পরিজনেরা দেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। ছবি: পিটিআই।
১০…২০…৫০…!
হাসপাতালের মর্গে এ ভাবে লাশের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছিল। শিশু থেকে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, মহিলা— চোখের সামনে নিথর হয়ে পড়ে ছিলেন তাঁরা। টেম্পো, বাসে ভরে ভরে দেহ আসছিল। আর সেগুলি মর্গে রাখা হচ্ছিল। হাসপাতাল জুড়ে স্বজনহারাদের কান্নার রোল— সব মিলিয়ে পরিবেশ আরও শোকাতুর হয়ে উঠেছিল।
হাথরসে পদপিষ্টের ঘটনার পরই এটা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মোতায়েন করা হয়েছিল দুই পুলিশকর্মীকে। তাঁদের মধ্যে এক জন কনস্টেবল রবি কুমার। দুপুর ২টোর পর থেকেই লাশের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল হাসপাতালে মর্গে। হাসপাতালে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তাঁদের মধ্যে রবি এবং তাঁর এক সহকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছিল মর্গের সামনে।
চোখের সামনে এত মৃত্যু, রক্ত, আর্তনাদ দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি রবি। তাঁর সহকর্মী জানান, হাসপাতালের মর্গে যখন লাশের সংখ্যা বাড়ছিল, রবি সেই সব লাশ দেখে খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। মর্গের সামনেই অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন। তখনও বোঝা যায়নি তাঁর মধ্যে কী চলছে। আচমকাই রবি অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় রবির। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই পুলিশকর্মীর।
রবির সহকর্মী জানিয়েছেন, রক্ত, মৃতদেহ, ময়নাতদন্ত— এ সব পরিস্থিতির সঙ্গে পুলিশকর্মীরা খুবই পরিচিত। নিত্য দিন তাঁদের এ সব নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। ১০ বছরের কর্মজীবনে রবি নিজেও বহু বার বহু মৃত্যু দেখেছেন, রক্তপাত দেখেছেন। কিন্তু নিজের কর্তব্য থেকে বিরত থাকেননি। কিন্তু হাথরসের এই দৃশ্য দেখে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারেননি। তাঁর মনে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিল। তাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু রবির যে মৃত্যু হবে, সেটা মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সহকর্মীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, সিদ্ধার্থ নগরে থাকতেন রবি। ২০১৪ সালে কাজে যোগ দেন। ২০২২ সালে অওয়াগড় থানায় বদলি হয়ে আসেন। এ বছরের ১৬ জুন পুলিশ লাইনে কুইক রেসপন্স টিমে (কিউআরটি) যোগ দেন। মঙ্গলবার হাথরসের মুঘলাগড়ি গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১২১। আহত আরও বহু। এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। নানা প্রশ্ন উঠে আসছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আয়োজকদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করে মামলা শুরু করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy