বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে শুক্রবার ইরম শর্মিলা ফোনে বলেন, ‘‘আফস্পা প্রত্যাহার নিয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত। তবে ওই আইন পুরোপুরি প্রত্যাহার না হলে স্বস্তি নেই।
বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়িতে শর্মিলা চানু। নিজস্ব চিত্র।
নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং অসমের একাংশ থেকে ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়েও খুশি হতে পারছেন না মণিপুরের মেয়ে ইরম শর্মিলা চানু। তাঁর দাবি—আফস্পার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।
বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে শুক্রবার ইরম শর্মিলা ফোনে বলেন, ‘‘আফস্পা প্রত্যাহার নিয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত। তবে ওই আইন পুরোপুরি প্রত্যাহার না হলে স্বস্তি নেই। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের কাছে দাবি— কাশ্মীর, অরুণাচল, মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্বের সমগ্র অঞ্চল থেকে আফস্পা তুলে নেওয়া হোক। বহু পুরনো এই উপনিবেশিক আইন প্রত্যাহার সময়ের দাবি। গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকের উপরে সশস্ত্র সেনার ক্ষমতা প্রদর্শনের অধিকার চলতে পারে না।’’ শর্মিলার মতে, ‘‘ওঁরা কেউ সন্ত্রাসবাদী নন। সবাই আমার-আপনার মতোই সাধারণ মানুষ। সেনার অত্যাচার বন্ধ হোক।’’
গত ডিসেম্বরে নাগাল্যান্ডের মন জেলায় সেনার গুলিতে ছয় সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনার পর দেশময় আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি ওঠে। উত্তর-পূর্বের বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানান। কেন্দ্র একটি কমিটি গঠন করে। সে সময়েও চানু নোবেল-শান্তি পুরস্কারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন। এ দিন ফের তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আফস্পা পুরোপুরি প্রত্যাহার করলে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নে তাঁর নাম রাখার আবেদন জানাব।’’
প্রায় দুই দশক ধরে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন করেছেন শর্মিলা, একাধিক বার জেলেও গিয়েছেন। পরে ষোলো বছরের অনশন ত্যাগ করে জীবনে ফেরায় সমালোচিত হন। ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যান। মণিপুরের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে নিজের রাজ্যের মেয়েকে। সে সময়ে শর্মিলা পাশে পাননি নিজের পরিবারকেও। দুঃখে-অভিমানে মণিপুর ছাড়েন শর্মিলা। বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে স্বামী ডেসমন্ড ও দুই যমজ সন্তানের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন।
শর্মিলা বলেন, ‘‘২০০০ সালের ৫ নভেম্বর। মণিপুরে যে দিন প্রথম জনসমক্ষে এসে অনশন ঘোষণা করি, মনে আছে, আমায় ঘিরে প্রায় একশো মানুষের ভিড় ছিল। পরে আমার অনশনে বসা নিয়ে বিদ্রুপ, হাসি-ঠাট্টা-তামাশা হয়েছে। তাই যখন ভোটে হেরে গেলাম, অবাক লাগেনি। জীবনের ষোলো বছর যে অনশনে গিয়েছে, লড়াই করেছি যাঁদের জন্য, সেই মণিপুরের সব মানুষ কখনও আমার পাশে ছিলেন না।’’
তবে দূরে থেকেও নিজের রাজ্যের মানুষের স্বার্থে গলা তুলতে ভোলেননি শর্মিলা। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-শাসিত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী আমায় আমন্ত্রণ জানাবেন, শুনলাম। এখনও ফোন পাইনি। তবে আমন্ত্রণ পেলে নিশ্চয় মণিপুরে যাব, ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আফস্পা-র পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানাব। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। রাজনীতির লোক হয়ে নয়, মণিপুরের মেয়ে হয়ে সেখানে যাব। মণিপুরের সামগ্রিক উন্নয়নের দাবি জানাব।’’
শর্মিলা মনে করেন, শুধু আফস্পা প্রত্যাহারে থেমে থাকলেই চলবে না। তাঁর কথায়, ‘‘মণিপুর পাহাড়-অধ্যুষিত এলাকা। ওই এলাকায় সড়ক ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নিতে হবে। পাহাড়ে ফল-মূল, শস্য যা চাষ হয়, তা খারাপ রাস্তার কারণে রফতানির আগেই পচে নষ্ট হয়ে যায়। মণিপুরের জীবনযাত্রার মান এত নিচু যে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা, কাজের সুযোগ পায় না।’’
শর্মিলার মায়ের দাবি ছিল, আফস্পা প্রত্যাহার হলে তবেই যেন মেয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করে। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শেষ পর্যন্ত যদি মণিপুরে যান শর্মিলা, এত বছর পরে ঘরে ফিরবেন মণিপুরের মেয়ে?
জবাবে শর্মিলা বলেন, ‘‘মা ২০১৮ সালের অক্টোবরে মারা গিয়েছেন। মায়ের সঙ্গে দেখা করা আর সম্ভব নয়। বাকি কারও সঙ্গে দেখা করার নেই। আফস্পা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানাতেই ওই আমন্ত্রণে মণিপুরে যাব, বড়জোর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হব। আবার কাজ মিটলে ফিরে আসব। এখন আমার ঘর এই বেঙ্গালুরুতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy