সনিয়া গাঁধী।
যেমনটা আশা করা হয়েছিল, ঠিক তা-ই হল। কংগ্রেস আবার বুঝিয়ে দিল, গাঁধী পরিবার ছাড়া দলের গতি নেই।
‘সনিয়া, আপনি সভানেত্রীর পদ ছেড়ে যাবেন না’ এবং ‘রাহুল, ফের সভাপতির দায়িত্ব নিন’— এই স্লোগান তুলে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বেই আস্থা জানাল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। এক দিকে মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনির নেতৃত্বে প্রবীণ নেতারা সনিয়াকেই আপাতত সভানেত্রীর পদে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানালেন। অন্য দিকে কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা থেকে আহমেদ পটেল পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সকলে রাহুলকে ফের কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আর্জি জানালেন। গাঁধী পরিবারের বাইরের কারও সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে তাঁরা বললেন, রাহুল দায়িত্ব নিয়ে নিজের মতো সংগঠন সাজিয়ে নিন।
কংগ্রেসের ২৩ জন নেতা সনিয়াকে চিঠি লিখে পুরো সময়ের সক্রিয় নেতৃত্ব, সংগঠন ঢেলে সাজানো, ওয়ার্কিং কমিটির নির্বাচন এবং সর্বোপরি সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন। দু’সপ্তাহ আগে লেখা সেই চিঠি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে ফাঁস হয়। সনিয়া তার আগেই দলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি চাইছেন। তিনি লেখেন, ‘দলের স্বার্থে আমি ওয়ার্কিং কমিটিকে অনুরোধ করছি, আমাকে অব্যাহতি দিতে দায়িত্ব বদলের প্রক্রিয়া শুরু করা হোক’।
আরও পড়ুন: বছর ২১ পরে, প্রত্যাখ্যান অস্ত্রে জয় দ্বিতীয় বার
আরও পড়ুন: হাজারে কাজ মাত্র একের! মোদীকে নিশানা রাহুলের
এই দুই চিঠি নিয়ে সাড়ে ছয় ঘণ্টার বৈঠকে বাদানুবাদ-তর্কবিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের শেষে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি একমত হয়ে প্রস্তাব নিল, যত দিন না এআইসিসি-র অধিবেশন ডাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, সনিয়া গাঁধীকেই আপাতত কংগ্রেস সভানেত্রী পদে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিক্ষুব্ধদের চিঠি প্রসঙ্গে এ দিন সনিয়া জানান, তিনি ‘আহত’। কিন্তু ‘সহকর্মী’-দের প্রতি মনে কোনও ‘বিদ্বেষ’ রাখছেন না। বৈঠকে অম্বিকা সোনি বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু সনিয়া বলেন, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। অতীতেও তাঁকে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি দলের স্বার্থে সে সবের ঊর্ধ্বে উঠেছেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, করোনার প্রকোপ কমলে মাস ছয়েক পরে সভাপতি নির্বাচনের জন্য এআইসিসি-র অধিবেশন ডাকা হবে। আপাতত সনিয়ার অধীনে একটি কমিটি তৈরি করা হতে পারে।
ওয়ার্কিং কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাব
• যত দিন না এআইসিসি ডাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, ওয়ার্কিং কমিটি সর্বসম্মত ভাবে সনিয়া গাঁধীকে কংগ্রেস সভানেত্রী পদে থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।
• তাঁকে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক রদবদলের অধিকার দিচ্ছে কমিটি।
• দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় প্রকাশ্যে বা সংবাদমাধ্যমে আলোচনা করা যায় না। ওয়ার্কিং কমিটি সকলকে এই বিষয়গুলি দলীয় মঞ্চেই আলোচনার পরামর্শ দিচ্ছে।
• মোদী সরকারের ব্যর্থতা, বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীই। তাঁদের কণ্ঠস্বর দেশবাসীকে সরকারের কাছ থেকে জবাব চাইতে অনুপ্রাণিত করেছে।
• ওয়ার্কিং কমিটি তাঁদের হাত শক্ত করার সঙ্কল্প করছে। কেউ দল ও নেতৃত্বকে দুর্বল করবেন না, কাউকে তা করতেও দেওয়া হবে না। মোদী সরকার ভারতের গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও বৈচিত্রের উপরে যে আক্রমণ হানছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করা কংগ্রেসের প্রতিটি নেতা-কর্মীর দায়িত্ব।
দলের ২৩ জন নেতা সনিয়াকে চিঠি লিখলেও তাঁদের অভিযোগের আঙুল ছিল রাহুল গাঁধীর দিকে। কারণ রাহুল সভাপতির পদ না-নিলেও পিছন থেকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু নিজের ‘কোর টিম’-এর বাইরে কারও সঙ্গে আলোচনা করছেন না। সনিয়ার অধীনে কমিটি তৈরি হলে সেই ক্ষোভ মেটানো যাবে।
রাহুল এ দিনও সভাপতি পদের দায়িত্ব নিতে সম্মতি দেননি। তবে কংগ্রেস নেতাদের আশা, ছ’মাসের মধ্যে তিনি রাজি হয়ে যাবেন। প্রথমে এক বছর পরে সভাপতি পদে নির্বাচনের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে রাহুল নিজেই বলেন, ছ’মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হোক।
এ দিন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের শুরুতে বেণুগোপাল সনিয়ার চিঠিটি পড়ে শোনাতেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনি, পি চিদম্বরম ও আহমেদ পটেলরা তাঁকে সভানেত্রীর পদে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেন। বস্তুত, রবিবার রাত থেকেই কংগ্রেসের শীর্ষনেতারা সনিয়া-রাহুলকেই নেতৃত্বে দরকার বলে সরব হয়েছিলেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী থেকে কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সনিয়াকেই সভানেত্রীর পদে থেকে যেতে অনুরোধ করেন। অশোক গহলৌত, ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ, ভূপেশ বাঘেলরা দাবি তোলেন, সনিয়া না-চাইলে রাহুল আসুন। একাধিক রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি, কংগ্রেসের বিভিন্ন বিভাগীয় কমিটিও রাহুলকে সভাপতি পদে ফেরানোর দাবি তুলে প্রস্তাব নেয়।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘কংগ্রেসের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী চায়, রাহুল ফের সভাপতির দায়িত্ব নিন। কংগ্রেস গণতান্ত্রিক দল। এআইসিসি-র নির্বাচনের মাধ্যমেই সভাপতি নির্বাচন হবে। সেখানে কী হবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy