Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

চা-চর্চার পরেও সংসদে তুফান চান সনিয়া

চায়ের উষ্ণতা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বরফ গলানোর চেষ্টা করলেন ঠিকই। কিন্তু অসহিষ্ণুতা বিতর্ক থেকে মূল্যবৃদ্ধি—কোনও বিষয়েই সরকারের বিরোধিতা এক ছটাকও কমাতে রাজি নন সনিয়া গাঁধী। আগামিকাল লোকসভা ও পরশু রাজ্যসভায় অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

চায়ের উষ্ণতা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বরফ গলানোর চেষ্টা করলেন ঠিকই। কিন্তু অসহিষ্ণুতা বিতর্ক থেকে মূল্যবৃদ্ধি—কোনও বিষয়েই সরকারের বিরোধিতা এক ছটাকও কমাতে রাজি নন সনিয়া গাঁধী।

আগামিকাল লোকসভা ও পরশু রাজ্যসভায় অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে বিতর্ক। সেই আলোচনার সময়ে মোদী মন্ত্রিসভার অভিযুক্ত তিন সদস্যকে অপসারণের দাবি আরও জোরালো করবে কংগ্রেস। আর এ সব নিয়ে সরকার বেকায়দায় পড়ছে দেখে, পণ্য-পরিষেবা কর বিলে তাঁদের তিনটি সংশোধনী প্রস্তাব নিয়েও এখন অনড় থাকারই বার্তা দিচ্ছেন আনন্দ শর্মা-অহমেদ পটেলরা।

সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহের সঙ্গে চায়ে পে চর্চার আগে সংসদের বক্তৃতায় বিরোধীদের সঙ্গে তিক্ততার অবসান ঘটানোর বার্তা দিয়েছিলেন মোদী। আগামী অর্থবর্ষ থেকে পণ্য-পরিষেবা কর চালু হবে বলে আজও জানান সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। জমি বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিন-তিনবার অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী, তিনিই পরশু বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার শক্তি দেখানোর তুলনায় সহমতের ভিত্তিতে এগোনোই ভালো। তার পরেই পণ্য-পরিষেবা কর বিল নিয়ে সনিয়া-মনমোহনের সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বৈঠকের কিছু ক্ষণ আগেই যদিও রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আচমকা ‘ডিগবাজি’ খাওয়াকে বিশ্বাস করছেন না তিনি। তাঁর মতে, এটা মোদীর শৈলীই নয়! আজ সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব অহমেদ পটেল স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, এর পরে বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেসের বিরোধিতা এতটুকুও কমবে না। পণ্য-পরিষেবা কর বিলটি নিয়ে পটেল বলেন, ‘‘কংগ্রেসের তিনটি দাবি সরকার যদি মেনে নেয়, তবেই সহযোগিতা করা হবে। দলের কৌশল কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আলোচনা করা হবে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গেও।’’ ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা জানাচ্ছেন, পণ্য-পরিষেবা কর হারের উর্ধ্বসীমা ১৮ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার যে প্রস্তাব দল দিয়েছে, তা থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই।

কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, পণ্য-পরিষেবা কর বিলে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস যদি সমর্থনও করে, সে ক্ষেত্রে সরকারকে শর্ত দেওয়া হবে, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর অত্যাচার দমন বিলটিও সংসদের চলতি অধিবেশনে পেশ ও পাশ করাতে হবে। ইউপিএ জমানায় সংসদে পেশ হওয়া এই বিলটি পাশ করাতে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সংসদে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে সমন্বয় কেবলমাত্র একটি বিল নিয়ে হতে পারে না। সব বিষয়েই আলোচনা জরুরি।’’ তবে সন্দেহাতীত ভাবেই কংগ্রেসের অনেক বেশি আগ্রহ অসহিষ্ণুতা ও মূল্যবৃদ্ধির আলোচনায়। দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘ব্যাপারটা শুধু অসহিষ্ণুতা নয়। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র করে গোটা দেশে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে মন্ত্রিসভার সদস্যরা যে ভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, তা অসহিষ্ণুতার থেকেও বিপজ্জনক ঘটনা।’’ কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, সংবিধান দিবসের আলোচনায় সনিয়া গাঁধী যেমন নেতৃত্ব দিয়েছেন, তেমনই এ বার অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্কে নেতৃত্ব দেবেন রাহুল গাঁধী। কাল লোকসভায় বিতর্কে হলে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন রাহুল। দলিত হত্যা, দাদরির ঘটনা ও সাহিত্যিকদের পুরস্কার ফেরানোকে নিয়ে কটাক্ষ করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ, সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা ও মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ানকে অপসারণের দাবি জানাতে পারেন তিনি। অসমের রাজ্যপাল পি বি আচার্যের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করার কথা ভেবেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল অহমেদ বলেন, বিরোধীদের সঙ্গে একবার চায়ের আড্ডায় বসেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্পর্কে আস্থা ফেরাতে পারেন না। বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মন্তব্য এখনও কেউ ভোলেননি। মোদী তাঁর প্রতি আস্থা সত্যিই ফেরাতে চাইলে অসহিষ্ণুতা বিতর্কে অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তিনি তেমন কোনও পদক্ষেপ না করলে বুঝতে হবে সাময়িক ভোল পাল্টেছেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজে ধর্মীয় মেরুকরণ ও বিভাজন তৈরিই বিজেপি তথা মোদীর আসল খেলা।

এই পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহে সংসদে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনে যদি পণ্য পরিষেবা কর বিল পাশও হয়, তা হলেও অন্তত এই সপ্তাহে তার কোনও আশা নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

sonia gandhi intolerance modi Modi government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy