রুয়ারিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, লোকসভা ও রাজ্যসভার আইন প্রণয়ন কমিটি ৯ এপ্রিল
ও ৯ জুলাই পর্যন্ত সিএএ-র আইন প্রণয়নের জন্য বাড়তি সময় দিয়েছে। কিন্তু অসমের ভোটের কথা ভেবে আপাতত ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। এ দিকে পশ্চিমবঙ্গে আবার আইন প্রণয়নের জন্য মতুয়া শিবির থেকে চাপ আসছে। বিজেপি বিরোধী শিবির মনে করছে, প্রয়োজন না থাকলেও মতুয়াদের আশ্বস্ত করতেই ইস্তাহারে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের কথা রেখেছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy