Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
National News

‘রাম রাজ্যে’ ঠাঁই নিয়ে কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ খুব চিন্তায়

এখনও পর্যন্ত ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে যে সমস্ত নাম শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে নির্মোহী আখড়ার প্রধান মহন্ত দীনেন্দ্র দাস রয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪৮
Share: Save:

শুধু পনেরো সদস্যের ট্রাস্ট (অছি পরিষদ) গড়ার ঘোষণাটুকু হয়েছে। সরকারি ভাবে নাম বলা হয়েছে সাকুল্যে এক জনের। তাতেই রাম মন্দির ঘিরে আশা-আশঙ্কায় অযোধ্যা এখন কার্যত জল্পনা-নগরী।

ট্রাস্টের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে যে সমস্ত নাম সরকারি সূত্রে হাওয়ায় ভাসছে, তাতে সাধু-সমাজের কেউ-কেউ খুশি। আবার বিস্তর গোঁসা হয়েছে কিছু আখড়ার। অভিযোগ, এত দিন ধরে মন্দিরের জন্য লড়াই চালিয়ে এখন ‘বঞ্চিত’ হচ্ছে তারা। নতুন ঝাঁ-চকচকে মন্দিরের পাশে জায়গা জুটবে কি না, সেই চিন্তায় ঘুম ছোটার জোগাড় অনেক দোকানিরও।

১৯৪৯ সালে বিতর্কিত জমিতে মূর্তি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকে করসেবা— আগাগোড়া রাম মন্দির আন্দোলনে জড়িয়ে থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি ‘রাম মন্দির ন্যাস’ মনে করেছিল, রামলালাকে জমি দেওয়ার অর্থ, তাদেরই মন্দির তৈরি ও পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ, ওই জমির অধিকার চেয়ে মামলা তাদেরই করা। গোড়া থেকেই ন্যাসের প্রধান নৃত্য গোপাল দাসের দাবি, “মন্দির ন্যাসই তৈরি করুক। তা পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হোক তাদের। নির্মোহী আখড়াকে শামিল করার প্রশ্নই নেই। সরকার শুধু পাশে থাকুক। গড়ুক পরিকাঠামো।”

আরও পড়ুন: মন্দির শুরু রামনবমী বা অক্ষয় তৃতীয়ায়

কিন্তু এখনও পর্যন্ত ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে যে সমস্ত নাম শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে নির্মোহী আখড়ার প্রধান মহন্ত দীনেন্দ্র দাস রয়েছেন। বরং নাম নেই নৃত্য গোপাল দাসের! ন্যাসের অন্যতম কর্তা শরদ শর্মা অবশ্য বলছেন, ‘‘চূড়ান্ত তালিকা এখনও আসেনি। দেখি কী হয়।’’

অথচ মন্দির গড়ার দায়িত্ব তাদের উপরে বর্তাবে ধরে নিয়েই বিতর্কিত জমির ঢিল ছোড়া দূরত্বে সেই ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রাজস্থানি পাথরে মন্দিরের প্রায় ৭০% কাজ সেরে রেখেছে ন্যাস। তৈরি বহু স্তম্ভ। ‘শ্রী রাম’ লেখা ইটও রাখা রয়েছে থরে থরে। মূল নকশা তো ভাবা আছেই, এমনকি ঠিক করা আছে যে, ওই দ্বিতল মন্দিরে থাকবে ২১২টি থাম, ৫১ হাজার আলো। ওই নকশা অনুযায়ী, মন্দিরের দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা হওয়ার কথা যথাক্রমে ২৬৮, ১৪০ এবং ১২৮ ফুট। কিন্তু এখন যদি এর থেকেও অনেক বড়, অনেক বেশি কারুকার্য সমৃদ্ধ মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করে ট্রাস্ট? বিশেষত যেখানে একে সারা বিশ্বের হিন্দুদের পর্যটনস্থল করে তোলার ইঙ্গিত মিলছে। বলা হচ্ছে বিমানবন্দর তৈরির কথা। প্রশ্ন শেষের আগেই সটান উত্তর এল, ‘‘ঠিক করে রাখা নকশাতেই মন্দির হোক। ব্যবহার হোক ওই ইট আর থাম। তিন দশক এত প্রতিকূলতার মধ্যে এত আবেগ দিয়ে তৈরি কাঠামো এখন ফেলে দিলেই হল?” অযোধ্যার এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘এত প্রচারের আলো পাওয়া মন্দির। ৬৭ একর জমি। দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তদের টাকা আসার জল্পনা। বড় পর্যটনস্থল হয়ে উঠলে, মন্দিরের কোষাগার ফুলেফেঁপে ওঠার সম্ভাবনা। এ সব দেখে কেউ জায়গা ছাড়বে?’’ এক পুলিশকর্মীর দাবি, ‘‘এমন আখড়াও আছে, যেখানে তার প্রধান এখন দুপুরে শিষ্যদের পাহারায় ঘুমোন। রাত কাটে জেগে। যদি অন্য কোনও শিবির হামলা করে!’’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ট্রাস্টের ঘোষণার পরে আখড়ায়-আখড়ায় ঝগড়া-বন্ধুত্বের সমীকরণও বদলাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসছে অযোধ্যার গেরুয়া শিবির।

সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেক দোকানি। ফুল-মালা, মিষ্টি থেকে মূর্তি— রামলালার পূজাস্থলের কাছে যে ছোট-ছোট দোকান ছড়িয়ে, তাদের অনেকগুলিরই মালিকের সংশয়, নতুন মন্দির তৈরির পরে এই শহর যদি সত্যিই বড় পর্যটনস্থল হয়ে ওঠে, তখন সেখানে গজিয়ে ওঠা ঝাঁ-চকচকে বড় দোকান কিংবা শপিং মলের সঙ্গে তাঁরা এঁটে উঠতে পারবেন তো? তার আগেই মন্দির চত্বর ঢেলে সাজার জন্য উচ্ছেদ হতে হবে না তো তাঁদের? যদি হতে হয়ও, তবে কেমন হবে সেই পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত? সব মিলিয়ে, রাম মন্দির ঘিরে ছবি আমূল বদলে যাওয়ার স্বপ্নে অযোধ্যা উৎসাহী। কিন্তু সেই ‘নতুন রাম রাজ্যে’ নিজের ‘ঠাঁই হবে কি না’, এখন সেই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে দোকানি আর সাধু-সমাজের মাথায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Ram Mandir Ayodhya Ram Janmabhoomi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy