বিরোধী জোট থেকে দূরে কেজরী,মায়া।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন রুখতে আন্দোলন হোক অথবা নয়া কৃষি বিলের বিরোধিতায় চাষিদের পাশে দাঁড়ানো। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে দেশের বারো বা তেরোটি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বারবার এক ছাতার তলায় আসতে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে বিপুল ভাবে হারানোর পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অনেকটাই নরম মনোভাব নিতে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে। ভোটের আগে ও পরে এসপি, আরজেডি, শিবসেনার মতো দলগুলি প্রকাশ্যেই পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই বিরোধী সংসারে কিন্তু দু’টি দলের অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা মায়াবতীর বিএসপি এবং অরবিন্দ কেজরীবালের আপ। অথচ, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পান থেকে চুন খসলেও মমতার সঙ্গে পরামর্শ করেন কেজরী। মমতা দিল্লিতে এলে এক বার অন্তত তাঁর সঙ্গে দেখা করা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দস্তুর। কিন্তু বিরোধী দলের কোনও বৈঠকে, অথবা কোনও বিষয় নিয়ে একত্রে সরকারকে দেওয়া প্রতিবাদপত্রে তাঁর সই দেখতে পাওয়া যায় না।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “অরবিন্দ কেজরীবাল এবং তাঁর দল তৃণমূলের সঙ্গে সব স্তরে যোগাযোগ রেখে চলেন। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর অহি-নকুল সম্পর্ক। পঞ্জাব এবং দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে যুযুধান আপ। ফলে ঘরোয়া ভাবে অনেক বারই অরবিন্দ আমাদের জানিয়েছেন, বিরোধিতায় নৈতিক সায় থাকলেও সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে এক মঞ্চে তাঁরা আসতে পারবেন না।”
বিরোধী রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মোদী সরকার-বিরোধী ঐক্যের প্রথম বীজটা বপন হয়েছিল রাজ্যসভায়। সংসদের ওই কক্ষেই কেন্দ্রকে বারবার কোণঠাসা করার প্রসঙ্গ এসেছে। কৃষি বিল নিয়ে তৃণমূলের নেতৃত্বে মুখর হয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু সেই আন্দোলনে দেখা যায়নি বিএসপি-কে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে তৈরি করা বিরোধী জোট চুরমার হয়ে যাওয়ার পরে মায়াবতীও একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে কার্যত বিজেপি-র ‘বি দল’ হিসেবে কাজ করছেন বলেই মতামত অন্যান্য বিরোধী নেতৃত্বের। মায়ার ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুরনো একটি দুর্নীতির মামলা নতুন করে খুঁচিয়ে তুলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর প্রবল চাপ তৈরি করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, জয়ের বিন্দুমাত্র আশা নেই জেনেও দিল্লি নির্বাচনের সব ক’টি আসনে প্রার্থী দিয়ে বিরোধী ভোট কাটার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মায়াবতী। আগামী বছরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশের ভোটেও মায়াবতী বিজেপিকে গোপনে সহায়তা করতে পারেন বলেই মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির। উত্তরপ্রদেশের হাথরস-সহ দলিত নির্যাতনের বিভিন্ন কাণ্ডকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ দলিত মনে যে বিজেপি-বিরোধিতার সূত্রপাত হয়েছে, তাকেও ঠিক ভাবে সংগঠিত করতে দেখা যাচ্ছে না মায়াবতীকে।
বিরোধী সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে বিরোধী ঐক্যকে জোরদার করা হবে এবং সে ক্ষেত্রে সদ্য বিধানসভায় বড় জয় পাওয়া তৃণমূল এবং ডিএমকে-র ভূমিকা থাকবে অগ্রভাগে। অকালি এবং শিবসেনা— এনডিএ-র দুই প্রাক্তন শরিক বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতায় সরব, যা নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে বিরোধী ঐক্যে। তবে বিরোধী ঐক্য এবং একসঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আন্দোলনের প্রশ্নে সংসদের ভিতরে-বাইরে আপ বা বিএসপি-কে সঙ্গে পাওয়া যাবে না, এটা ধরেই রেখেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি-সহ বিরোধী দলগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy