প্রয়াগরাজে পঁয়তাল্লিশ দিনের কুম্ভমেলায় ইতি পড়ল। উত্তরপ্রদেশ সরকার দাবি করল, প্রায় ৬৫ কোটি মানুষ এ বার কুম্ভে স্নান করেছেন। কিন্তু আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত কুম্ভে যাননি।
এ বারের কুম্ভে রাজকীয় আয়োজন করে যোগী আদিত্যনাথ নিজের প্রশাসনিক দক্ষতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষকে প্রয়াগরাজে টেনে এনে নিজের রাজনৈতিক উচ্চতাকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরাই তাঁর লক্ষ্য। প্রশ্ন উঠছে, তাই কি মোহন ভাগবত কুম্ভ এড়িয়ে গিয়েছেন?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু থেকে মুকেশ অম্বানী-গৌতম আদানির মতো শিল্পপতি কুম্ভে স্নান সেরে এসেছেন। আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক বা ‘সরকার্যবাহ’ দত্তাত্রেয় হোসবলে সঙ্গমের জলে ডুব দিয়েছেন। আরএসএসের গোটা দেশে ৪৪টি প্রান্ত রয়েছে। সারা দেশ থেকে আসা ১৬ হাজার আরএসএসের কর্মী নিয়মিত প্রয়াগরাজে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন। তা হলে সঙ্ঘপ্রধান গেলেন না কেন, বিজেপি ও সঙ্ঘের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
আরএসএসের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুনীল অম্বেকরের অবশ্য দাবি, ভাগবত না যাওয়ার পিছনে কোনও বিশেষ কারণ নেই। অম্বেকর বলেন, “সরসঙ্ঘচালক কুম্ভে যাননি। তাঁর না যাওয়ার পিছনে বিশেষ কোনও কারণ নেই। তিনি না গেলেও সংগঠনের সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে কুম্ভে গিয়েছেন। অন্য পদাধিকারীরাও গিয়েছেন।”
বিজেপি তথা সঙ্ঘের রাজনীতিতে কুম্ভের কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৮৯ সালের কুম্ভ থেকেই রাম জন্মভূমি আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সঙ্ঘ পরিবার। ২০১৩ সালের কুম্ভমেলা থেকেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করার দাবি তোলে। আরএসএস-ও এর পরে লালকৃষ্ণ আডবাণী না নরেন্দ্র মোদী, কাকে সমর্থন করবে, সেই ব্যাপারে মনস্থির করতে বাধ্য হয়। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে জিতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এ বার কুম্ভে গিয়ে মোদীর উত্তরসূরি হিসেবে যোগীর দাবিতে সিলমোহর দিতে কি চাননি ভাগবত?
আরএসএস সূত্রের দাবি, ভাগবত কোনও বাহ্যিক আড়ম্বর পছন্দ করেন না। প্রয়াগরাজে এ বার এক দিকে কোটি কোটি মানুষের জন্য কুম্ভের আয়োজন করে যোগী সরকার বাহবা কুড়োলেও, অন্য দিকে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় যোগী সরকারের দিকে ব্যর্থতা ও মৃত্যুর আসল সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। সূত্রের মতে, ভাগবত হয়তো এই বিতর্ক এড়াতে চেয়েছেন। আবার আর একটি সূত্র বলছে, ছয় মাস আগে থেকেই ভাগবতের সফরসূচি ঠিক করা থাকে। কুম্ভমেলার সময়ও ছয় মাস আগে জানা ছিল। এই সময়কালে ভাগবত পশ্চিমবঙ্গ, অসমে গিয়েছেন। দিল্লিতে আরএসএসের দফতরের নতুন ভবনের উদ্বোধনে হাজির থেকেছেন। কিন্তু কুম্ভে না যাওয়ার অর্থ, এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া ছিল।
মোহন ভাগবত ২০১৯-এ কুম্ভে গিয়েছিলেন। যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠকও হয়েছিল কুম্ভে। ভাগবত সেখান থেকে হিন্দু ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। তার আগে ২০১৬-তে উজ্জয়িনীতে সিংহস্থ কুম্ভেও গিয়েছিলেন ভাগবত। সাফাই কর্মীদের সঙ্গে শিপ্রা নদীর জলে স্নান করেছিলেন। আরএসএসের দাবি, এ বারের ভাগবতের না যাওয়ার পিছনে অন্য তাৎপর্য খোঁজার প্রয়োজন নেই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)