আফতাবকে কখনওই পছন্দ করেননি শ্রদ্ধার বাবা। ফাইল চিত্র।
মেয়ের সঙ্গে গত দেড় বছর কথা হয়নি ষাট ছুঁই ছুঁই প্রৌঢ়ের। দেখা হয়েছিল আরও ছ’মাস আগে। তার পরও মেয়ে শ্রদ্ধা ওয়াকারকে নিয়ে বিশেষ দুশ্চিন্তা ছিল না বাবা বিকাশ ওয়াকারের। তাঁর দৃঢ় ধারণা ছিল, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, তাঁর ‘বুঝদার’ মেয়ে সামলে নেবে সব। যেমনটা আগেও সামলাতে দেখে এসেছেন তিনি। সেই মেয়ের দেহের টুকরো খুঁজতে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে বিকাশ বলেই ফেললেন, ‘‘একা হাতে চাকরি আর বাড়ি সামলাত ও। আমি ভাবতে পারছি না ওর এমন পরিণতি হবে!’’
বিকাশ জানিয়েছেন, মেয়ের সঙ্গে শেষ বার যখন তাঁর দেখা হয়, তখন আফতাবকে নিয়েই মনোমালিন্য হয়েছিল তাঁদের। সেটা ২০২০ সাল। কিছু দিন আগেই মাকে হারিয়েছেন শ্রদ্ধা। বাবা-মা আলাদাই থাকতেন। মায়ের কাছেই থাকতেন শ্রদ্ধা এবং তাঁর ভাই-বোনেরা। সে দিন শ্রদ্ধা বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। আফতাবের প্রসঙ্গ উঠতেই আপত্তি জানিয়েছিলেন বিকাশ। মেয়েকে বলেছিলেন, অন্য ধর্মে সম্পর্ক কোনও মতেই মেনে নেবেন না তিনি। এতে সমাজে মুখ পুড়বে তাঁর। শ্রদ্ধাকে বলেছিলেন, যদি এই সম্পর্কে থাকতে হয়, তবে মেয়ে যেন চেনা পরিচিতির গণ্ডির বাইরে চলে যায়। বাবার কথা শুনেই বাড়ি ছেড়েছিলেন শ্রদ্ধা। বিকাশ জানতে পেরেছিলেন, আফতাবের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেছে মেয়ে। আফতাবকে পছন্দ না করলেও তিনি এর পর আর কিছু বলেননি। তবে বিপদের আঁচও পাননি।
বিকাশ জানিয়েছেন, কলেজে পড়াকালীন অত্যন্ত শান্তশিষ্ট তরুণী ছিলেন শ্রদ্ধা। কিন্তু স্নাতক হওয়ার ঠিক আগেই হঠাৎ মেয়ের আচরণ বদলে যেতে শুরু করে বলে জানান শ্রদ্ধার বাবা। কিন্তু দায়িত্ববোধ ছিল প্রবল। সাহসও ছিল মেয়ের। মা মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব কিছু একা সামলাত সে। কিন্তু এই মেয়ে আফতাবের সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিল, তা ভাবতেই পারছেন না মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী বিকাশ।
মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বিকাশ বলেছেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে কথা হত তাঁর। কিন্তু শ্রদ্ধা কখনও তাঁকে আফতাবের অত্যাচারের কথা বলেনি। মেয়ের মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের থেকে তিনি জানতে পারছেন, আফতাব প্রায়ই চিৎকার করত তাঁর মেয়ের উপর। শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচারও করত। কিন্তু তার পরও বন্ধুরা যখন এই অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক থেকে শ্রদ্ধাকে বের করে আনতে চেয়েছে, শ্রদ্ধা রাজি হয়নি।
জঙ্গলে মেয়ের দেহের টুকরো খুঁজে বেড়ানো ষাট ছুঁই ছুঁই প্রৌঢ় বলেছেন, এই শ্রদ্ধাকে তাঁর মেয়ের সঙ্গে মেলাতেই পারছেন না তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy