Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Weather

উত্তর ভারত কাঁপছে তুষারপাতে, দোসর বৃষ্টিতে জটিল পরিস্থিতি, পর্যটকদের পোয়াবারো

দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু-পুদুচেরি যখন ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’-এর দাপটে ত্রস্ত, সে সময় উত্তর ভারতেও চলছে আর এক প্রাকৃতিক শক্তির ‘তাণ্ডব’। প্রবল তুষারপাতে কাঁপছে হিমাচল থেকে কাশ্মীর।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ১৬:২৯
Share: Save:

যে দিকে নজর যায় শুধু বরফসাদা প্রান্তর!

পথঘাট, বাড়ির কার্নিশ-ছাদ, পাতাহীন গাছের ডাল— সবই তুষারের পুরু চাদরে মোড়া। চাপা পড়েছে খোলা আকাশের নীচে ক্যাফের চেয়ার-টেবিল, গাড়ির মাথা বা খোলা বারান্দায় রাখা টবের গাছ। তবে তাতেও যেন কুছপরোয়া নেই পর্যটকদের। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ বা কাশ্মীর উপত্যকায় বৃহস্পতিবার এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।

দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু-পুদুচেরি যখন ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’-এর দাপটে ত্রস্ত, সে সময় উত্তর ভারতেও চলছে আর এক প্রাকৃতিক শক্তির ‘তাণ্ডব’। প্রবল তুষারপাতে কাঁপছে হিমাচল থেকে কাশ্মীর। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানী দিল্লি থেকে মরুরাজ্য রাজস্থানে। পঞ্জাব থেকে উত্তরপ্রদেশে। শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তর ভারত।

আরও পড়ুন: ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ক্ষত কোনওদিন ভুলবে না ভারত: মোদী

তবে, এরই মাঝে পোয়াবারো দেশের ওই প্রান্তে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের। বরফের লোভে তুষারপাত উপেক্ষা করেও পাহাড়ি পথে ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়াতে সে ছবি চোখে পড়ছে।

সোমবার, ২৩ নভেম্বর কাশ্মীর উপত্যকায় মরসুমের প্রথম তুষারপাত হয়েছিল। উপত্যকায় এতটাই তুষারপাত হয় যে, তার প্রভাবে দিল্লির পারদ এক ধাক্কায় নেমে যায় ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ২০০৩-এর নভেম্বরের পর রাজধানী এতটা ‘ঠান্ডা’ হয়ে যায়নি। ওই দিন দিল্লির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি কম ছিল।

গত কয়েক দিন ধরেই কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশের নানা প্রান্তে তুষারপাত হচ্ছে। সঙ্গে দোসর বৃষ্টি। শিমলার আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর মনমোহন সিংহ বলেন, ‘‘লাহুল-স্পিতি, শিমলা, কল্পা, কোঠি, উদয়পুর, গন্ডলা, হন্সায় তুষারপাত শুরু হয়েছে। বুধবার কল্পাতে ১৫ সেন্টিমিটার তুষারপাত হয়েছে। সে দিন কোঠিতে ১০ সেন্টিমিটার এবং উদয়পুরে ৫ সেন্টিমিটার তুষারপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’’

তবে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে হাল্কা বৃষ্টিপাতে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী, মানালি এবং জুব্বলে ১৬ মিলিমিটার, বনজরে ৬ মিলিমিটার, ওয়াংটুতে ৪ মিলিমিটার এবং ধর্মশালায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন: তামিলনাড়ুতে মৃত ৩, বিপর্যস্ত পুদুচেরি, শক্তি হারাচ্ছে নিভার

তুষার এবং বৃষ্টির এই ‘সচিন-সৌরভ’ জুটিতে একলাফে নেমে গিয়েছে তাপমাত্রা। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা লাহুল-স্পিতির প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, জেলায় কেলং-এর তাপমাত্রা কমে হয়েছে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য দিকে, কল্পতে দিনের বেলাতেই হিমাঙ্কের নীচে (০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়ালে) নামে পারদ। শিমলা (৬.৫ সেলসিয়াস), ডালহৌসি (২.৩ সেলসিয়াস), মানালি (৩.৮ সেলসিয়াস) বা কুফরি (৩.৯ সেলসিয়াস)-র তাপমাত্রাও উল্লেখযোগ্য নেমে গিয়েছে।

তবে, প্রবল ঠান্ডায় হিমাচলে কাঁপুনি শুরু হলেও তা দমাতে পারেনি পর্যটকদের। আবহাওয়ার এই বিরূপ মনোভাব উপেক্ষা করেই লাহুল-স্পিতির পাহাড়ি এলাকায় ভিড় জমিয়েছেন তাঁরা। পর্যটকদের সার সার গাড়ি গিয়ে ঠেকেছে পাহাড়ের কোলে। নিজেদের মধ্যে বরফের বল ছোড়াছুড়ি করে খেলায় মেতেছেন তাঁরা। হিমাচলের সোলান জেলার বাসিন্দা পেশায় স্কুলশিক্ষিকা নেহা ঠাকুর বলেন, ‘‘এই এলাকায় বরফ দেখতেই ভিড় করেন সমতলের পর্যটকেরা। তাই আবহাওয়া খারাপ হলেও তা নিয়ে পরোয়া নেই তাঁদের। তুষারপাত দেখতে অনেকেই বাইরে বেরিয়েছেন।’’ যদিও অতিমারির আবহে আগের থেকে হিমাচলে পর্যটক অনেক কমে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন নেহা।

হিমাচলের মতোই শীতের দাপট দেখা গিয়েছে কাশ্মীর উপত্যকাতেও। লাদাখের সঙ্গে যে শ্রীনগর-লেহ্‌ সড়কপথ জুড়েছে কাশ্মীর উপত্যকাকে, তুষারপাতের ফলে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। বন্ধ রাখা হয়েছে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কও। রামবন জেলায় দেখা দিয়েছে ধস। উত্তর কাশ্মীরে গুলমার্গের বিখ্যাত স্কি-রিসর্ট ঢাকা পড়েছে চার ইঞ্চির পুরু তুষারপাতে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দক্ষিণ কাশ্মীরের পহলগাঁওতে ১০ সেন্টিমিটার তুষারপাত হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের পাহাড়ি এলাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস। শ্রীনগরের শাল ব্যবসায়ী আজাদ শাহ অবশ্য জানিয়েছেন, তুষারপাতের মধ্যেও স্থানীয় দোকানপাট খোলা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘পহেলগাঁও, গুলমার্গ বা জোজিলা পাসে অনেকেই পথে বেরিয়েছেন। দিনদুয়েক আগে প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও আজ রোদ উঠেছে।’’

হিমাচল বা কাশ্মীরের এই বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবে বুধবার হরিয়ানার হিসারে তাপমাত্রা কমে হয়েছিল ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্জাবের ভাটিন্ডা (৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে তাপমাত্রা নেমেছে হিমাঙ্কের নীচে। উত্তরপ্রদেশে পারদ নামার পাশাপাশি বহু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহও শুরু হয়েছে।

তবে, এই পরিস্থিতিতেও পর্যটকদের উপভোগের মাত্রা কমেনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy