সংবিধানের প্রতি মোদীর চেয়ে বেশি শ্রদ্ধাশীল কেউ নন, প্রমাণে মরিয়া বিজেপি। — ফাইল চিত্র।
নিজেদের তোলা ইস্যু নিয়ে নিজেরাই নীরব হয়ে গেল কংগ্রেস। কিন্তু ময়দান ছাড়ল না বিজেপি। সংবিধানের প্রতি নিষ্ঠা এবং সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব অম্বেডকরের প্রতি শ্রদ্ধার প্রশ্ন তুলে সংসদের ভিতরে-বাইরে বিজেপিকে চেপে ধরেছিল কংগ্রেস-সহ গোটা বিরোধী শিবির। জরুরি অবস্থা এবং অম্বেডকরের সঙ্গে কংগ্রেসের ‘অসহযোগিতা’র তত্ত্ব তুলে পাল্টা আক্রমণে নেমেছিল বিজেপি-ও। সপ্তাহ খানেক কাটতে না কাটতেই সে ইস্যু প্রায় ভুলতে বসেছেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু বিজেপি এ বার দেশজোড়া ‘সংবিধান গৌরব অভিযান’ ঘোষণা করে দিল।
চলতি মাসেই গোটা ভারত জুড়ে বিজেপি পালন করবে ‘সংবিধান গৌরব অভিযান’। কর্মসূচি চলবে টানা ১৫ দিন ধরে। ১১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি। রাজ্য থেকে মণ্ডল, সব স্তরের জন্য আলাদা আলাদা কর্মসূচি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে দিল্লির ৬ নম্বর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ। রাজ্যে রাজ্যে এ বার তা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি শুরু হয়ে গেল। ৫ জানুযারি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির কর্মীদের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। সংগঠনের কোন কোন স্তরকে কোন তারিখে, কোন কর্মসূচি পালন করতে হবে, বিশদে জানানো হয়েছে সেই ‘প্রদেশ পত্রক’-এ। পশ্চিমবঙ্গে এই কর্মসূচির আহ্বায়ক করা হয়েছে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালকে। সহ-আহ্বায়ক হিসাবে রাখা হয়েছে শারদ্বত মুখোপাধ্যায়, বিমলশঙ্কর নন্দ-সহ চার জন জনকে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিটি রাজ্যের রাজধানী-সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে মোট ৫০টি সভা হবে। দেশের সংবিধানের গৌরব এবং বাবাসাহেব অম্বেডকরের ভূমিকা সম্পর্কে সে সব সভায় বক্তৃতা করার জন্য হাজির থাকবেন কোনও না কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
জেলা স্তরে এই সভাগুলি আয়োজনের দায়িত্ব বর্তাচ্ছে বিজেপির তফসিলি মোর্চার উপর। কর্মসূচির নাম হবে ‘আমার সংবিধান-আমার স্বাভিমান’। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কেও প্রচারের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব অম্বেডকরের সঙ্গে কংগ্রেস কত রকমের ‘বৈরিতা’ করেছে, সে নিয়ে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তফসিলি ছাত্রাবাসগুলিতে। যুব মোর্চাকে এই ‘সম্পর্ক অভিযান’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে সব জেলায় তফসিলি জনসংখ্যা বেশি, সেখানে এই ১৫ দিনের মধ্যে জনসভা ও শোভাযাত্রা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির প্রতিটি মণ্ডল কমিটিকে ২৫ জানুয়ারি এই কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন নেতৃত্ব। বিজেপি নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সাক্ষাৎকার, ব্লগ, সোশ্যাল মি়ডিয়া পোস্টের মাধ্যমে ‘সংবিধানের প্রতি বিজেপির দায়বদ্ধতা’র কথা তুলে ধরতে। তফসিলি সমাজভুক্ত সমাজমাধ্যম প্রভাবীদের এই কাজে শামিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তফসিলি সমাজের মন জয় করাই যে বিজেপির এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য, তা সংগঠনের ‘পত্রক’ থেকেই স্পষ্ট। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে বড় ধস নেমেছিল বিজেপির তফসিলি ভোটব্যাঙ্কে। ৪০০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলে বিজেপি সংবিধান সংশোধন করে তফসিলি সংরক্ষণ তুলে দেবে— ভোটের আগে গোটা দেশে এই প্রচার চালিয়েছিল কংগ্রেস। তার জেরেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির তফসিলি জনসমর্থন ধাক্কা খায় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। তবে তার কয়েক মাসের মধ্যেই মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচনে তফসিলি এলাকায় বিজেপি ফের ভোট বাড়িয়ে নিয়েছে। এই আবহেই সামনে দিল্লির বিধানসভা ভোট। চলতি বছরের শেষ দিকে হবে বিহারের বিধানসভা ভোটও। তাই বিন্দুমাত্র ঝুঁকি না নিয়ে দেশজুড়ে অম্বেডকর-ভজনা জারি রাখার সিদ্ধান্ত মোদী-শাহ-নড্ডার।
সংবিধানের ৭৫ বছর উপলক্ষে সংসদে বিশদ বিতর্ক হয়েছে সংবিধান প্রসঙ্গে। সেই বিতর্কেই অমিত শাহের একটি মন্তব্যকে তুলে ধরে বিজেপি-কে বিতর্কের ঘূর্ণিপাকে ফেলে দিয়েছিল কংগ্রেস-সহ গোটা বিরোধী শিবির। বিজেপি-ও জরুরি অবস্থার কথা এবং অম্বেডকরের সঙ্গে নেহরু জমানার কংগ্রেসের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে পাল্টা আক্রমণে নেমেছিল। কিন্তু গোটা বিরোধী শিবিরের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে বিজেপিকে কিছুটা ব্যাকফুটেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই ইস্যু বেশি দিন জিইয়ে রাখতে পারল না কংগ্রেস। বরং দেশজোড়া ‘সংবিধান গৌরব অভিযান’ ঘোষণা করে খড়্গেদের হাত থেকে ইস্যু ছিনিয়ে নেওয়ার পথে এখন নড্ডারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy