সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।
আগেই ‘শোকজ়’ নোটিস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বার চার শিক্ষককে সাসপেন্ড করল দিল্লির ‘সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়’। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের পদক্ষেপ করতে ‘উস্কানি’ দিয়েছিলেন ওই শিক্ষকেরা। স্নাতকোত্তর স্তরে মাসিক বৃত্তি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে গত বছর আন্দোলন করেছিলেন পড়ুয়াদের একাংশ। সেই আন্দোলনেই ‘ইন্ধন’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকদের তরফে যদিও জানানো হয়েছে, নিয়ম না মেনেই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই সাসপেনশনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘জেএনইউটিএ’। ওই সংগঠনের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘এফইডিসিইউটিএ’ও ওই চার শিক্ষকের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনার সমালোচনা করেছে।
সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই চার শিক্ষককে সাসপেন্ড করার কথা স্বীকার করেছেন। সাসপেন্ড হওয়া ওই শিক্ষকেরা হলেন অর্থনীতি বিভাগের স্নেহাশিস ভট্টাচার্য, লিগাল স্টাডিজের শ্রীনিবাস বুরা, সমাজবিজ্ঞানের ইরফানুল্লা ফারুকি এবং রবি কুমার। ১৬ জুন চার জনকে সাসপেন্ড করার মর্মে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই চার শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধি ভেঙেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের কথায়, নির্দেশিকায় চার শিক্ষককে কত দিন পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে, কী অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে, এ সব কিছুই লেখা নেই। পাশাপাশি কিছু শর্তও মানতে বলা হয়েছে চার জনকে। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দেশিকায় লেখা ছিল, আমাদের নিজেদের অফিস খালি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ ফেরত দিতে হবে। রোজ ডিনের দফতরে এসে সই করতে হবে। শহর ছাড়ার আগেও জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে।’’
সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক)-ভুক্ত দেশগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক। আগে দিল্লির চাণক্যপুরীতে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখন ময়দানগঢ়হিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠরত কিছু পড়ুয়া একটি বৃত্তি পেতেন। মাসে ৫,০০০ টাকা করে দেওয়া হত তাঁদের। তা কমিয়ে ৩,০০০ টাকা করা হয়। এর পরেই ছাত্ররা প্রতিবাদ শুরু করেন। আন্দোলনের মধ্যেই মাসিক বৃত্তি ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪,০০০ টাকা করা হয়। যদিও পড়ুয়ারা নিজেদের দাবি থেকে পিছু হটেননি। তাঁরা দাবি করেন, মাসিক বৃত্তি ৭,০০০ টাকা করতে হবে। কর্তৃপক্ষ তখন জানান, মাসিক বৃত্তি বাড়িয়ে ৫,০০০ টাকা করা যেতে পারে। কিন্তু ছাত্রেরা তা মানতে চাননি। আরও কিছু দাবিদাওয়া ছিল তাঁদের। কেন, কী ভাবে বৃত্তি কমানো হল, তার জবাবদিহি চান আন্দোলনকারীরা। হেনস্থার বিচারের জন্য তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কমিটিতে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব রাখারও দাবি তোলেন তাঁরা।
অভিযোগ, এর পরেই আন্দোলনকারীদের হটাতে পুলিশ ডাকেন কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে ধিক্কার জানিয়ে ১৩-১৪ জন শিক্ষক কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তাঁরা জানান, ‘‘ছাত্রদের আন্দোলন করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। পুলিশ ডেকে আন্দোলন তুলে দেওয়া উচিত নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।’’
শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এর পর পাঁচ জন ছাত্রকে সাসপেন্ড, বহিষ্কার-সহ বিভিন্ন রকম শাস্তি দেওয়া হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে আবারও চিঠি দেন ১৫ জন শিক্ষক। চিঠিতে তাঁরা জানান, ‘‘উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরেই ছাত্রদের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ করা উচিত। সাসপেন্ড বা বহিষ্কারের আগে শো-কজ করা উচিত।’’ আন্দোলন চলাকালীন এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছাত্রেরা আবার প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। এর পর সেমেস্টার শেষে ছাত্রদের ছুটি শুরু হলে আন্দোলন ক্রমে স্তিমিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পাঁচ শিক্ষককে শোকজ নোটিস পাঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের দাবি, সেখানে বলা হয়েছিল, ‘সহকর্মী, কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের বিরুদ্ধে’ পড়ুয়াদের উস্কানি দিয়েছেন ওই পাঁচ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দ্বারা পরিচালিত মার্কসবাদী সংগঠন ‘আইজাজ আহমেদ স্টাডি সার্কল’-এর সঙ্গে তাঁরা যুক্ত কি না শোকজে সে প্রশ্নও তোলা হয় বলে দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘এক শিক্ষক ক্ষমা চেয়ে নেন। বাকি চার জনকে ১৯ মে একটি ‘ব্রোশিওর’ দেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এনে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। চার জন অধ্যাপক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান চাইলে তাঁদের ‘সাসপেন্ড’ করা হয়।’’
এক শিক্ষকের দাবি, চার জনকে সাসপেন্ড করার এক্তিয়ার কর্তৃপক্ষের নেই। বর্তমান প্রেসিডেন্ট (উপাচার্য)-এর মেয়াদ অনেক দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। যে হেতু এই বিশ্ববিদ্যালয় সার্ক পরিচালিত, তাই দীর্ঘ দিন সংগঠনের বৈঠক না হওয়ায় নতুন উপাচার্য নিয়োগ করা যায়নি। বর্তমান উপাচার্য কোনও ভাবেই তাঁদের সাসপেন্ড করতে পারেন না বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের আন্দোলন সঠিক না ভুল, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি শিক্ষকেরা। পড়ুয়াদের সমর্থনের কথাও জানাননি। আলোচনার পর বিষয়টি মিটমাটের দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy