South China sea creates conflict between China and other countries which threatens of another world war dgtl
South China Sea
ঘিরে আছে ৭ দেশ, অহরহ পড়ে ‘ড্রাগনের নিশ্বাস’! এই সাগরেই লুকিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ?
আন্তর্জাতিক মানচিত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের গুরুত্ব অপরিসীম। বাণিজ্যিক কারণেও এই সাগরের উপর নির্ভর করে থাকে বহু দেশ। এখানে কর্তৃত্ব কায়েম করে বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায় চিন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
চিনের দক্ষিণ উপকূলের একাংশ ঘেঁষে উথালপাথাল জলরাশি। ঢেউয়ের সঙ্গে সেই জলে থেকে থেকে মাথাচাড়া দেয় বিবিধ বিতর্কের তরঙ্গ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই জলভাগের গুরুত্ব অপরিসীম।
০২২০
চিনের নামেই এই সমুদ্রের নামকরণ করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ চিন সাগরের নামে ‘চিন’ থাকলেও একে ঘিরে কিন্তু রয়েছে সাত সাতটি দেশ। তাদের মধ্যে জলের ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্বও চলে অবিরাম।
০৩২০
দক্ষিণ চিন সাগরের পশ্চিম দিকে রয়েছে ভিয়েতনাম। দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই দ্বারা পরিবেষ্টিত এই সমুদ্র। এর পূর্ব দিকে রয়েছে ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ। উত্তরে দক্ষিণ চিন সাগরকে ঘিরে আছে চিন এবং তাইওয়ান।
০৪২০
এই সাত দেশ ছাড়াও দক্ষিণ চিন সাগরকে ঘিরে বিতর্কে উঠে আসে আমেরিকা থেকে শুরু করে জাপান, তাইল্যান্ড এমনকি ভারতের নামও। নানা সময়ে নানা কারণে এই সাগরকে কেন্দ্র করে দেশে দেশে দ্বন্দ্ব এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
০৫২০
আন্তর্জাতিক মানচিত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের ভৌগোলিক গুরুত্ব অপরিসীম। বাণিজ্যিক কারণেও এই সাগরের জলের উপর নির্ভর করে থাকে একাধিক দেশ। সমুদ্রগর্ভে লুকিয়ে আছে বহুমূল্য তেলের খনি, যা রাষ্ট্রপ্রধান এবং কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
০৬২০
দক্ষিণ চিন সাগরের নীচে রয়েছে খনিজ তেলের বিপুল সম্ভার। যার আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ২৮০০ কোটি ব্যারেল। এ ছাড়া, এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে প্রায় ২৬৬ লক্ষ কোটি ঘনফুট।
০৭২০
ফিলিপিন্সের প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, সমগ্র পৃথিবীর সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের এক তৃতীয়াংশ ধারণ করে আছে দক্ষিণ চিন সাগর। তবে এই জলভাগে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। পাশাপাশি, সংলগ্ন দেশগুলির মধ্যে জলের অধিকারজনিত বিতর্কের কারণে এই সাগরে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
০৮২০
দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় সমস্ত অংশের উপরেই অধিকার দাবি করে চিন। এই জলভাগে অন্য কোনও দেশের অধিকার আছে বলে তারা মনে করে না। আবার সমুদ্র সংলগ্ন বাকি দেশগুলিও নির্দিষ্ট এলাকার জলে নিজেদের অধিকার ছাড়তে নারাজ।
০৯২০
শুধু দক্ষিণ চিন সাগরের জল নয়, তার দ্বীপগুলিকে নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছে লাগোয়া রাষ্ট্রগুলি। ইন্দোনেশিয়ার নাটুনা দীপপুঞ্জের উত্তর-পূর্ব দিকের জলের উপর অধিকার দাবি করে মোট চারটি দেশ— ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, চিন এবং তাইওয়ান।
১০২০
ইন্দোনেশিয়ার নাটুনা দ্বীপকে দক্ষিণ চিন সাগরের দক্ষিণ সীমা হিসাবে ধরা হত। কিন্তু চিনের দাবি, ওই দ্বীপপুঞ্জের চারদিকের জলও দক্ষিণ চিন সাগরের অন্তর্ভুক্ত। এ ভাবে, আদতে নাটুনা দ্বীপকেও নিজেদের আওতায় টেনে নিতে চায় বেজিং।
১১২০
ফিলিপিন্সের সবচেয়ে বড় দ্বীপ লুজ়োনের কাছে অবস্থিত দু’টি বড় পাথরখণ্ড স্কারবরো শোল নামে পরিচিত। ওই পাথরের উপরে কর্তৃত্ব ফলায় চিন। তবে ফিলিপিন্স, চিন এবং তাইওয়ানও সেখানে অধিকার দাবি করে থাকে।
১২২০
স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জ এবং তার পূর্ব দিকের জল নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এই জল নিয়ে দ্বন্দ্বে শামিল চিন, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম। প্যারাসেল দ্বীপ নিয়েও এই তিন দেশের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
১৩২০
দক্ষিণ চিন সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে তাইল্যান্ড উপসাগর সংলগ্ন এলাকা নিয়ে ক্ষমতার লড়াই চলে চারটি দেশের মধ্যে। কম্বোডিয়া, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনাম এই জলের উপর অধিকার দাবি করে।
১৪২০
এক সময় চিন এবং ভিয়েতনাম উভয় দেশেরই প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের নির্দিষ্ট অংশে কর্তৃত্ব ছিল। ১৯৭৪ সালে এই দুই দেশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রক্তাক্ত হয় দক্ষিণ চিন সাগরের জল। সেই চিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধে ১৮ জন চিনা সেনা এবং ৫৩ জন ভিয়েতনামি সেনার প্রাণ গিয়েছিল। তার পর থেকে প্যারাসেলে চিনের আধিপত্য দৃঢ় হয়।
১৫২০
চিনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তারা আপন ক্ষমতাবলে দক্ষিণ চিন সাগর সংলগ্ন দ্বীপগুলিতে সুকৌশলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। সেই চেষ্টা প্রকাশ্যে এলেই শুরু হয় যুদ্ধ। ধীরে ধীরে সাগর সংলগ্ন সমগ্র এলাকাতেই নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে চিন।
১৬২০
চিন, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যেকার জলভাগে একটি কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে দক্ষিণ চিন সাগরের সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই রেখার নাম ‘নাইন ড্যাশ লাইন’। চিনের দাবি, ‘নাইন ড্যাশ লাইন’-এর অন্তর্গত সমস্ত এলাকাই তাঁদের আওতাভুক্ত। এই রেখার আয়তন হামেশাই কিছুটা করে বাড়িয়ে দেয় বেজিং।
১৭২০
দক্ষিণ চিন সাগর বাণিজ্যিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের যাবতীয় সামুদ্রিক জাহাজ পরিবহণের এক তৃতীয়াংশ হয় এই সাগরের উপর দিয়ে। প্রতি বছর যাতায়াত করে ৩ লক্ষ কোটি ডলার অর্থমূল্যের পণ্য। এই মুহূর্তে এই সাগরই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত জাহাজপথ।
১৮২০
ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজও দক্ষিণ চিন সাগরের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। এখানে কর্তৃত্ব কায়েম করে বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায় চিন। আবার সংলগ্ন অপেক্ষাকৃত দুর্বল দ্বীপরাষ্ট্রগুলিকে সাহায্যের মাধ্যমে চিনের পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করে চলে আমেরিকা।
১৯২০
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা ভাল চোখে দেখে না জাপানও। তারা এই সাগরের সঙ্গে সরাসরি ভৌগোলিক ভাবে যুক্ত নয়। তবে তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থও এখানে জড়িয়ে আছে। বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক তাৎপর্যের দিক থেকে দক্ষিণ চিন সাগরের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে।
২০২০
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসন কি ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে অন্য রাষ্ট্রগুলিকেও। আগামী দিনে এই সাগরের জলেই কি জন্ম নিতে পারে আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ? শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বিতর্ক মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী প্রায় সকলেই। তবে ‘ড্রাগনের নিশ্বাস’ এই জলের উপর যত দিন পড়বে, তত দিন সেখান থেকে মাথা উঁচিয়ে থাকবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও।