শরদ পওয়ার। —ফাইল চিত্র।
‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ারের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) -র দফতরে হাজিরা দেওয়া নিয়ে বিস্তর নাটক চলল মুম্বইয়ে। তবে শেষমেশ নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এলেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র নেতা। আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে, এখনই ইডি-র দফতরে যাবেন না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় শুক্রবার দুপুরে ২টোয় দক্ষিণ মুম্বইয়ের ব্যালার্ড এস্টেটে ইডি-র দফতরে যাওয়ার কথা ছিল শরদ পওয়ারের। সেই খবর কানে যেতেই বিক্ষোভের ডাক দেন এনসিপি সমর্থকরা। কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে ইডি-র দফতর পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌঁছবেন বলে জানিয়ে দেন। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই ইডি-র ভিড় জমতে শুরু করে। তাতে ফাঁপরে পড়ে মুম্বই পুলিশ। সটান শরদ পওয়ারের দ্বারস্থ হয় তারা। এত হাজার লোক রাস্তায় নামলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, তাই তাঁকে সিদ্ধান্ত বদলের আর্জি জানান পুলিশ কমিশনার। সেই অনুরোধ মেনে নেন শরদ পওয়ার।
শুক্রবার ইডি-র দফতরে না গিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পওয়ার জানান, মু্ম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার এবং যুগ্ম পুলিশ কমিশনার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। এনসিপি সমর্থকরা বিক্ষোভে নামলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। সব দিক খতিয়ে দেখে তাই ইডি-র দফতরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, যাতে কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।
Sharad Pawar Ji is the latest Opposition leader to be targeted by a vindictive Government. The timing of this action, a month before elections in Maharashtra, reeks of political opportunism. https://t.co/XCW0GsdXjj
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) September 27, 2019
আরও পড়ুন: সময় চাইলেন মুকুল, মির্জা হেফাজতে থাকার সময়ই জেরা করতে চায় সিবিআই
অন্য দিকে, ইডি-র তরফেও একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে তদন্তকারীরা জানান, এখনই শরদ পওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই। বরং সময় মতো তাঁকে ডেকে পাঠানো হবে। এনসিপি প্রধানকেও চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইডি-র কাছ থেকে কোনওরকম চিঠি পাননি বলে দাবি এনসিপি মুখপাত্র নবাব মালিকের। কমিশনার এবং যুগ্ম পুলিশ কমিশনারের আর্জিতে সাড়া দিয়েই দলনেতা মত পাল্টেছেন বলে দাবি এনসিপি নেতা জিতেন্দ্র অওহাদেরও।।
আগামী ২১ অক্টোবর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। ফলাফল ঘোষণা হবে ২৪ অক্টোবর। তা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে কোনও খামতি রাখছে না এনসিপি। তার মধ্যেই চলতি সপ্তাহের শুরুতে শরদ পওয়ার, তাঁর ভাইপো অজিত পওয়ার-সহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের ২৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক নয়ছয়ের ঘটনায় কালো টাকা প্রতিরোধ আইনে মামলা করে তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে রাজ্যের চিনিকলগুলিকে কোটি কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা ঋণ মঞ্জুর করেছিলেন, চিনিকলগুলির মালিকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল তাঁদের। চিনিকলগুলি রুগ্ন হয়ে পড়ায় পরে সেগুলি অনেক কম দামে বেচে দেওয়া হয়। তার জন্য কোনও টেন্ডারও ডাকা হয়নি। ওই ক্রেতাদের সঙ্গে আবার ওই সমবায় ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরদের পারিবারিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, এমনটাও তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিবিআই কর্তার বিরুদ্ধে ভুয়ো সঙ্ঘর্ষের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি অধস্তনের
শুরু থেকেই যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন শরদ পওয়ার। ইডি-র তরফে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানো না হলেও, নির্বাচনী কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে, শুক্রবার নিজেই তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়ে দেন পওয়র। তাঁর কথায়, ‘‘ইডির মামলা করার সময়টা তাৎপর্যপূর্ণ। ভোট এসে গিয়েছে। ঠিক তার আগেই মামলা করা হল। তবে সংবিধানে বিশ্বাস রয়েছে। তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব। আমার কাছে যা তথ্য রয়েছে, জানিয়ে আসব।’’ সেই মতো শুক্রবার তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে ঠিক করেন। তবে শেষমেশ সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হল তাঁকে।
গোটা ঘটনায় ইতিমধ্যেই শরদ পওয়ারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধী নেতাদের একাংশ, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। মোদী সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এ দিন সকালে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে রাহুল লেখেন, ‘‘প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার এত দিন ধরে যে যে বিরোধী নেতাকে নিশানা করেছে, শরদ পওয়রজি তাতে নয়া সংযোজন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই মহারাষ্ট্র নির্বাচনের এক মাস আগে এই সুযোগ নেওয়া হল।’’
শরদ পওয়ার নিজে যেখানে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে চাইছেন, সে ক্ষেত্রে ইডি-র তরফে আপত্তি করা হচ্ছে কেন, এই প্রশ্নও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে বিরোধী মহলে। ইডি সূত্রে খবর, তদন্ত কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তা ঠিক করে রেখেছেন তদন্তকারীরা। প্রথমে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। রাজ্যের কোন কোন রাজনীতিকের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল খতিয়ে দেখা হবে তা-ও। একেবারে শেষ পর্যায়ে ডেকে পাঠানো হবে শরদ পওয়ারকে। বাকি অভিযুক্তদের বয়ানের প্রেক্ষিতে তাঁকে জেরা করা হবে। যদিও তদন্তকারী সংস্থারই একটি সূত্রের দাবি, ব্যাঙ্কের কোনও দায়িত্বে ছিলেন না শরদ পওয়ার। এফআইআরেও অভিযুক্ত হিসাবে নাম উল্লেখ নেই তাঁর। তাঁর সুপারিশে কাউকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল কি না, শুধু সেটাই দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy