কাছাকাছি আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন দুই তুতোভাই— রাজ ও উদ্ধব ঠাকরে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্র তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও। কিন্তু ঠাকরে পরিবারে এই পুনর্মিলন কি সত্যিই হচ্ছে? এখনই সেই সম্ভাবনা নেই বলে ইঙ্গিত দিলেও, আশা জিইয়ে রাখলেন উদ্ধব-ঘনিষ্ঠ নেতা।
উদ্ধবের শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত দাবি করেছেন, এই মুহূর্তে জোট নিয়ে উদ্ধব এবং রাজের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। হয়েছে শুধুই আবেগপূর্ণ কথাবার্তা! সঞ্জয় বলেন, ‘‘রাজ এবং উদ্ধব দুই ভাই। আমরা বহু বছর একসঙ্গে ছিলাম। আমাদের সম্পর্ক কখনওই ভাঙেনি। জোট নিয়ে যা ঠিক করার দুই ভাই-ই করবেন। উদ্ধবজি বলেছেন, মহারাষ্ট্রের জন্য যদি আমাদের কাছাকাছি আসতে হয়, তা হলে তা-ই করা হবে।’’
মহারাষ্ট্রের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকেরই ধারণা ছিল, শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে হয়তো তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে ভাইপো রাজকেই বেছে নেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বালাসাহেব তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে পুত্র উদ্ধবকেই বেছে নেন। অভিমানে শিবসেনা ত্যাগ করেন রাজ। ২০০৫ সালে গড়ে তোলেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। তার পর থেকে উদ্ধব ও রাজ সব সময়েই বিপরীত শিবিরে। শিবসেনার সর্বশেষ ভাঙনের পর ঠাকরে পরিবারের এই পুনর্মিলনের সম্ভাবনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় এনে দিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষানীতির ত্রিভাষা সূত্রকে সামনে রেখে মহারাষ্ট্রের মরাঠি ও ইংরেজি ভাষার স্কুলগুলিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি বাধ্যতামূলক করেছে দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার। বিরোধীরা তো বটেই, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্রে বিজেপির জোট শরিকদেরও প্রবল অস্বস্তিতে ফেলেছে। এত দিন ধরে বিজেপির কাছাকাছি থাকা মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার নেতা রাজ খোলাখুলি ভাবেই ফডণবীস সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় নেমেছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ফডণবীস সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় মাঠে নামতে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও হাত মেলাতে আপত্তি নেই তাঁর। একই রকমের ইঙ্গিত দিয়েছেন উদ্ধবও। বলেছেন, ‘‘ছোটখাটো বিরোধকে দূরে সরিয়ে (রাজের) কাছাকাছি আসতে আমি তৈরি। আমি সব সংঘাত শেষ করতে রাজি। মহারাষ্ট্রের স্বার্থই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের।’’
তবে একই সঙ্গে নাম না করে রাজের উদ্দেশে শর্তও দিয়েছিলেন উদ্ধব। বলেছিলেন, ‘‘প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাঁরা মহারাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজ করবেন, বাড়িতে ডেকে তাঁদের খাওয়ানো চলবে না। কারণ, এমন কাউকে স্বাগত জানানো যায় না।’’ একই সুর শোনা গেল সঞ্জয়ের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘উদ্ধবজি বলেছেন, মহারাষ্ট্রের ভাল চায় বলে অনেক রাজনৈতিক দলই দাবি করে থাকে। কিন্তু তারা আসলে মহারাষ্ট্রের শত্রু। বালাসাহেবের দল ভেঙে তারা আসলে মহারাষ্ট্রের গৌরব নষ্ট করেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক রাখাই উচিত নয়। এটা কোনও শর্ত নয়। আসলে মহারাষ্ট্রের মানুষ এটাই চান।’’
রাজ-উদ্ধবের পুনর্মিলনের সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস। তিনি বলেন, ‘‘দু’জন মানুষ যদি নিজেদের বিবাদ ভুলে কাছাকাছি আসে, সেটা তো ভালই ব্যাপার। আর কী বলতে পারি?’’