গত কয়েক দিনে ‘রক্তক্ষরণ’ হয়েছে উদ্ধব ঠাকরের শিবিরে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ আগেই খুইয়েছিলেন। এর পর গত কয়েক দিনে আরও ‘রক্তক্ষরণ’ হয়েছে উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে শিবসেনার নাম ও নিশান খোওয়ানোর পর শিবসেনার লোকসভা এবং রাজ্যসভা সাংসদদের জন্য বরাদ্দ ঘরটিরও দখল হারিয়েছে উদ্ধব গোষ্ঠী। নাম এবং প্রতীকের মতো এই সংসদ কক্ষেরও দখল গিয়েছে শিন্ডেগোষ্ঠীর কাছে। এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে তা হলে কি এ বার শিবসেনার যাবতীয় সম্পত্তি ও তহবিলও উদ্ধবের কাছ থেকে নিয়ে কুক্ষিগত করবেন একনাথ শিন্ডে?
প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে প্রতিষ্ঠিত দলের ‘পক্ষ প্রমুখ’ (মুখ্য নেতা) পদ পেয়েছেন একনাথ শিন্ডে। তিনিই এখন শিবসেনার ‘প্রকৃত মুখ’। তাঁর দাবি তিনিই দলের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। সেই জন্যই অধিকার দখলের দাবি নিয়ে নেমে উদ্ধবের কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে একে একে দলের নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘তির-ধনুক’ ব্যবহারের অধিকার থেকে শুরু করে মুখ্য নেতা সবই পেয়েছেন শিন্ডে। তাই মনে করা হচ্ছে শীঘ্রই দলের সব সম্পত্তি এবং তহবিলের অধিকারও নিজের হাতের মুঠোয় আনার চেষ্টা করবেন তিনি। আর তা রক্ষা করার জন্য আবার লড়াইয়ে নামতে হবে বালাসাহেবের পুত্র উদ্ধবকে। সূত্রের খবর, উদ্ধবকে আরও শক্ত ‘নাগপাশে’ জড়িয়ে ফেলতে শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর শিন্ডের দফতরে আইনি এবং আর্থিক পরামর্শ শুরু হতে চলেছে। যদিও উদ্ধবের দাবি, দলের সম্পত্তি এবং তহবিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই। কিন্তু শিন্ডে গোষ্ঠী যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে মনে করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই শিবসেনার সবটুকু দখলের জন্য তারা ময়দানে নামতে চলেছে। আর তা বাস্তবায়িত হলে উদ্ধব এবং শিন্ডেকে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে নামতে দেখা যেতে পারে।
শিন্ডে জানিয়েছিলেন, “আমরা দলের তহবিল এবং সম্পত্তিতে আগ্রহী নই। আমরা বালাসাহেব ঠাকরের আদর্শের উত্তরাধিকারী।’’ কিন্তু শিন্ডেগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় সূত্রের দাবি, শিবসেনার যাবতীয় সম্পত্তি এবং তহবিলগুলির ‘সংরক্ষণ’ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই সূত্র বলেছে, “শিন্ডেগোষ্ঠী শিবসেনার তহবিল এবং সম্পত্তি দখল করতে চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য সেগুলি সংরক্ষণ করা।”
এক জন আইনজীবী ইতিমধ্যেই চ্যারিটি কমিশনারের কাছে শিবসেনার সদর দফতর ‘শিবসেনা ভবন’ সম্পর্কে জানতে চেয়ে একটি নোটিস জারি করেছেন। শিবায় ট্রাস্টের মালিকানাধীন সেনা ভবনকে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে এই ভবনের দখল রয়েছে উদ্ধব গোষ্ঠীর কাছেই। তবে শিন্ডে এটিরও দাবি করতে পারেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ট্রাস্টের মালিকানাধীন সম্পত্তি বাঁচাতে উদ্ধব শীঘ্রই আইনজীবী এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সঙ্গে পরামর্শ শুরু করতে পারেন বলেও জানা গিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবসেনার এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, ‘‘সেনা ভবন কেবল শিবায় ট্রাস্টের মালিকানাধীন সম্পত্তি নয়। চারটি ভিন্ন ট্রাস্ট রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। তহবিল রয়েছে। আমরা এখনও এই তহবিলে কত টাকা আছে জানি না। আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আছে। তবে তার সত্যাসত্য জানি না। নিয়ম অনুযায়ী, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চ্যারিটি কমিশনারের অধীনে নিবন্ধিত সম্পত্তি ব্যবহার করা যায় না। এই তহবিলগুলি সমাজসেবার কাজে ব্যবহার করতে হবে। তাই এই সম্পত্তি এবং তহবিলের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’’
উদ্ধব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অন্য এক নেতার দাবি, “একবারে সব কিছুর অধিকার নেওয়ার কোনও মানে নেই। যদি আইনি লড়াইয়ে আদালতের তরফে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় তবে দু’পক্ষের প্রচেষ্টাই বৃথা হবে।’’
সেনা ভবন ছাড়াও শিন্ডেগোষ্ঠী দলের ‘শাখা’ বা দলীয় কার্যালয়গুলির দখল চাইতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। শিবসেনা ভবন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র হলে এই কার্যালয়গুলি দলের সাংগঠনিক কাঠামোর স্নায়ুকেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে এই কার্যালয়গুলি শিবসেনাকে তৃণমূল স্তরে সংগঠিত এবং শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেনা ভবনের মতো শিব সৈনিকদের কাছে শাখা নিয়েও যথেষ্ট আবেগ রয়েছে।
শিন্ডেগোষ্ঠীর একজন নেতা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “শাখার দখল নেওয়ার বিষয়টি একটু জটিল। এটি একক মালিকানার অধীনে নয়। শুধুমাত্র মুম্বইয়ে ২০০-র বেশি শাখা রয়েছে এবং তাদের মালিকানা আলাদা। আমাদের প্রতিটি শাখার বিষয় আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে এবং তার পর কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy