মা দীপালি চাষার সঙ্গে বিক্রম। নিজস্ব চিত্র
প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় পিতৃহারা হন তিনি। সেই থেকে সংগ্রাম শুরু। তবে সদ্য আসাম সিভিল সার্ভিস পাশ বিক্রম চাষা একে নিজের সংগ্রাম বলতে রাজি নন। বললেন, “সংগ্রাম করেছেন আমার মা। বাবা বাগানের অ্যাম্বুল্যান্স চালাতেন। একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় মারা যান। বাধ্য হয়ে মা বাগানের কাজে যোগ দেন।” দুটি পাতা একটি কুড়ি সংগ্রহ করেই দুই সন্তানকে আজকের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন কাছাড়ের ডলু চা বাগানের দীপালি চাষা। আর্থিক চাপে কত সময় ছেলেরা কাজ খোঁজার কথা ভেবেছেন। চোখ রাঙিয়ে তাঁদের পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখতেন দীপালিদেবী। এমনকি ২০০৪ সালে মাধ্যমিক দেওয়ার কয়েক মাস আগে এক বার বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ দিনে এক বেলা খাবার জুটছিল না৷ তবু ছেলেদের কাজে নামতে দেননি দীপালিদেবী৷
সেই সুবাদেই বিক্রম অর্থবিদ্যায় এমএ করেন। পরে পিজিডিএম, বিএড। ২০১৩ সালে হাই স্কুলে চাকরি পান। ছাত্রদের পড়ানোর সঙ্গে নিজেও প্রস্তুত হচ্ছিলেন এসিএস পরীক্ষার জন্য। প্রথমবারেই পাশ। গত সপ্তাহে প্রকাশিত আসাম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ২৪-তম স্থান লাভ করেছেন তিনি। ৩১ বছর বয়সি বিক্রম বললেন, ‘দারিদ্র আর দুঃখকষ্টকে সঙ্গী করেই বড় হয়েছি। তাই যখনই যে দায়িত্ব পাব, সরকারি প্রকল্পকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।” এসিএস প্রত্যাশীদের কাছে তাঁর পরামর্শ, নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়তে হবে। বিশেষ করে, সম্পাদকীয় পাতা খুঁটিয়ে পড়া চাই। সাধারণ জ্ঞানের ৫০ শতাংশ ওখানেই উঠে যাবে। খুব বেশি বইপত্র কিনে পড়ার সুযোগ ছিল না বিক্রমের। বললেন, “নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ে বেশ উপকার পেয়েছি।”
এসিএস হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর। সোজাসাপ্টা বলেছেন, দুর্নীতি না হওয়াতেই তাঁর পক্ষে পাশ করা সম্ভব হয়েছে। নয়তো তাঁর মতো বাগান শ্রমিকের ছেলের এসিএস হওয়া সম্ভব হত না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই শপথ নিয়েছেন, দুর্নীতিতে জড়াবেন না কখনও।
কাছাড়ের চা বাগান থেকে এর আগে বিক্রম কৈরি আইএএস হয়েছেন। তিনি বর্তমানে মাজুলির জেলাশাসক। আর এক বিক্রম, আর এক চা বাগানের সন্তান সিভিল সার্ভিস পাশ করেছেন জেনে ফোন করেছেন কৈরি। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁকে। তবে কাছাড়ের চা বাগান বা চা জনগোষ্ঠী থেকে মন্ত্রী, বিধায়ক, অফিসার অনেক হয়েছেন, কিন্তু বিক্রম চাষার মত একেবারে শ্রমিক পরিবার থেকে উঠে আসার নজির খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy