দুই সন্তানকেই কেড়ে নিল দুর্ঘটনা। দেহ আঁকড়ে মা। ছবি: এএফপি।
মাত্র এক ঘণ্টায় বদলে গেল সব কিছু। সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য সন্তানকে তৈরি করে দিয়েছিলেন মা। আর ঠিক এক ঘণ্টা বাদে বাচ্চার মৃতদেহ কোলে নিয়ে নিথর হয়ে বসে তিনি। আর এক জন আবার ছেলেকে বারবার পাগলের মতো আদর করছিলেন। এর পরে যে আর সেই সুযোগটুকুও থাকবে না! বৃহস্পতিবার সকালে তেলঙ্গানার মেডক জেলার মাসাইপেট গ্রামে স্কুলবাসের সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে ১৪ জন পড়ুয়া। মারা গিয়েছেন বাস চালক এবং তাঁর সহকারী। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের। আহতের সংখ্যা কুড়ির বেশি। তাদের হায়দরাবাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে স্থানীয় ইসলামপুর গ্রাম থেকে তুপরানের একটি বেসরকারি স্কুলে ৪০ জন ছাত্রছাত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাচ্ছিল একটি স্কুলবাস। ৯টা নাগাদ মাসাইপেট গ্রামের একটি রক্ষীহীন লেভেল ক্রসিং পেরোনোর সময়ে আচমকাই বাসটিকে ধাক্কা মারে নানদেড়-সেকন্দরাবাদ প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ধাক্কা মারার পর বাসটিকে প্রায় ৫০ মিটার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় ট্রেনটি। মৃতদের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে কেউ কেউ নার্সারির পড়ুয়া। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “মূহূর্তের মধ্যেই গোটা ঘটনাটা ঘটে গেল। চারদিকে চাপ চাপ রক্ত। দুমড়ানো-মুচড়ানো বাসের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাচ্চাদের স্কুলব্যাগ, জলের বোতল।”
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন স্কুলবাস চালাছিলেন এক জন নতুন চালক। কারণ রোজ যিনি বাস চালান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। মাসাইপেট গ্রামে দু’টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে যেখানে রক্ষী আছেন। কিন্তু চালক সেই পথে না গিয়ে দ্রুত স্কুলে পৌঁছনোর জন্য রক্ষীহীন লেভেল ক্রসিং পেরনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার ফলেই এই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে মনে করছেন মেডকের জেলাশাসক এ শরত। জিআরপি আইজি কৃপানন্দ ত্রিপাঠি উজেলা জানিয়েছেন, দূর থেকে যে ট্রেন ছুটে আসছে, তা চালক দেখতে পাননি। আর লেভেল ক্রসিংয়েও কোনও রক্ষী ছিল না। ফলে আটকানো যায়নি দুর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তথা কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনও শুরু হয়েছে।
মেডকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুলবাস। ছবি: পিটিআই।
তেলঙ্গানার টিআরএস সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়ানি নরসিংহ রেড্ডির দাবি, ওই লেভেল ক্রসিংয়ে রক্ষী মোতায়েন করার জন্য গ্রামবাসীরা বহুবার রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। দিয়েছেন স্মারকলিপিও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একই অভিযোগ রাজ্যের সেচমন্ত্রী টি হরিশ রাওয়েরও। লোকসভায় রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার পাল্টা দাবি, বাসচালকের ভুলেই দুর্ঘটনা হয়েছে। ক্রসিং পার হওয়ার সময়ে তিনি উপযুক্ত সতর্কতা নেননি। রেল জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ সালের পরে দেশে রক্ষীহীন ক্রসিং থাকবে না। কিন্তু ক্রসিং পার হওয়ার সময়ে সতর্ক হওয়াও প্রয়োজন।
আজ ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শতাধিক গ্রামবাসী। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন। রেলও মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ, গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ ও সামান্য আহতদের ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy