প্রতীকী ছবি।
ত্রিপুরায় স্টেট রাইফেলস তথা টিএসআরে জওয়ান নিয়োগের মেধা তালিকা প্রকাশিত হতেই তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রাজ্যে। সম্প্রতি ১৪৩৭ জনের মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এর পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। গত কয়েক দিন ধরে চাকরি প্রত্যাশীরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর চালাচ্ছেন।
সিপাহীজলা জেলায় চড়িলাম-বিধানসভা কেন্দ্রের এক বিজেপি ‘পৃষ্ঠা প্রমুখ’ সংবাদমধ্যমের সামনেই বলেছেন, “ছেলের চাকরির জন্যে বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে টাকা দিয়েছি। তার পরেও চাকরি হয়নি।” মেধা তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে তাতে। গত কাল কিছু বিক্ষুব্ধ চাকরি প্রত্যাশী সচিবালয়ের মূল ফটকের বাইরে বিক্ষোভ দেখানন। একাংশ চাকরি প্রত্যাশী গত কাল ও আজ ত্রিপুরা হাই কোর্টের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করলেও তাঁরা সরতে রাজি হননি। পুলিশ তখন লাঠি চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে এডিনগর পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাই কোর্ট চত্বরে পুলিশ ও টিএসআরের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
বিজেপির দাবি, সমস্ত সরকারি নিয়ম মেনেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে চাকরি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, “রাজ্যে চাকরি নিয়ে এমন কেলেঙ্কারি কখনও হয়নি। বিজেপি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। প্রায় চার বছরের মাথায় চাকরি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। বিজেপির নেতারাই একে অপরের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করছেন!” চাকরি নিয়ে বিদ্রোহ আগামী দিনে গণবিদ্রোহে পরিণত হতে পারে বলে মনে করেন জিতেন্দ্র। তাঁর দাবি, প্রশাসনের উপরতলাও এতে যুক্ত। জিতেন্দ্রর কটাক্ষ. “বিজেপি এত দিন স্বচ্ছতা নিয়ে দাবি করে আসছে। এই হচ্ছে তাদের স্বচ্ছতার নমুনা। এই সরকারের আমলে ভোট হোক বা কোনও বিলি-বণ্টন, কিংবা চাকরি— কোথাও কোনও স্বচ্ছতা নেই। সব চলছে দলের নির্দেশে।”
জিতেন্দ্রর দাবি উড়িয়ে বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্যের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএম জমানায় শুধু তাদের দলীয় সমর্থকদের চাকরি দেওয়া হত। এখন তা হচ্ছে না। রাজ্য সরকার নীতি মেনে যোগ্য যুবকদের চাকরি দিচ্ছে। বিজেপি কর্মকর্তাদের টাকা নেওয়ার অভিযোগ দলীয় ভাবে তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বিজেপির ওই মুখপাত্র। যাঁরা অর্থ দেওয়ার অভিযোগ করছেন, তাঁদের পুলিশের কাছে যেতে পরামর্শ দেন তিনি।
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরা হাই কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে এই কেলেঙ্কারির তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দলের রাজ্য আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক বলেন, “বিজেপি সরকার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যুবকদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছে। অধিকাংশ চাকরি হয়েছে অর্থ লেনদেনের ভিত্তিতে। বেকারদের বিক্ষোভের মুখে, জনরোষ থেকে বাঁচতে নেতা-মন্ত্রীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।” এই বেকারদের কাছ থেকে যারা লক্ষাধিক করে টাকা নিয়েছে, নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুবল। বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু বলেন, “কোন বিষয়ে তদন্ত চাওয়া হচ্ছে! পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে তৃণমূল কর্মীদের পুলিশে নিয়োগ করা হয়। এটা তো সকলের জানা।”
টিএসআর নিয়োগে মেধা তালিকা নিয়ে অসন্তোষের জেরে গত কাল থেকেই বিজেপি কার্যালয়গুলিকে নিশানা করা শুরু হয়েছে। সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় মধুপুর এবং গকুলনগর বিজেপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর হয়েছে। অমরপুর, বিলোনিয়া, গন্ডাছড়া, ধর্মনগর, সোনামুড়া-সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, অর্থের বিনিময়ে লিখিত পরীক্ষায় মাত্র ২৬ নম্বর পাওয়া, শারীরিক পরীক্ষায় দৌড়ে অসফল প্রার্থীরাও মেধা তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। ২২০০ পদে নিয়োগের ঘোষণা হয়েছিল। মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ১৪৩৭ জনের। বিক্ষুব্ধ বেকারদের দাবি, সব অনিয়ম দূর করে সব পদের জন্য নতুন মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এই মেধা তালিকা বাতিলের দাবি জানিয়ে ত্রিপুরা হাই কোর্টে মামলা করতে চাইছেন তাঁরা। কিন্ত, আদালতে শীতকালীন অবকাশ চলছে। ফলে, এখন মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরেও প্রভাব ফেলতে পারে। চাকরি প্রত্যাশীরা যদি আগামী ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে গিয়ে স্লোগান তোলেন বা বিক্ষোভ দেখান, তাতে বিপ্লব দেব সরকারের মুখ পড়বে বলে মনে করছেন রাজনীতির লোকজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy